শাহরিয়ারের মৃত্যু:

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাবি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

রাবি প্রতিনিধি: | প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০২২ ০৩:২৬; আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২২ ০৩:৩৪

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয় । উভয়পক্ষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৌহাদ্যপূর্ণ নিরসন করা সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকলের সহযোগিতা কামনা করছে।

বুধবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়র জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয় ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সকলের সহযোগিতায় নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু রাজশাহী-২ আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশাহ শাহরিয়ারকে হত্যা করে রামেকে নিয়ে যাওয়া, এবং শাহরিয়ারের পরিবারকে হুমকি দিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে পালিয়ে যাওয়াসহ হাসপাতালে উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে গণমাধ্যমে অমূলক তথ্য প্রদান করেছেন। এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ও সংবাদ থেকে জনপ্রতিনিধির বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গোচরীভ’ত হয়েছে। তিনি অনাকাঙ্খিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ষড়যন্ত্রকারী ও স্বাধীনতাবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি সৃষ্ট পরিস্থিতি উত্তপ্ত না করে তিনি পরিস্থিতি উত্তরণে ভূমিকা রাখতে পারতেন, এমন কোনো উদ্যোগ তার পক্ষ থেকে লক্ষ্য করা যায়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে জনপ্রতিনিধির বাস্তবজ্ঞানহীন ও উষ্কানিমূলক বক্তব্য কোনোভাবেই কাঙ্খিত নয়। দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্ক ও সামগ্রিকভাবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং রাজশাহী শহরে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে-এমন বক্তব্য কোনো দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধির নিকট থেকে আশা করা যায় না। তাঁর বক্তব্য পরিস্থিতি শান্ত করার চেয়ে তা আরো জটিল করেছে। প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে এবং ঘটনার খন্ডিত অংশকে ব্যবহার করে তিনি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষানগরী রাজশাহী এবং সমগ্র দেশ তথা মুক্তিযুদ্ধের সরকারকে বিব্রত করেছেন।

শাহরিয়ারের লাশ গ্রহণের ক্ষেত্রে তার পরিবারের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। পরিবারের সদস্যরা (মৃতের বড় ভাই) কোনো ধরণের অভিযোগ বা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ গ্রহণ করে। ডাক্তাররা যদি এতটাই নিশ্চিত থাকেন যে, শাহরিয়ারকে পূর্বেই হত্যা করা হয়েছে তবে হত্যা ও পূর্বরাত্রীর ঘটনাবলীর কথা বিবেচনা করে কেনো বিনা ময়নাতদন্তে লাশ হস্তান্তর করলেন? লাশ হস্তান্তরের দায়দায়িত্ব ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের।

এদিকে ঘটনার দিন রাতে পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের যৌথ বৈঠকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বৈঠকে গঠিত কমিটির সভা আহবানের আগেই পরবর্তী দিনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে।

অন্যদিকে চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং নার্সসহ হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীর আহত হয় । আবার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাহরিয়ারের মৃত্যু ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ন্যায়বিচার চেয়ে রাজপাড়া থানায় অভিযোগপত্র জমা দেয়।

সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে যেকোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ যাতে তৈরি না হয় সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত শাহরিয়ারের মৃত্যু এবং হাসপাতালের অনাকাঙ্খিত ঘটনার তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করে। এমনকি মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হবার পর পরই সেই রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মতিহার থানায় একটি অভিযোগ করে যা পরবর্তীতে অপমৃত্যুর মামলা হিসাবে থানা গ্রহণ করে। সঠিক ঘটনা উদঘাটন ও পরিস্থিতি উত্তরণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের কোনো ঘাটতি ছিলো না।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাত ৮টার দিকে রাবির শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে শিক্ষার্থী এমজিএম শাহরিয়ার নামের এক শিক্ষার্থীকে গুরুতর আহত অবস্থায় রামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রামেকে নেওয়ার ৩৫ মিনিট পর বিনা চিকিৎসায় আহত শাহরিয়ারকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রামেক হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডের সামনে ও পরিচালক কক্ষের সামনে ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা।

এসময় ইন্টার্ন চিকিৎসক, হাসপাতাল স্টাফরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। হামলায় ৫ শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের মাথা ফেটে গেছে ও আরেকজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। অন্যদিকে ইটার্ন চিকিৎসকদের দাবি রাবি শিক্ষার্থীরা তাদেরকে লাঞ্ছিত করেছেন।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top