বিএনপির আন্দোলনে জনসমাগম দেখে দিশেহারা আ.লীগ: রিজভী

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২৩ ২২:৪৬; আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২৩ ২২:৪৮

বক্তব্য দিচ্ছেন রুহুল কবির রিজভী

সরকার পতনের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনে জনসমাগম দেখে আওয়ামী লীগ দিশেহারা হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শনিবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর লেকশোর হোটেলে এক সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক ও এ্যাব‘র সাবেক সভাপতি আমার দেশ সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান এবং বরেণ্য সাংবাদিক শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে সাজার প্রতিবাদে এই সভার আয়োজন করা হয়।

‘মাহমুদুর রহমানের সংগ্রাম ও সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব)।

বিএনপির আন্দোলনের বারোটা বেজেছে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে মন্তব্য করেছেন তার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আসলে আমাদের কর্মসূচিতে লোকসমাগম দেখে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আবোল তাবোল বলছে।

ওবায়দুল কাদের ডিমেনশিয়া রোগে ভুগছেন। এমনিতেই শারীরিকভাবে অসুস্থ। এখন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেছেন। জনভিত্তি না থাকায় নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা রাখতেই তারা এসব বলছেন। আমি বলব- ওবায়দুল কাদের এখনো সময় আছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিন। এটা চাওয়া কোনো ষড়যন্ত্র নয়, এটা জনগণের দাবি।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, কুষ্টিয়ায় আদালতে মাহমুদুর রহমানের ওপর ভয়ংকর আক্রমণ করা হয়েছে। এটা কী একটা রাষ্ট্র? আজকে যে অভিযোগে আমেরিকার আদালত মামলা বাতিল করে দেয়, সেখানে বাংলাদেশে একটা নিউজের কারণে বিচার করা হয়। এটাতো শেখ হাসিনার আদালত, আওয়ামী লীগের আদালত। সেই আদালতে সাজা দেওয়া হয়েছে মাহমুদুর রহমানকে ও শফিক রেহমানকে। সাজা দেওয়া হয়েছে খালেদা জিয়াকে, তারেক রহমানকে।

কারণ শেখ হাসিনা ন্যায়বিচারের আদালতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। সেখানে এ ধরনের বিচারই হবে। সেজন্যই তো বিচারকরা বলছেন- শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। আজকে শফিক রেহমান-মাহমুদুর রহমান দেশে থাকলে শেখ হাসিনা তাদের মেরে ফেলত! সাংবাদিক শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের সাজা প্রত্যাহারের দাবি জানান রিজভী।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ হলো গুণ্ডাদের দল। রাষ্ট্রকে দিয়ে শেখ হাসিনা এগুলো করছেন। আজকে শেখ হাসিনার ছেলেকে নিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পারে না। অন্যদিকে স্বাধীন সাংবাদিক ও লেখকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অতীতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমনটা হয়েছিল। সেই অত্যাচার পদ্ধতি প্রয়োগ করছেন শেখ হাসিনা।

আসলে কর্তৃত্ববাদী দেশে এমনই হয়। শেখ হাসিনার আদালতে শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্যাতনের ধারা আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনেও শেখ হাসিনা জারি রেখেছে। ২০ নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। অনেককে পঙ্গু করা হয়েছে।

রিজভী বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার ধারা ওয়ান ইলেভেনের সময় থেকেই শুরু হয়েছে। এজন্য আজকের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ‘ওয়ান ইলেভেন তাদের আন্দোলনের ফসল‘। সেসময় সেনাপ্রধান মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন- ‘হাওয়া ভবনের কারণে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের নামে ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে‘! পরে সেটার দাঁতভাঙ্গা জবাব কলামের মাধ্যমে দিয়েছিলেন মাহমুদুর রহমান।

তিনি লিখেছেন- ‘গোটা ৫ বছরে বাজেট হলো ১৩ হাজার কোটি টাকা‘। সেখানে ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে কিভাবে? আসলে দেশি-বিদেশি চক্রান্তের অংশ হলো ওয়ান ইলেভেন।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, মাহমুদুর রহমান একজন দেশপ্রেমিক। তিনি কোনো দলের নেতা নন। তার ওপর ভয়ঙ্কর অন্যায়, অবিচার ও নির্যাতন করা হয়েছে। বহুদিন কারাবরণ করেছেন। তারপরও সম্প্রতি সাত বছর সাজা দিয়েছে। তিনি একজন বিচক্ষণ ও সাহসী মানুষ।

জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জবাব দিতে তিনি আপোস করতেন না। তিনি ছিলেন আপোসহীন দেশপ্রেমিক ব্যক্তি। স্বাধীনচেতা মাহমুদুর রহমান বলতেন এবং লিখতেন। তার সত্য উচ্চারণ আকাশে বাতাসে ভাসে। সেজন্যই তিনি অবৈধ সরকারের টার্গেটের শিকার হয়েছেন। তার শরীরের বহুবার নির্যাতন করেছে। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। চাইলেই চাকরি করে বিলাসী জীবন যাপন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি দেশের জন্য যে ত্যাগ করেছেন সেটা অতুলনীয়।

অনুষ্ঠানে সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, যে মামলায় নির্যাতিত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও শফিকে রেহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছে তার মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তারা দুজনেই সংগ্রামী ও প্রতিবাদী মানুষ। তাদের সতত ও সাহস প্রশ্নাতীত। মাহমুদুর রহমানের শরীর থেকে অনেক রক্ত ঝরেছে। এই রক্ত বৃথা যাবেনা। অন্যায় পরাভূত হবেই।

প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে থাকার কারণেই শেখ হাসিনার জুলুমের শিকার হয়েছেন নির্ভিক সাংবাদিক ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং শফিক রেহমান। তাদেরকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। সুতরাং দেশবাসীসহ সবাইকে মুক্ত করতে এবং ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে হবে।

প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মাহমুদুর রহমান ও বরেণ্য সম্পাদক শফিক রেহমানকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি সাজা দেওয়া হয়েছে। দেশবাসী ও পেশাজীবী সমাজ সাজানো এই রায় মানে না। অবিলম্বে সেটা প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে পেশাজীবী পরিষদ বসে থাকবে না।

সভাপতির বক্তব্যে প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু বলেন, মাহমুদুর রহমান ও শফিক রেহমান দু'জনে সৃজনশীল মানুষ। বর্তমান সরকারের আমলে তাদের ওপর সীমাহীন জুলুম নির্যাতন করা হয়েছে। এই নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে একদফা দাবি আদায়ে রাজপথে ফয়সালা করতে হবে।

সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আসাদুজ্জামান চুন্নুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে মাহমুদুর রহমানের ওপর প্রবন্ধ পাঠ করেন আমারদেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাংবাদিক নেতা বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, বিএফইউজের মহাসচিব নূরুল আমিন রোকন, এ্যাব নেতাদের মধ্যে প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, মহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম, গোলাম মাওলা, সুমায়েল মল্লিক, মাহবুব আলম, শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, মোতাহার হোসেন। এছাড়াও প্রকৌশলী আফজাল হোসেন সবুজ, সাইফুল ইসলাম, প্রকৌশলী আইয়ুব হোসেন মুকুল, বিএনপি নেতা টিপু আব্বাসসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top