সংবিধানের বাইরে কিছু নয়

যুক্তরাষ্ট্র কারও পক্ষে নয়

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারী ২০২৩ ০৮:০২; আপডেট: ১৭ জানুয়ারী ২০২৩ ০৮:০৪

গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ ব্রিফিং

বাংলাদেশে কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে নয় যুক্তরাষ্ট্র। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিকাশে সচেষ্ট ওয়াশিংটন। বিষয়টি খোলাসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

রোববার ঢাকায় বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে এ বিষয়টিই বারবার ব্যাখ্যা করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রভাবশালী এ কর্মকর্তা। খবর যুগান্তরের। 

আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা-তাও জানতে চেয়েছেন তিনি। অপরদিকে, বাংলাদেশের যেসব বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনে ভুল বোঝাবুঝির দেখা দিয়েছিল; ঢাকার তরফে সেগুলোরও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন মার্কিন এই কর্মকর্তাকে বলেছেন-বাংলাদেশে গণতন্ত্র, নির্বাচন, মানবাধিকার প্রভৃতি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পরামর্শ থাকলে তা সাদরে গ্রহণ করা হবে। তবে আগামী নির্বাচন হবে সংবিধানের আলোকে।

সংবিধানের বাইরে কোনো কিছু করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ঢাকার অনুরোধে লু কোনো সময়সীমা উল্লেখ না করে বিষয়টি প্রক্রিয়াগতভাবে বিবেচনার আশ্বাস দেন।

ডোনাল্ড লু শনিবার সন্ধ্যায় দুদিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ইস্কাটনের পররাষ্ট্র ভবনে গিয়ে ড. একে আব্দুল মোমেনের (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) সঙ্গে নৈশভোজে মিলিত হন। নৈশভোজে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও যোগ দেন।

লু রোববার ব্যস্ত দিন কাটান। এদিন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে প্রাতঃরাশের মাধ্যমে তার দিনের সূচনা হয়। দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে লু’র সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়। সেখানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির চেয়ারম্যান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ। এছাড়া, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হয়। রাতে গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসভবনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হয়।

সূত্রমতে, বাংলাদেশ সরকার ও বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে যাতে কোনো বিষয়ে দূরত্ব না থাকে সে বিষয়ে উভয়পক্ষ খোলামেলা আলোচনা করেছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচন, এমনকি র‌্যাবের সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের ব্যাখ্যা বাংলাদেশ সরকারের তরফে তুলে ধরা হয়েছে। অপরদিকে, ডোনাল্ড লু তার সরকারের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষাবলম্বন করে না। বরং সরকার পক্ষ কিংবা বিরোধী দল যারাই গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা অবাধ নির্বাচনের প্রশ্নে ব্যত্যয় ঘটাবে; তাদেরই ওই ব্যত্যয়ের বিষয়টা নজরে আনবে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষে যাবে না এটা বারবারই স্পষ্ট করেছেন লু। ঢাকার তরফে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সুপারিশ গ্রহণে বাংলাদেশ সরকার খুবই আন্তরিক। তবে নির্বাচন হবে সংবিধানের আওতার মধ্যে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু কিনা তা যাচাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছা করলে পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারে। তবে সংবিধানের বাইরে যাওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডোনাল্ড লু’র ব্রিফিং : রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ ব্রিফিং করেন ডোনাল্ড লু ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। সেখানে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফিংয়ের শুরুতেই ডোনাল্ড লু বাংলায় বলেন, মনোমুগ্ধকর নদী বা সৈকত এবং অতিথিপরায়ণ মানুষের দেশ বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। আমি এখানে এসেছি, আমাদের দুদেশের বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করতে, যখন বর্তমান বিশ্ব শান্তি এবং নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ইংরেজি ভাষায় তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে আমরা যখনই কোনো সমস্যা দেখব, তখন আমরা এ বিষয়ে পরামর্শ দেব-এ প্রতিশ্রুতি যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে। আমরা বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়াব। আর এ বিষয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করব। বৈঠকে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা-জানতে চাইলে তিনি বলেন, র‌্যাব নিয়ে আমাদের বেশ ভালো আলোচনা হয়েছে। আপনারা যদি চলতি সপ্তাহে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতি দেখেন, সেখানে দেখবেন যে বলা হয়েছে, র‌্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে; যা বেশ অসাধারণ অগ্রগতি, আমরা বিষয়টিকে আমলে নিয়েছি। এটি আসলেই অসাধারণ কাজ। এর মাধ্যমে এটিই প্রমাণ হয় যে র‌্যাব মানবাধিকারকে সম্মান করে জঙ্গিবাদ দমন এবং আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে কাজ করতে পারে।

বৈঠকে মার্কিন পক্ষ থেকে কোনো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ডোনাল্ড লু বলেন, বৈঠকে আমরা শ্রম অধিকার বিষয়ে আলোচনা করেছি; যা বাংলাদেশের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই সঙ্গে এটি আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সকালে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছি শ্রম অধিকারের বিষয়ে সুরাহার জন্য। বাংলাদেশে শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা বাড়াতে পারে। শ্রম অধিকার নিয়ে অগ্রগতি বিষয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী।

ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলে (আইপিএস) বাংলাদেশের যোগদান নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আইপিএস নিয়ে আমাদের বেশ ভালো আলোচনা হয়েছে। এটি একটি কৌশল কোনো ক্লাব নয় যে যোগদানের বিষয় আসছে। যুক্তরাষ্ট্র আইপিএস-এ আরও সম্পদ ও মনোযোগ দিতে চায়, সেই সঙ্গে বাংলাদেশেও।

বাংলাদেশি পণ্যে জিএসপি সুবিধা ফেরতের প্রশ্নে তিনি বলেন, জিএসপি সুবিধা বিশ্বের অনেক দেশকেই দেওয়া হয়। বিশ্বের দেশগুলোকে জিএসপি সুবিধা দেওয়ার জন্য আমরা এখনো মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছি। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। যখনই জিএসপি দেওয়ার অনুমোদন আসবে, বাংলাদেশ সেই তালিকায় সর্বপ্রথম এ সুবিধা পাবে।

পরে ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আমাদের আলোচনা খুব গঠনমূলক। কিভাবে আমাদের সম্পর্কটাকে আরও অর্থবহ করতে পারি, আরও ভালো করতে পারি, সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা খুশি যে, আমরা মোটামুটি ঐকমত্যে আছি। ভবিষ্যতে আরও ভালো দিনের প্রতীক্ষায় আছি। তিনি বলেন, আমাদের যে সম্পৃক্ততা এটা খুব কাজের। এর ফলে আমাদের মধ্যে যদি কোনো ধরনের প্রশ্ন থাকে, সেগুলো আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করব। আমরা কোনো ভালো পরামর্শ পেলে অবশ্যই গ্রহণ করব। আমরা তার নমুনাও দেখিয়েছি। আমাদের কোথাও যদি কোনো দুর্বলতা থাকে, নিশ্চিতভাবে আমরা সেগুলো আমলে নেব এবং সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করব। কারণ, আমরা চাই দেশের মঙ্গল, মানুষের মঙ্গল এবং আমরা চাই আমাদের দেশবাসীর অবস্থান যেন আরও উন্নত হয়। সুতরাং কেউ যদি আমাকে ভালো পরামর্শ দেয়, অবশ্যই আমরা সেটা গ্রহণ করব।

ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন-আমরাও অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। আওয়ামী লীগ সবসময় গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকারে এসেছে। ব্যালটের মাধ্যমে সরকারে এসেছে, কখনো বুলেটের মাধ্যমে আসেনি, আমরা এটা বিশ্বাস করি।

ব্রিফিংয়ের শুরুতে দুদেশের সম্পর্ককে বহুপাক্ষিক জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যেখানে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শ্রম অধিকার, নিষেধাজ্ঞা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, উন্নয়ন এবং ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গত বছরের মতো এবারও আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে এবং সুনির্দিষ্ট সময় ও লক্ষ্য ঠিক করে এ বিষয়গুলোতে আলোচনা চালিয়ে যাবে। আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে চাই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক : ব্রিফিংয়ের পর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন ডোনাল্ড লু। ওই বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ডোনাল্ড লু আমাকে জানিয়েছেন যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার একটি জটিল প্রক্রিয়া তাদের দেশে। এটি একটু সময় নিতে পারে। তোমরা যে প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছ, আমার মনে হয় ভবিষ্যতে এটি দূর হয়ে যাবে। মন্ত্রী বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সময়সীমা নেই এবং বাংলাদেশ ঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তা। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে কাজ করছে সেটিতে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট। তারা বলেছে, অনেক অগ্রগতি হয়েছে এবং এই অগ্রগতি যেন সব সময় থাকে। আসাদুজ্জামান খান বলেন, র‌্যাবের সংস্কার নিয়ে কোনো কথা হয়নি। বরং তারা এখন বলছে তোমরা এখন যে কাজগুলো করছ তা সন্তোষজনক।

বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দুপক্ষের আলোচনা হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ডোনাল্ড লু বলেছেন, সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে। আমরা বলেছি সেটি আমরা মানি। সেজন্য তারা (বিএনপি) শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছে, তারা অবস্থান নিচ্ছে এবং এটিতে আমাদের কোনো বাধা নেই। তারা যদি জনগণের সম্পত্তি নষ্ট করে, গুলি ছোড়ে বা রাস্তাঘাট বন্ধ করে, তখন আমরা তাদের বাধা দেব। অন্যথায় তারা সবকিছু করতে পারবে। রাজনৈতিক দল তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে। ১০ ডিসেম্বরও করেছে এবং কিছু দিন আগেও করেছে।

বৈঠকে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে ডোনাল্ড লু’র বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহায়তা, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, শ্রম, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক সহায়তা, তাদের প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসনের বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসে। লু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এছাড়া বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কার্যক্রমে ইতিবাচক পরিবর্তনকে সাধুবাদ জানান। উভয়পক্ষ দুদেশের বর্তমান সুসম্পর্কের বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এবং এ ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণে নতুন পন্থা অন্বেষণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনের জন্য ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ১০ কোটিরও বেশি কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়ায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানানো হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো অতিমারির ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহ প্রকাশ করে। উভয়পক্ষ পারস্পরিক অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারিত্ব বজায় রেখে অন্যান্য খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হয়।

বাংলাদেশে ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের সব ইতিবাচক প্রচেষ্টায় মার্কিন প্রশাসনের অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।

এছাড়া আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানের সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেন ডোনাল্ড লু।

বৈঠকগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং স্টাফ অফিসার উইলিয়াম শিবার উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে সচিব (মেরিটাইম বিষয়ক) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মাদ ইমরান, সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমেদ চৌধুরী, মহাপরিচালক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গুলশানে নৈশ ভোজ : এদিকে রাতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আমন্ত্রণে নৈশভোজে অংশ নেন ডোনাল্ড লু। মার্কিন এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মানে গুলশানে নিজের বাসভবনে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ওই নৈশভোজ ছিল। রাত ৭টার দিকে হোটেল ওয়েস্টিন থেকে লু ওই বাসভবনে যান। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক তাসনিম আরেফা সিদ্দিক, নারী নেত্রী শিরিন হক প্রমুখ।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top