হাসপাতালে শয্যা সঙ্কট

পাবনায় শীতজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে

রাজটাইমস ডেস্ক:  | প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০২২ ০৩:৩৬; আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২২ ০৪:০৬

ছবি: সংগৃহীত

চলতি মাসের শুরু থেকে উত্তরের জেলা পাবনায় আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগী। হঠাৎ রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। প্রতিদিন শিশু, বৃদ্ধসহ অন্তত ৫০ থেকে ৫৫ জন ডায়রিয়া ও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

এদিকে হাসপাতালের ১৫ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বর্তমানে ৫০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। শিশু ওয়ার্ডে ৩৮ বেডের পরিবর্তে ১৫০ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দা ও করিডোরে অবস্থান করতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সোহেল রানা জানান, হাসপাতালে প্রতিদিনই ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে গড়ে ৫০/৫৫ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। তাদের বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। কিছু সংখ্যক মধ্য বয়সী রোগীও আছে। রোববার (১৩ নভেম্বর) দুপুর পর্যন্ত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫০ জন রোগী ভর্তি আছেন। শিশু ওয়ার্ডে ১৫০ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। পাবনা সদর হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ২৫০। কিন্তু এ হাসপাতালে সব রোগের রোগী ভর্তি রয়েছে গড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ জন।

(১৩ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুড়ে দেখা গেছে, পাবনা সদর হাসপাতালে প্রতিদিনই ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। শয্যা না থাকায় অধিকাংশ রোগীর জায়গা হয়েছে বারান্দা অথবা করিডোরে।

ধারণক্ষমতার চারগুন বেশি রোগী আসায় তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। রোগীরা ১০/১২ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও তাদের জন্য শয্যা বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ছোট্ট একটি বারান্দায় রোগী ও স্বজনরা গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন। সেজন্য জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা চরম বিপাকে পড়েছে।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি হাসপাতালে শুধু বিনা পয়সায় নার্সদের সেবা ছাড়া সমস্ত কিছুই বাহির থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে কোনো কিছুই সরবরাহ করা হচ্ছে না। হাসপাতালের ভিতরে একটি ফার্মেসী রয়েছে সেখানে সব ওষুধের মূল্য অতিরিক্ত নেওয়া হয়। বাইরে যে ওষুধ ১ হাজার টাকায় পাওয়া যায়, একই ওষুধ এখান থেক কিনলে অতিরিক্ত ২০০ টাকা যোগ করতে হয়। তাই আমরা বাইরে গিয়ে ওষুধ কিনে আনি।

হাসপাতালের শিশু-ডায়রিয়া ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্সরা জানান, ডায়রিয়া রোগীদের জন্য বর্তমানে কলেরা স্যালাইনের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। শুধু মুখে খাবার স্যালাইন সরবরাহ রয়েছে। তাই চিকিৎসকেরা যে ধরনের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছে রোগীর স্বজনরা বাহির থেকে ওষুধ কিনে আনছেন । আমরা শুধু সেগুলো নিয়ম অনুসরণ করে দিচ্ছি।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি হাসপাতালে কোনো ধরনের সেবা নেই। সব ওষুধ বাহির থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। এখানে শুধু ডাক্তার একবেলা আসে আর নার্সরা ইনজেকশন পুশ করে। হাসপাতালে বিপদে পরে আসেন সাধারণ রোগীরা। কিন্তু সঠিক সেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে তারা। এতো রোগী আর সাথে থাকা মানুষদের জন্য বাথরুম মাত্র একটি। আবার সেই বাথরুমের অবস্থাও ভালো না।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দায়িত্বরত জ্যেষ্ঠ নার্স ফিরোজা পারভিন ও মাসুদা সুলতানা বলেন, বর্তমানে রোগীর সংখ্যা শয্যার চেয়ে চার পাঁচগুন বেশি। হঠাৎ করে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে এক সাথে অনেক মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে। বর্তমানে শিশু রোগী ২৫ জন আর নানা বয়সের বয়স্ক রোগী আরো প্রায় ১৮০ জন ভর্তি রয়েছেন। সবার জন্য সিট বরাদ্ধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

শিশু ওয়ার্ড এর দায়িত্বরত শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ডা. আতিকুর রহমান বলেন, হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তন ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে নবজাতকসহ নানা বয়সের শিশুরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। জ্যোষ্ঠ চিকিৎসকরা নিয়মিত এসে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে যাচ্ছেন। আর পরবর্তী সময়ে আমরা নিয়োমিত সেবা দিচ্ছি। তবে এতটা খারাপ অবস্থা হয়েছে কক্ষ সংকটের কারণে। আবার রোগীর সংখ্যাও অনেক বেশি। আমরা চেষ্টা করছি সঠিক সেবা প্রদানের।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত রয়েছি। স্যালাইন সংকটের কারণে যে চাহিদা দেওয়া হয়ে ছিলো সেটি ইতোমধ্যে চলেও এসেছে। আর হাসপাতালের চিকিৎসার বিষয়ে স্যার কথা বলবেন। হাসপাতালের শষ্যা অনুযায়ী চিকিৎসক সংকট রয়েছে। ১২০ বেডের চিকিৎসক দিয়ে ২৫০ শষ্যার হাসপাতাল পরিচালনা করা হচ্ছে।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. ওমর ফারুক মীরকে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। হাসপাতালে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, পাবনা জেনারেল হাসপাতালে আশঙ্কাজনকভাবে রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে এটা জানতে পেরেছি। কলেরা স্যালাইন বা অন্যান্য সমস্যা হাসপাতালের সহকারি পরিচালক আমাদের বলেননি। হাসপাতাল থেকে বিষয়টি জানালে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

#এনএ



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top