নওগাঁর রাণীনগর যেন মাদকের অভয়ারণ্য, সমানতালে বেড়েছে জুয়াও

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ৫ মে ২০২৪ ১৭:০৯; আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ০০:১৫

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁর রাণীনগরে বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সেবন ও বিক্রির প্রবণতা। এমন অভিযোগ জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় একাধিক বাসিন্দাদের। উপজেলার প্রতিটি এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ার কারণে দ্রুতই মাদক কারবারিরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মাদকদ্রব্য সরবরাহ করছেন। পাশাপাশি জুয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। আর মাদক সহজে পাওয়ায় অনেকে কৌতূহলবশত না বুঝে মরণফাঁদ নামক মাদকের নীল ছোবলে যুক্ত হচ্ছে। ফলে যুব সমাজ নিয়ে চরম উদ্বিগ্নের মধ্যে রয়েছে অভিভাবকরা।

পুলিশ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে আবার কাউকে ম্যানেজ করে দলীয় ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি পুরো উপজেলাকে ঠেলে দিচ্ছে মাদকের অন্ধকার জগতে। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গাঁজা, ইয়াবা (বাবা), হেরোইন, চোরাই মদ, দেশি মদ, তাড়ি, বুপ্রেনরফিন, অ্যাম্পল পাওয়া যাচ্ছে।

তবে গাঁজা ও ইয়াবার বিস্তার আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঝে মধ্যে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন চিহ্নিত কিছু মাদক কারবারিদের আটক করে জেলে দিলেও আইনের ফাঁক দিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে বেরিয়ে এসে আবার দেদার শুরু করে মাদকের কারবার। চিহ্নিত মাদক কারবারিদের ও মাদকের সম্রাটদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতনমহল।

আবার মাদকের সঙ্গে একাধিক রকমের জুয়াসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। এলাকার স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ যুবসমাজ মাদকে আসক্ত হয়ে এবং জুয়ায় টাকা হেরে চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। অনেকেই মাদকের কারবার করে হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হওয়ার কারণে স্থানীয়রা তাদের ভয়ে কোনো প্রতিবাদও করতে পারে না।

জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার পূর্বদিকে বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও উত্তর দিকে আদমদীঘি এবং সদর থানা। আবার দক্ষিণ দিকে নওগাঁর আত্রাই, নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার কালীগঞ্জ এলাকা ও পশ্চিম দিকে মান্দা উপজেলা। এমন সুযোগে উপজেলার পারইল ইউনিয়নের পারইল বাজার, বগারবাড়ি মোড়, ভান্ডারগ্রাম বাজার, বিলকৃষ্ণপুর বাজার, ডুবাগাড়ী বাজার, কালিগ্রাম ইউনিয়নের ভেটি এলাকা, আবাদুপুকুর বাজার, করজগ্রাম, রাতোয়াল বাজার, একডালা ইউনিয়নের অধিকাংশ জনগুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো, বড়গাছা ইউনিয়নের বড়গাছা বাজার, মালশন-গিরিগ্রাম বাজার, শলিয়া, ভাটকৈ বাজার, সদর উপজেলার লোহাচূড়া বাজার, সিম্বা বাজার এলাকা, রাণীনগর বাজার এলাকার সুইপার পট্টি (মেথর পট্টি), রেলস্টেশন ও রেলগেইট এলাকা, হাতিরপুল এলাকা।

বটতলী মোড়, চোরপট্টীপাড়া, সদর ও আদমদীঘি উপজেলার সীমান্তবর্তি এলাকা চকউজির স্কুল এলাকা, উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ স্থানগুলো বাহাদুরপুর গ্রামের বাজার, হাসপাতাল মোড়, ত্রিমোহনী হাট, মন্ডলের ব্রিজ, কুবরাতলী মোড়, এনায়েতপুর মোড়, কুজাইল বাজার, গোনা ইউনিয়নের বেতগাড়ী বাজার, গোনা বাজার এলাকা, আত্রাই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা প্রেমতলী মোড়, পাগলীর মোড়।

রেললাইন সংলগ্ন নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন মোড়, মিরাট ইউনিয়নের মিরাট বাজার, আত্রাই ও মান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা বান্দাইখাড়া এলাকাসহ উপজেলার প্রায় সকল ইউনিয়নেই নতুন করে জমে উঠেছে বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের বেচাকেনা ও সেবন।

উপজেলার কাশিমপুর, কুজাইল ও আতাইকুলার কয়েকজন যুবক জানিয়েছেন, হঠাৎ করে মাদকের বিক্রি ও সেবন বৃদ্ধি পেয়েছে। কেউ কেউ কৌশল পাল্টে স্থান পরিবর্তন করে অনায়াসে মাদক বিক্রি করছে। আর এ কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে মাদকসেবীর সংখ্যা। তবে জুয়া তেমন চলে না জানিয়ে তারা জানান, মাঝে মাঝে কোনো গোপন জায়গায় খেলে। অথবা কারও বাড়িতে চলে জুয়া। আর লুডুর জুয়া তো এখন ওপেন সিক্রেট।

মিরাটের জামালগঞ্জ এলাকায় রাতের বেলায় চলত লাখ লাখ টাকার জুয়া। তারা ২নং স্লুইসগেটসহ তিন জায়গায় লোক রেখে এই জুয়া চালাত। ওই এলাকায় পুলিশ পৌঁছলে তারা একে অপরের মাধ্যমে খবর দিয়ে দেয়। তবে সেটা বন্ধ হলেও গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় মাঝে মাঝে চলে জুয়া খেলা। আর ধনপাড়া ও হামিদপুর এলাকায় অনায়াসে চলছে বাংলা মদ বিক্রি। এমন অভিযোগ এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তির।

উপজেলার ভেটি গ্রামের এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, বেশ কিছুদিন যাবৎ ভেটি গ্রাম এলাকাটি অনেকটাই মাদকমুক্ত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি চিহ্নিত মাদক কারবারিরা পুনরায় মাদকের রমরমা ব্যবসা শুরু করেছে। কোনো কিছু বলতে গেলেই পুলিশের ভয় ও হয়রানিমূলক মামলার ভয় দেখায়। হাতের কাছে পাওয়ায় মাদকের নীল নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে তরুণ ও যুব সমাজ। সন্তানরা বড় হয়ে গেলে আর কত চোখে চোখে রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে। অথচ পুলিশ বাহিনী ইচ্ছে করলেই নিমিষের মধ্যে এলাকা থেকে মাদকের দৌরাত্ম্য কমাতে পারে।

কুবরাতলী এলাকার এক মাদককারবারি পরিচয় গোপন রেখে গণমাধ্যমকর্মীকে বলেন, মাদকদ্রব্যের চলাচলের পথ রোধ না করা পর্যন্ত মাদকের বিস্তার প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। যারা প্রভাবশালী এবং যারা থানা পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে আসছে তারা প্রকাশ্যে মাদকের রমরমা ব্যবসা করলেও পুলিশ তাদেরকে দেখতে পায় না। অথচ পুলিশ চাইলেই উপজেলাকে মাদকমুক্ত করতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে।

পারইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান বলেন, উপজেলার মধ্যে পারইল ইউনিয়ন মাদকের হটস্পটে পরিণত হয়েছে। ইদানীং এই ইউনিয়নের অধিকাংশ স্থানই মাদক বিস্তারের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রকাশ্যে বিভিন্ন এলাকায় মাদকদ্রব্য বিক্রি হয়। বিশেষ করে বড়ি বেশি বিক্রি হয়।

তিনি একটু ক্ষোভ নিয়েই বলেন, প্রতিটি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিং-এ মাদক নিয়ে কথা বলেছি। কোনো লাভ হয় না। তাই মাদক নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না। কিন্তু যখন দেখি ইউনিয়নের তরুণ-যুবকরা চোখের সামনে মাদকের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, তখন খুব কষ্ট হয়, খুব খারাপ লাগে। অনেকবার মাদকের বিস্তাররোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা বাস্তবায়ন করার মতো কোনো সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছি।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ওবায়েদ মোবাইল ফোনে বলেন, জুয়া কোথায় হচ্ছে সেটা তিনি জানতে চান এই প্রতিবেদকের কাছে। তবে গ্রামের দু-এক জায়গায় বসে ম্যারেজ খেলতে পারে বলে স্বীকার করেন তিনি।

আর মাদকের বৃদ্ধি পাওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়টি দেখতেছি। থানা পুলিশ সব সময় মাদকের বিরুদ্ধে। আমরা প্রতিনিয়তই মাদকের বিস্তার রোধে জড়িতদের আটক করছি এবং আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করছি। এই উপজেলায় মাদকের বিস্তারকে জিরো টলারেন্সে আনতে আমরা পুলিশ বদ্ধপরিকর। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং চলবে।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top