পাট রপ্তানিতে আরও ৫ বছরের জন্য অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কারোপ চায় ভারত

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২২ ১৬:৩২; আপডেট: ১৭ মে ২০২৪ ২২:৩৩

ছবি: সংগৃহিত

দেশের অন্যতম রপ্তানিযোগ্য পণ্য পাটের ওপর আরও পাঁচ বছরের জন্য অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করতে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে দেশটির ডিরেক্টরেট জেনারেল অভ ট্রেড রেমিডিস (ডিজিটিআর) নামক অধিদপ্তর। খবর টিবিএসের।

নতুন মেয়াদেও আগের হারেই শুল্কারোপের সুপারিশটি গেজেট প্রজ্ঞাপন হিসেবে গত ১০ অক্টোবর ডিজিটিআর- এর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে পাটপণ্যের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

ডিজিটিআর বাংলাদেশ ও নেপালের পাটপণ্যের উপর আগের হারে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কারোপ করে গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য তা বহাল রাখতে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে।

তবে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রজ্ঞাপন দেয়নি।

বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে পাঁচ বছর মেয়াদে প্রতিটনে ১৯ ডলার থেকে ২৫২ ডলার পর্যন্ত অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কারোপ করে ভারত, যার মেয়াদ গত ১ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। পরে এর মেয়াদ বাড়াতে একটি পুনঃমূল্যায়ন শুরু করে দেশটি।

নতুন করে আরও পাঁচ বছরের জন্য অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কারোপের ভারতীয় উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে এবং এ বিষয়ে পর্যালোচনা চলছে।

'এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পাটপণ্যের রপ্তানিকারকদের সঙ্গেও আলোচনা চলছে'- যোগ করেন তিনি।

এর আগে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ভারতের অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের পাটপণ্যের ওপর থেকে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন।

সেসময় টিপু মুনশি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছিলেন যে, তিনি এবং মন্ত্রিসভায় তার সহকর্মী ভারতকে একটি নিশ্চয়তার ভিত্তিতে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন।

এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরকালে বাংলাদেশের পাটপণ্যের উপর আরোপিত অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে পারে দেশটি।

কিন্তু, দুই দেশের যৌথ ঘোষণায় এবিষয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।

এনিয়ে নিরাশ হলেও, পুরোপুরি আশা ছাড়েননি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

ডিজিটিআর- এর সুপারিশের পর বুধবার (১২ অক্টোবর) বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের সাথে একটি ভার্চুয়াল সভা করেছে মন্ত্রণালয়। সভায় ভারতের এ উদ্যোগ নিয়ে রপ্তানিকারকরা তাদের উদ্বেগ তুলে ধরেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে একজন রপ্তানিকারক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এবিষয়ে চিঠি দেব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেও অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হবে। তারপর অর্থ মন্ত্রণালয় ডিজিটিআর- এর সুপারিশ অনুসারে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কারোপ না করতে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করবে'।

ভারত সরকার এই শুল্কারোপের পর থেকেই বাংলাদেশের পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি মন্দ দশায় পড়ে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের সার্বিক রপ্তানি ৩৪ শতাংশ বাড়লেও, পাটে হয়েছে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি।

২০২১-২২ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় পাটের আঁশ, দড়ি, বস্তা ও ব্যাগ রপ্তানিতে ১৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

এর আগে এক চিঠিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার ভারতীয় সমকক্ষকে এই শুল্ক তুলে নেওয়া হলে বাংলাদেশ থেকে পাট রপ্তানি ব্যাপকহারে বাড়বে না বলেও আশ্বস্ত করেন।

চিঠিতে তিনি জানান, 'ভূমি সংকটের কারণে বাংলাদেশে পাট চাষের জমি খুবই সীমিত, এবং তার ফলে গত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের কাঁচা পাট উৎপাদনের পরিমাণ একই পর্যায়ে রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতেও এটি বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা নেই'।

'আপনি হয়তো অবগত আছেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত দুর্যোগসহ চলমান বিভিন্ন সংকটের কারণে আমাদের পাটশিল্প এর বিপুল সংখ্যক দরিদ্র কর্মীর মজুরি পরিশোধে প্রতিকূলতার মধ্যে রয়েছে। তাই মূলত এই খাতকে স্থিতিশীল রাখতে সরকার সীমিত সহায়তা দিয়ে থাকে, যার মূল্য লক্ষ্যই হলো লাখ লাখ পাটকল কর্মী ও চাষির জীবিকা রক্ষা করা'- যোগ করেছেন তিনি।

সরকারের এই নগদ সহায়তা যদি ভারতের উদ্বেগের কারণ হয়– তাহলে সেটি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)'র মাধ্যমে সমাধান করতে ভারতীয় অর্থমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ করেন মুস্তফা কামাল।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top