ভোট কারচুপি করে কখনই ক্ষমতায় আসতে চাই না: প্রধানমন্ত্রী

রাজটাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:১৭; আপডেট: ১৫ মে ২০২৪ ০৬:০৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ছবি - ইউএনবি

দেশের জনগণ আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিলেই কেবল তার দল দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। জনগণের খাদ্য ও ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছি। আমি কখনই ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চাই না।’ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলের নেতৃত্বে একটি মার্কিন প্রতিনিধি দল গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন আইন পাস হয়। তারপর সে আইনের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ফলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। বর্তমান কমিশনের প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতাও রয়েছে। এজন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ভিত্তি নেই। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জন্ম তো হয়েছে ক্যান্টনমেন্টে।’

সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের উন্নয়নের বিষয় তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিগত ১৪ বছরে বাংলাদেশের এ পরিবর্তন দৃশ্যমান। দেশে অব্যাহত গণতান্ত্রিক চর্চা ও স্থিতিশীলতার কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে।’

আলোচনায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও রোহিঙ্গা ইস্যুও স্থান পায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের উচিত এ যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্যোগ নেয়া। কারণ এর ফলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া যুদ্ধ কখনই মানবজাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।’ যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে এ বিরোধের মীমাংসা হতে পারে।’

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ শরণার্থীদের জন্য কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এবং স্থানীয়রা পরিণত হয়েছে সংখ্যালঘুতে। তাছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মানব পাচার, সন্ত্রাসবাদ ও আন্তঃসহিংসতার মতো নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের কারণে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ও স্থানীয়দের জীবিকাও হুমকির মুখে পড়ছে। তাই এখন তাদের সেখানে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সরকার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে আয়সংস্থানমূলক কাজসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছে।’ তিনি ভাসানচরে সহায়তা দেয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও অনুকূল পরিবেশে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

মানবিক কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান ডেরেক শোলে। তিনি জানান, বাস্তুচ্যুত এ জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের জন্য তারা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। একই সঙ্গে আশা প্রকাশ করেন, মিয়ানমারে আবার কোনো গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এলে প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কিছু উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তার সফর দুদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বের প্রতিফলন উল্লেখ করে ডেরেক শোলে বলেন, ‘ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরো জোরদার হবে।’

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

কোনো মুক্তিযোদ্ধা মানবেতর জীবনযাপন করবে না: পাঁচ জেলায় গতকাল মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পাঁচ হাজার বাড়ির চাবি হস্তান্তর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করবে বা রিকশা চালাবে বা মানবেতর জীবনযাপন করবে, অন্তত আমি জাতির পিতার কন্যা ক্ষমতায় থাকতে এটা কখনো হতে পারে না।’ অসচ্ছল প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত ঘর ‘বীর নিবাস’-এর চাবি হস্তান্তরের এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা এতে যুক্ত ছিল।

আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তা এখন ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যাদের ঘর-বাড়ি নাই এবং মানবেতর জীবনযাপন করছিল সেটা আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার। তাই আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘর-বাড়ি তৈরি করে তাদের জীবন-জীবিকা এবং চিকিৎসা-যাতায়াতসহ নানা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বর্তমানে ১৭ হাজার ৬৬০টি বীর নিবাসের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান। আশা করি এ বছরের মধ্যে ৩০ হাজার ‘বীর নিবাস’-এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। যদিও করোনা মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও স্যাংশনের কারণে আমাদের খুবই হিসাব করে চলতে হচ্ছে।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সচিব খাজা মিয়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। আর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর ও নড়াইলের জেলা প্রশাসকরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ‘বীর নিবাস’-এর চাবি হস্তান্তর করেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান এমপি।

কোরীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগের আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগ করতে কোরিয়ার ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্টের দূত এবং ভবিষ্যৎ কৌশলবিষয়ক সিনিয়র সচিব জাং সুং মিন গতকাল গণভবনে সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।’ কোরিয়াকে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকেই কোরিয়া বিশেষ করে টেক্সটাইল ও অবকাঠামো খাতে সহযোগিতা করে আসছে।’

বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন প্রসঙ্গে দেশটির দূত জাং সুং মিন বলেন, ‘কোরিয়া আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদারে আগ্রহী। আশা করি আগামী দিনে এ সম্পর্ক ধীরে ধীরে আরো শক্তিশালী হবে।’ ১৯৭২ সালের ১২ মে কোরিয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার মধ্য দিয়ে ৫০ বছর আগে দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

এ সময় মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জাং-কিউন উপস্থিত ছিলেন।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top