পুলিশের তথ্য

দেশে ধর্ষণের মামলা বেড়েছে

রাজটাইমস ডেক্স | প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০২০ ১৩:২৮; আপডেট: ৩ মে ২০২৪ ১২:৫৩

প্রতিকি ছবি

করোনাকালে দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের দেওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সারা দেশে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৮০টি, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬১টি বেশি।

অবশ্য আলোচ্য সময়ে ঢাকায় ধর্ষণের মামলা কম। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, তাদের আওতাধীন ৫০টি থানায় ছয় মাসে (মার্চ-আগস্ট) ২২৭টি ধর্ষণের মামলা হয়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৬টি কম। ফলে দেখা যাচ্ছে, ধর্ষণের ঘটনায় মামলা বেড়েছে মূলত ঢাকার বাইরে। তবে আরেকটি দিক হলো, সাধারণ ছুটি শেষে ঢাকায় ধর্ষণের মামলা বেড়ে গেছে।

পুলিশ বলছে, করোনাকালে ধর্ষণের ঘটনা কেন বাড়ল, তার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বলা কঠিন। তবে একটি ব্যাখ্যা দেন সমাজবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন। তিনি মনে করেন, করোনাকালে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। একটি হলো, অন্য কাজ কম থাকায় প্রযুক্তির ব্যবহার করে মুঠোফোনে কুরুচিপূর্ণ ভিডিও চিত্র দেখার প্রবণতা বেড়েছে। এতে ধর্ষণের মতো অপরাধ চিন্তা মাথাচাড়া দিয়েছে। দ্বিতীয় কারণ, করোনাকালে সবার নজর স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির দিকে ছিল। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের অপরাধের দিকে দৃষ্টি কম পড়েছে। তিনি বলেন, এর সঙ্গে বিচারহীনতা, ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে যাওয়াসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো তো রয়েছেই।


এদিকে ধর্ষণ নিয়ে এখন দেশজুড়ে আন্দোলন চলছে। সম্প্রতি সিলেটে মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজে তুলে নিয়ে তরুণীকে ধর্ষণ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে মানুষ। রাজধানীতে টানা কর্মসূচি চলছে। সরকার ধর্ষণের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করেছে। তারপরও দেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।

ঢাকার তিন মাসের চিত্র
ডিএমপির ৫০টি থানায় জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসে ১৫৪টি মামলা হয়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১টি বেশি। ঢাকায় ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত পাঁচ বছরের রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিবছরে এই সময়ে (মার্চ-আগস্ট) ধর্ষণের ঘটনা বাড়ে। তবে এর কারণ অজানা।

শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ডিএমপির মাসিক অপরাধ সভায় ধর্ষণের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রায় ৭০ শতাংশেরও ক্ষেত্রে অপরাধী ও ভুক্তভোগী পরস্পর পূর্বপরিচিত। তাঁদের দুজনের সম্মতিতেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে প্রেম বা বিয়ের প্রলোভন কাজ করে। বিরোধ দেখা দিলে থানায় ধর্ষণের মামলা করা হয়।
ঢাকায় গত মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয় ৭০৫টি, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা কম।


এদিকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে গত মার্চ থেকে গত ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৭০ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসা নেন। ওসিসির সমন্বয়ক বিলকিস বেগম প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ ছুটি চলাকালে অনেকে নির্যাতনের শিকার হয়েও হাসপাতাল, থানা বা আদালতে যেতে পারেননি। জুন থেকে ওসিসিতে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে আসা নারী ও শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, এদের কিশোরী ও চাকরিচ্যুত নারীর সংখ্যা বেশি।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, কিছু ক্ষেত্রেই ধর্ষণের ঘটনায় মামলাই হয় না। ফলে সেগুলো আড়ালেই থেকে যায়। তারপরও দেখা যাচ্ছে, দেশে করোনাকালে ধর্ষণ বেড়েছে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ৯৭৫ জন শিশু ও নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ২০৮ জন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৩ জনকে। ধর্ষণের শিকার ১২ জন আত্মহত্যা করেন। গত বছরের এ সময়ে ১ হাজার ১১৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

নারী ও শিশুদের ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) সভাপতি সালমা আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এসব ঘটনায় বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। ভুক্তভোগী চাইলেই থানায় মামলা নিতে হবে। নারী ও শিশু আদালত বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শূন্য সহনশীলতার নীতি নিতে হবে।

সূত্র: প্রথম আলো/ এমএস ইসলাম।



বিষয়: গণধর্ষণ


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top