উত্তপ্ত রাজশাহী আ.লীগ

বাবুল হত্যায় তিন নেতার মদদ থাকার অভিযোগ 

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২৪ ১০:৫৯; আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪ ২১:১০

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল নিহতের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে স্থানীয় রাজনীতি। এ ঘটনায় পরস্পরকে দোষারোপ করে পালটাপালটি বক্তব্য দিচ্ছেন জেলার শীর্ষ নেতারা। দলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত বাবুলের জানাজায় গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল কুমার সরকার। হাত ধরে টেনে তাকে বাবুলের লাশের পাশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাবুল নিহতের ঘটনায় সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ-সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এবং বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলুকে দোষারোপ করেছেন। তার হত্যায় এ তিন নেতার মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

শাহরিয়ারের এমন বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেই একজনের লাশের দরকার ছিল। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাবুলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। লাশ সামনে রেখে বক্তব্য দিতে গিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বাবুল নিহতের ঘটনায় জড়িত খুনি আক্কাস (আক্কাস আলী, বাঘা পৌর মেয়র) ও খুনি মেরাজ (মেরাজ উদ্দিন, বাকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান)। তাদের পেছনে মদদদাতা আছে। দুই বছর আগে আক্কাস বহিষ্কৃত হয়েছিল আওয়ামী লীগ থেকে। খায়রুজ্জামান লিটন নিজের মুখে সেই কথা এখানে বলেছিলেন। এর সাতদিনের মাথায় খায়রুজ্জামান লিটনের গাড়িতে আক্কাস ও মেরাজকে ঘুরতে দেখা গেছে।’

শাহরিয়ার বলেন, ‘আমরা জবাব চাই, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে। অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলুর কাছে জবাব চাই, সে (লাভলু) কেন আজ পলাতক? খুনের মামলায় দুজন সশরীরে উপস্থিত ছিল। পেছন থেকে মদদদাতা হিসাবে আসাদুজ্জামান আসাদ, এএইচএম খায়রুজ্জামান ও লায়েব উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব। আমাদেরও দায়িত্ব আছে।’

শাহরিয়ার আরও বলেন, ‘আমি প্রশাসনকে বলব, এই যে কয়েকজনের নাম বললাম, আসামিদের টেলিফোন নম্বরের সঙ্গে, তাদের সাতদিনের টেলিফোন মিলিয়ে নিবেন। তাদের সঙ্গে যদি দিনে পাঁচবার করে কথা না হয়, আমি সংসদ-সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে যাব।’

শাহরিয়ার আলম যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ-সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আয়েন উদ্দিন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। শাহরিয়ারের ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার। তাকে হাত ধরে টেনে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

অনিল কুমার সরকার অভিযোগ করেন, তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে জানাজার স্থান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিহত বাবুলকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি ফুলের ডালাও নিয়ে গিয়েছিলেন। সেটিও দিতে দেওয়া হয়নি।

শাহরিয়ারের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

বৃহস্পতিবার বিকালে তার কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, ‘বাবুল যখন ছাত্রনেতা, তখন থেকেই তাকে আমি পাশে পেয়েছি। তাকে হত্যার মতো নিন্দনীয়-নৃশংস হত্যার সঙ্গে আমি কোনোভাবে জড়িত থাকার কোনো কারণ নেই, কোনো সুযোগ নেই। জানাজায় আমার নাম ধরে এলাকার বর্তমান এমপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এরকম উক্তি করতে পারেন, সেটা আমার বোধগম্য নয়। তার কাছ থেকে এটা আশাই করিনি। কী উদ্দেশ্যে, কেন তিনি বলেছেন, তা তিনিই বলতে পারবেন। যারা বিবেকসম্পন্ন মানুষ, তারা এটাকে সমর্থন করবেন না।’

লিটন বলেন, ‘আমার বয়স এখন ষাটের ওপরে। আমার রাজনৈতিক জীবনে এ ধরনের ঘটনায় মদদ দেওয়ার ইতিহাস নেই। মনে হচ্ছে যেন লাশটি কারও দরকার ছিল। একজনের লাশ দরকার ছিল। যেটাকে পুঁজি করে রাজনীতি করা যায় এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা যায়। আমার কাছে এটাই মনে হচ্ছে। আমরা যারা আওয়ামী লীগের রক্ত নিয়ে বড় হয়েছি, তাদেরকেই এখন হেনস্তা করার অপচেষ্টা করছে নতুনরা।’

জানাজায় শাহরিয়ার আলমের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে জানতে চাইলে সংসদ-সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, সংসদ-সদস্য শাহরিয়ার আলম আমাদের মদদদাতা হিসাবে উল্লেখ করে সাতদিনের কলরেকর্ড তুলতে বলেছেন। আমি ডিআইজি-এসপিকে ফোন করে বলেছি, সাতদিন না, আপনারা সাত মাসের কল রেকর্ড তুলে দেখেন।

তিনি বলেন, এ মামলার যারা আসামি, তারাও দলের জন্য ত্যাগী। কিন্তু বাবুল হত্যার বাদী হাইব্রিড আওয়ামী লীগ। সব বাদ দিয়ে হাইব্রিড কেন বাদী? শাহরিয়ার সাহেব যা বলেছেন, তা তাকে প্রমাণ করতে হবে। তা না হলে তাকেও মামলার মুখোমুখি হতে হবে। বাঘায় শাহরিয়ারের অবস্থান নেই। এ কারণে তিনি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন।

এদিকে বাবুলের জানাজা শেষে বাঘা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গাঁওপাড়া মহল্লায় পারিবারিক কবরস্থানে বাবা আমিরুল ইসলাম আমুর কবরের পাশে দাফন করা হয়।

২২ জুন বাঘা উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন বাবুল। বুধবার বিকালে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top