যুক্তরাজ্য-জার্মানির পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার হবে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:৫৮; আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - সংগৃহীত

কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের আরো বড় পরিসরে বাংলাদেশে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ ৩ বিলিয়ন মানুষের বাজারের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। আমাদের নিজস্ব ১৭০ মিলিয়ন মানুষ আছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বিত্তশালী জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৩৫ মিলিয়নে। ফলে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পর বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বাজারে পরিণত হবে।’

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুই দিনব্যাপী 'কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম বাংলাদেশ-২০২৩' এ প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।

কমনওয়েলথ স্বীকৃত ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিল, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অসহায় মানুষদের সহায়তা প্রদানকারী পরিবার পরিচালিত ফাউন্ডেশন জেডআই ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এর লক্ষ্য হচ্ছে- উদ্ভাবন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপায় অনুসন্ধান করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনের জন্য উন্নয়ন অংশীদার প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে আমাদের আরো উচ্চমানের এবং টেকসই বিনিয়োগ প্রয়োজন।’

তিনি উল্লেখ করেন, বিনিয়োগ উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে তার সরকার সাংগঠনিক সংস্কার, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) গঠনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে এবং বিনিয়োগ পরবর্তী সেবা নিশ্চিত করে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য প্রায় সব খাত উন্মুক্ত রয়েছে।

তবে এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, অটোমোবাইল ও জাহাজ নির্মাণ এবং আইসিটি খাতে আরো বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আপনার নিজ দেশে লভ্যাংশ বা বেনিফিট ফিরিয়ে নেয়ার সহজ প্রক্রিয়াসহ এই সেক্টরগুলোতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিনিয়োগ সুবিধা রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের প্রায় ৭০ শতাংশ আসে পুনঃবিনিয়োগ থেকে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের চমৎকার বিনিয়োগ পরিবেশের একটি প্রমাণ।

তিনি উল্লেখ করেন, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সেবা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে বিডা ওয়ান স্টপ ফাস্ট ট্র্যাক ডেলিভারি সেবা চালু করেছে এবং এই সেবার মাধ্যমে ২৬টি বিভাগের ৭৮টি সেবা এক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্রহণ করা যাবে।

বিনিয়োগের পূর্বশর্ত অবকাঠামো উন্নয়ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্যাকেজসহ সরকার সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, ১০৯টি হাই-টেক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এবং আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের স্থল, রেল ও বিমান যোগাযোগের উন্নয়ন করছি। দেশের প্রায় সব মহাসড়কই ৪ বা ততোধিক লেনে উন্নীত করা হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সরাসরি সংযুক্ত করেছে।

তিনি বলেন, ‘শিগগিরই ঢাকা ও খুলনার মধ্যে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে রেল যোগাযোগ শুরু হবে।’

তিনি আরো বলেন, শিগগিরই সরকার কর্ণফুলী আন্ডারওয়াটার টানেল উদ্বোধন করবে, যা শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের প্রথম অবকাঠামো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এবং ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির ভিত্তিতে দেশ গড়তে শুরু করে।

তিনি বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সরকারের ধারাবাহিকতা এবং সর্বোপরি কাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি বাংলাদেশের দ্রুত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে, যা বাস্তবায়িত হবে স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট সোসাইটির স্তম্ভ নির্মাণের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক ও উন্নত স্মার্ট দেশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ বদ্বীপে পরিণত হওয়া।’

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, সিডব্লিউইআইসির কৌশলগত উপদেষ্টা জিল্লুর হোসেন এবং কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের (সিডব্লিউইআইসি) চেয়ারম্যান লর্ড মারল্যান্ড অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমনওয়েলথ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড উগান্ডার ইকো ব্রিক্সের হাতে তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়।

সূত্র : ইউএনবি



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top