কেনার পর মান যাচাইয়ে বিদেশ যাচ্ছে দুই প্রকৌশলী

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০২২ ২০:২২; আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ২১:১০

দুই প্রকৌশলী।

সুইজারল্যান্ড থেকে সাতটি লিফট কেনার তা যাচাইয়ে বিদেশ যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দুই প্রকৌশলী। যাথে যাচ্ছে তাদের স্ত্রীরাও। খবর যুগান্তরের।

দেশটি থেকে সাতটি লিফট কিনেছে (ডিএসসিসি)। ইতোমধ্যে লিফটের মালামাল ঢাকায় নগর ভবনে এসে পৌঁছেছে। চট্টগ্রামে জাহাজ থেকে লিফটের মালামাল নামানোর পর মান যাচাই করে সেসব বুঝে নিয়েছেন ডিএসসিসি’র প্রকৌশলীরা।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, ওই লিফটের মালামালের মান যাচাই বা প্রাক-জাহাজীকরণ পরিদর্শন (পিএসআই) করতে এখন স্ত্রীসহ সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন ডিএসসিসি’র দুই শীর্ষ প্রকৌশলী। তারা হলেন-প্রেষণে নিয়োজিত ডিএসসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাফর আহমেদ।

চট্টগ্রামেও তারা দুজন লিফটের মালামাল নামানোর পর যাচাই-বাছাই কাজের নেতৃত্ব দেন। ডিএসসিসির বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন এবং প্রধান প্রকৌশলীর চাকরি শেষ হচ্ছে এপ্রিলে।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তাদের এ সফরটি লিফটের মালামাল জাহাজে উঠানোর আগে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। ডিএসসিসি’র দুই শীর্ষ প্রকৌশলী তাদের ভিসা শিগগিরই হাতে পেয়ে যাবেন বলে জানা গেছে। কিন্তু, এখনো তাদের স্ত্রীদের ভিসা না হওয়ায় পিএসআই’র নামে সুইজারল্যান্ডে আনন্দভ্রমণ প্রক্রিয়া একটু বিলম্ব হচ্ছে। সরকারি প্রজ্ঞাপনে তাদের স্ত্রীদের বিদেশ সফরে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই। এরপরও লিফট সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড’ তাদের আনন্দভ্রমণের অর্থের জোগান দেবে।

২২ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সুইজারল্যান্ডের ঢাকা দূতাবাসকে লেখা পৃথক দুটিপত্রে দেখা গেছে, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ দিন বা যাওয়ার সময় থেকে ৫ দিনের ভিসা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ১৪ নভেম্বর থেকে ৫ দিন বা চলতি মাসের মধ্যেই তাদের এই ভ্রমণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে ডিএসসিসি’র সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, মহানগরীর বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সাতটি লিফট ক্রয়ে দরপত্র আহ্বান করে ডিএসসিসি। ওই দরপত্রে অংশ নেয় বিশ্বখ্যাত সুইজারল্যান্ডের সিন্ডলার এলিভেটেড লিমিটেডের বাংলাদেশের এজেন্ট মেসার্স ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। ডিএসসিসি নগর ভবনের সাতটি লিফট পরিবর্তন করে নতুন লিফটগুলো সেসব জায়গায় স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রের শর্ত মোতাবেক মালামাল ডিএসসিসিকে বুঝিয়ে দিয়েছে। এসব লিফট ক্রয়ে ডিএসসিসি’র খরচ হচ্ছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা।

ডিএসসিসি সূত্রে আরও জানা যায়, ডিএসসিসি’র বর্তমান মেয়র টেকসই উন্নয়ন কাজ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করছেন। সেই কারণে বিশ্বমানের লিফট ক্রয়ের নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই লিফট দেশে এসে পৌঁছেছে। এই প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রচেষ্টাও চালিয়েছেন। কিন্তু, প্রাক-জাহাজীকরণ পরিদর্শন বা পিএসআই’র জন্য যখন বিদেশ যাওয়ার কথা, তখন না গিয়ে মালামাল আসার পরে তড়িঘড়ি করে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়ে ডিএসসিসি’তে নানা সমালোচনা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী যুগান্তরকে বলেন, প্রাক-জাহাজীকরণ পরিদর্শন (পিএসআই) হয়ে থাকে মালামাল জাহাজে উঠানোর আগে। বিদেশ থেকে মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে পিএসআই’র জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থার ওই বিষয়ে কারিগরি ব্যক্তিরা ওইসব মালামাল দেখতে সেখানে যান।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মালামাল দেশে চলে আসলে ওই সূত্রে আর বিদেশ যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোনো সরকারি সংস্থার ক্ষেত্রে এটা হওয়ার কথা নয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন অনুবিভাগের আওতায় এ ধরনের কোনো ইস্যু থাকলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ যুগান্তরকে বলেন, লিফটের সব মালামাল নগর ভবনে চলে এসেছে। এরপরও সুইজারল্যান্ডে যাওয়ার কারণ হচ্ছে, সেখানে কারিগরি কিছু সেশন রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করা।

স্ত্রীসহ যাওয়ার বিষয়ে বলেন, এটা একটি ছোট্ট বিষয়। এটা নিয়েও প্রতিবেদন হলে বলার কিছু থাকে না। সরকারি আদেশে স্ত্রীদের নেওয়ার বিষয়ে কিছু বলা নেই, আপনি সঠিক বলেছেন। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আমরা বলেছি প্রয়োজনে আমরা নিজেরা খরচ বহন করব। এরপরও বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়। যদি না হয়, না হবে; ওই বিষয়ে এখন আমরা বেশি আগ্রহী নই।

মতামত জানতে ডিএসসিসি’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাফর আহমেদকে তার ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার ফোন করে কোনো সাড়া মিলেনি। খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠালেও কোনো সাড়া মেলেনি।

জানতে চাইলে ডিএসসিসি’র সচিব এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আকরামুজ্জামান ডিএসসিসি’র মুখপাত্র মো. আবু নাছেরের মাধ্যমে যুগান্তরকে জানান, বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানি করার ক্ষেত্রে পিএসআই করার বিধান রয়েছে। সেজন্য অর্থ বরাদ্দও রাখা হয়। ডিএসসিসি’র লিফটের মালামাল পিএসআই করার পূর্বে চলে এসেছে। এক্ষেত্রে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

একই বিষয়ে ডিএসসিসি’র মুখপাত্র মো. আবু নাছের ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের বরাত দিয়ে যুগান্তরকে জানান, লিফট ক্রয়ের ক্ষেত্রে পিএসআই খাতে অর্থ বরাদ্দ ছিল। যেহেতু পিএসআই করার আগে মালামাল দেশে চলে এসেছে। এক্ষেত্রে পিএসআই সূত্রে যাদের বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল, সেটা বাতিল করা হবে। আর চূড়ান্ত বিল পরিশোধের আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে খরচ সমন্বয় করে বিল পরিশোধ করা হবে।

নিউজের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top