মুনাফা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সব বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২২ ১৯:৫১; আপডেট: ১৭ মে ২০২৪ ১৪:৪৮

ছবি: সংগৃহিত

মুনাফা অর্জন করেছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলো। ২০২০-২১ অর্থবছরে ভালো আর্থিক পারফরম্যান্স করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ সময়ে বড় অংকের মুনাফা হয়েছে সব কোম্পানিরই।মুনাফা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সব বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি এর মধ্যে মুনাফার দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল)। তবে ডলারের বিনিময় হারের উল্লম্ফন কোম্পানিগুলোর মুনাফার ওপর প্রভাব ফেলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর বণিক বার্তার।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সাবসিডিয়ারি হিসেবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি (এপিএসসিএল), ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি (ইজিসিবি) ও নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন।

২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৩০ কোটি টাকা কর-পূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে এপিএসসিএলের। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৪২২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২৪৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সদ্যসমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) আশুগঞ্জ পাওয়ার ২৪২ কোটি ৯০ লাখ টাকা কর-পূর্ববর্তী মুনাফা করেছে। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১৯৩ কোটি ২৭ লাখ টাকায়।

বিপিডিবির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, এপিএসসিএলের ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপিত সক্ষমতা ১ হাজার ৪৪৪ মেগাওয়াট। আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রগুলোর বর্তমান উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ২৯৬ দশমিক ৯১ মেগাওয়াট। এপিএসসিএলের মোট শেয়ারের ৯১ দশমিক ২৩ শতাংশ বিপিডিবি ও ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে রয়েছে। এছাড়া অর্থ বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কাছে রয়েছে বাকি শেয়ার।

জানতে চাইলে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএমএম সাজ্জাদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে কোম্পানির ভালো মুনাফা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্তও আর্থিক পারফরম্যান্স ভালো ছিল। তবে এরপর ডলারের বিনিময় হারের কারণে মুনাফার ওপর প্রভাব পড়তে শুরু করে। আগামী সেপ্টেম্বরে ৪০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে। ফলে চলতি অর্থবছরে কোম্পানির আয়ে নতুন এ বিদ্যুৎকেন্দ্র অবদান রাখবে।

ইজিসিবি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা কর-পূর্ববর্তী মুনাফা করেছে। আগের অর্থবছর কোম্পানিটির এ মুনাফার পরিমাণ ছিল ২৬৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। একই অর্থবছরে ইজিসিবির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৭৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। কোম্পানিটির ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ারই রয়েছে বিপিডিবির কাছে। ইজিসিবির তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপিত সক্ষমতা ৯৫৭ মেগাওয়াট। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য বলছে, বর্তমানে এসব কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৯৫৪ মেগাওয়াট। ফেনীর সোনাগাজীতে ৫০ মেগাওয়াট সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কোম্পানিটি। আগামী বছর এ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার কথা।

২০২০-২১ অর্থবছরে এনডব্লিউপিজিসিএলের কর-পূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ১৮০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির এ মুনাফার পরিমাণ ছিল ৬৬৬ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটি কর-পরবর্তী নিট মুনাফা করেছে ৯৩১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এনডব্লিউপিজিসিএল বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে ২০১২ সালের নভেম্বরে। তাদের নিজস্ব মালিকানাধীন সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ১ হাজার ৪০১ মেগাওয়াট। যৌথ উদ্যোগের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র মিলিয়ে কোম্পানিটির মোট উৎপাদন সক্ষমতা ৩ হাজার ৬৩ মেগাওয়াট। এছাড়া বাস্তবায়নাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ৩ হাজার ৫৮২ মেগাওয়াট। এনডব্লিউপিজিসিএলের ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বিপিডিবির কাছে।

এনডব্লিউপিজিসিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘তেলভিত্তিক দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তুলনামূলক বেশি মুনাফা আসছে। এনডব্লিউপিজিসিএলের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে পাঁচটি। যৌথ উদ্যোগের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি গ্যাসভিত্তিক, আরেকটি কয়লাভিত্তিক। দক্ষতার সঙ্গে কেন্দ্র পরিচালনার কারণে আমরা জ্বালানি সাশ্রয় করতে পেরেছি। এতে মুনাফাও বেড়েছে। তবে ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানির মুনাফা কম হবে।’

দেশের সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর একক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান বিপিডিবি। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে বিপিডিবির নিজস্ব মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর স্থাপিত সক্ষমতা ছিল ৬ হাজার ১৩ মেগাওয়াট। সংস্থাটি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নির্ধারিত মূল্যে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে এ বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয় কম মূল্যে। শুধু বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ সংস্থাটির ইউনিটপ্রতি লোকসান হয় ৩-৪ টাকা। সব মিলিয়ে বছর শেষে মোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮-১০ হাজার কোটি টাকায়। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে বিপিডিবির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। এ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির ২৬৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা কর-পূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে, যেখানে আগের অর্থবছরে লোকসান হয়েছিল ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির ১২৯ কোটি ২৭ লাখ টাকার কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে সক্ষমতার চার্জ হিসেবে বিপুল অর্থ পরিশোধের কারণে বিপিডিবিকে আর্থিকভাবে বড় ধরনের চাপের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। ঘাটতি মেটাতে প্রতি বছর সরকারের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে অর্থসহায়তা নিতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। ফলে বড় অংকের দায়দেনা নিয়ে দিন দিন প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অবস্থা আরো নাজুক হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ দেনাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কেউ চুক্তি করতে আগ্রহী হচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেল ও এলএনজির দামে বড় উল্লম্ফনের কারণে বিপিডিবির আর্থিক চাপ আরো বাড়ছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের বোঝা বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।

বিপিডিবির সদস্য (অর্থ) সেখ আকতার হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের হিসাব এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কাজ চলছে, দ্রুতই এটি চূড়ান্ত করা হবে। তবে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে আমি খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছি না। ২০২০-২১-এ মুনাফা করতে সক্ষম হলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে হয়তো লোকসান গুনতে হতে পারে। জ্বালানি তেল ও এলএনজির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপিডিবির আর্থিক পারফরম্যান্সে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

মূল খবরের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top