পুরোনো গাড়ি কমাতে আসছে ‘গ্রিন ট্যাক্স’

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৪ নভেম্বর ২০২২ ১৮:১২; আপডেট: ১৬ জুন ২০২৪ ১১:৩৯

ফাইল ছবি

পরিবেশ রক্ষা ও পুরোনো গাড়ির দৌরাত্ম্য কমাতে গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে ‘গ্রিন ট্যাক্স’ বা ‘সুবজ কর’ আরোপের চিন্তা করা হচ্ছে। গাড়ি যত পুরাতন হবে তত বেশি কর দিতে হবে। পুরোনো যানবাহনের ব্যবহার কমাতে রেজিস্ট্রেশন নবায়নের সময় রোড ট্যাক্স বা সড়ক করের সঙ্গে এ কর আদায় করা হবে। খবর যুগান্তরের।

প্রাথমিকভাবে জ্বালানি তেলে চালিত প্রাইভেট কার, জিপ, ট্যাক্সিক্যাব ও মোটরসাইকেল থেকে এ কর আদায় করা হবে। পর্যায়ক্রমে অটো টেম্পো, হিউম্যান হলারের (নসিমন) মতো পরিবহণও সবুজ করের আওতায় আনা হবে। অবশ্য যাত্রীবাহী বাস এবং কৃষিকাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, কম্বাইন্ড হারভেস্টের মতো যানবাহন এ করের আওতার বাইরে থাকবে।

ইতোমধ্যে পুরোনো যানবাহন ব্যবহারের ওপর ‘সুবজ কর’ আরোপের খসড়া তৈরি করেছে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়। খসড়ার ওপর মতামত দিতে বিআরটিএ, বিআরটিসি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং বুয়েট ও ডুয়েটে (ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) চিঠি পাঠানো হয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে খসড়ার ওপর মতামত দিতে বলা হয়েছে।

গ্রিন ট্যাক্সের খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে-একই দূরত্বে যেতে নতুন যানবাহনের তুলনায় পুরোনো যানবাহনে বেশি জ্বালানি খরচ হয়। বাংলাদেশ আমদানির মাধ্যমে জ্বালানি ব্যয় মেটানোয় কম মাইলেজের পুরোনো যানবাহনের ব্যবহার কমানো প্রয়োজন। এ ধরনের যানবাহনের গাড়ির মালিকদের ওপর অতিরিক্ত দূষণ সৃষ্টির অর্থনৈতিক খরচ আরোপের উদ্দেশ্যে গ্রিন ট্যাক্স আরোপ করা যেতে পারে।

এর মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমানো যাবে এবং দূষণকারী যানবাহন চিহ্নিতের মাধ্যমে সমাজের মঙ্গল ও কল্যাণ করা সম্ভব। এ করের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ পুরোনো গাড়ি স্ক্র্যাপ করতে এবং বায়ুদূষণ মোকাবিলায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাশাপাশি পুরোনো গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, যা সড়কে শৃঙ্খলা আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

খসড়ায় গাড়ির বয়সভেদে স্ল্যাবভিত্তিক গ্রিন আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। গাড়ি তৈরির বছর (মডেল ইয়ার) থেকে ১০-১৫ বছরের পুরোনো গাড়ির জন্য ৫ শতাংশ, ১৫-২০ বছরের পুরোনো গাড়ির জন্য ১০ শতাংশ এবং ২০ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ির জন্য ১৫ শতাংশ কর আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি দূষিত শহর যেমন : ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে নিবন্ধিত গাড়ির জন্য অতিরিক্ত আরও ৫ শতাংশ কর আরোপ করার চিন্তা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ডিজেলচালিত গাড়ি পেট্রোল-অকটেনের চাইতে বেশি পরিবেশ দূষণ করায় ডিজেলচালিত গাড়ির জন্য অতিরিক্ত ৫ শতাংশ সবুজ কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

পুরোনো যানবাহন ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রিন ট্যাক্স আরোপ করা হয়। ভারতও ৮ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ির ওপর ২০২১ সালে গ্রিন ট্যাক্স আরোপ করে। রোড ট্যাক্সের ওপর ১০-২৫ শতাংশ হারে গ্রিন ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে।

আবার যেসব রাজ্যে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বেশি, সেখানে রোড ট্যাক্সের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত গ্রিন ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নবায়নের সময় এ কর আদায় করা হয়। জাপান, সিঙ্গাপুর, ভুটান ও শ্রীলংকায়ও বায়ুদূষণ রোধে এ ধরনের কর আরোপ করা হয়। ইউরোপের অনেক দেশ এখন এ পথে হাঁটছে।

বিআরটিএ-এর তথ্যমতে, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিআরটিএতে ৫২ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৬টি যানবাহন নিবন্ধিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি নিবন্ধিত রয়েছে মোটরসাইকেল-৩৬ লাখ ৭৮ হাজার ৫৬১টি। এরপরের অবস্থানে আছে পর্যায়ক্রমে ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি, পিকআপ, ট্রাক ও মাইক্রোবাস।

নতুন রেজিস্ট্রেশনের ভিত্তিতে ২০০১ সালের কার, জিপ ও মাইক্রোবাস আছে ৯ হাজার ২৭২টি, ২০০২ সালে ৯ হাজার ৯৬৩টি, ২০০৩ সালে ৯ হাজার ৬৬৭টি, ২০০৪ সালে ৭ হাজার ৮৬৩টি এবং ২০০৫ সালের ৯ হাজার ৮০৩টি। রেজিস্ট্রেশনের দিক থেকে পুরোনো যানবাহনের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নিউজের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top