বাঘায় আওয়ামী লীগে সংঘর্ষে ২ মামলা, গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকে এলাকাছাড়া

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২৪ ১৬:১৮; আপডেট: ১ জুলাই ২০২৪ ১৯:৫৭

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর বাঘায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে দলের অনেক নেতা-কর্মী গা ঢাকা দিয়েছেন। সংঘর্ষে আহত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলের (৫০) মৃত্যুর পর তাঁরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। গত ২২ জুন উপজেলা সদরে দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর ২৬ জুন হাসপাতালে বাবুল মারা যান।

বাবুল স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের অনুসারী ছিলেন। সেদিনের ওই সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে বাবুলের মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া সংঘর্ষের স্থানে আসার পথে আক্রান্ত হয়েছিলেন আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলামের হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। তিনিও শাহরিয়ার আলমের অনুসারী।

সংঘর্ষ যে কারণে: জমির ক্রেতা-বিক্রেতাকে জিম্মি করে উপজেলা দলিল লেখক সমিতির অতিরিক্ত টাকা আদায়কে সমর্থন দেওয়া-না দেওয়া নিয়ে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের গঠন করে দেওয়া ওই কমিটির এমন চাঁদাবাজির বিরোধিতা করে আসছিলেন পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাস আলী; উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু এবং পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজুল ইসলামের অনুসারী দলিল লেখকেরা।

এ নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত গত ১০ জুন। সেদিন দলিল লেখক সমিতির দুই পক্ষে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে ২০ জুন দলিল লেখক সমিতির চাঁদাবাজি বন্ধসহ কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করে উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র পক্ষ। তাতে বাঘার দলিল লেখকসহ হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা অংশ নেন। পরে ২২ জুন তাঁরা বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দেন। পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে একই দিন উপজেলা সদরে পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মানববন্ধনের ডাক দেন শাহরিয়ারের অনুসারী নেতা-কর্মীরা। কর্মসূচিতে দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে বেগ পায় পুলিশ।

পাল্টাপাল্টি মামলা: ওই সংঘর্ষের পর রাতেই দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর ইসলাম পিন্টু থানায় মামলা করেন। মামলায় মেয়র আক্কাস আলী, ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মোকাদ্দেসসহ ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া আরও ২০০-৩০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার আদালতে পাল্টা মামলা করেছে মেয়রপক্ষ। আবুল কালাম (৩৫) নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার আরজিতে বলা হয়, ঘটনার দিনই তাঁরা থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামলা গ্রহণ করেননি। তিনি আদালতে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী আদালতে এ মামলা করা হয়।

এ মামলায় আসামি হিসেবে উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহমান, সদ্য অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে শাহরিয়ার আলম সমর্থিত পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী রোকনুজ্জামান রিন্টুসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। আদালতের বিচারক মো. হাদিউজ্জামান মামলার আবেদনটি গ্রহণ করে তা এজাহার হিসেবে রেকর্ড করতে বাঘা থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।

মেয়রপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার আগেই পুলিশ সাতজনকে আটক করে। মামলা হওয়ার পর আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা সবাই মেয়রপক্ষের লোকজন। তাঁদের মধ্যে চকরাজাপুর ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর অভিযোগ ওঠে, সংঘর্ষের সময় ছিলেন না এমন মানুষকেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। জহুরুল ইসলাম এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না। মামলায় ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে এজাহারভুক্ত আসামি নন এমন নেতা-কর্মীরাও ভয়ে এলাকা ছেড়েছেন। মামলার প্রধান আসামি পৌর মেয়র আক্কাস আলীরও নাগাল পায়নি পুলিশ।

মেয়রপক্ষের সাতজনকে পুলিশ এক দিন করে রিমান্ডেও নিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল শুক্রবার তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। ওই সাতজন হলেন ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম (৩৪), জেলা ছাত্রলীগের আপ্যায়ন সম্পাদক মারুফ হাসান (৩২), গোলাম মোস্তফা (৩৮), মতিউর রহমান (৩০), নাসির ইসলাম (২৮) ও মো. তরঙ্গ (২৩) এবং রাজশাহী জেলা যুবলীগের সাবেক সহসম্পাদক শাহজামাল সরকার (৩৫)।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেয়রপক্ষ মামলা করার আগে এমপি পক্ষের লোকজন এলাকায়ই ছিলেন। তবে আদালতে মামলা করার কথা জানাজানি হলে তাঁরাও গা ঢাকা দিয়েছেন। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, আদালতে করা মামলার এজাহার তারা এখনো পায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাঘা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা বলেন, ‘দলিল লেখক সমিতির সভাপতির করা মামলাটি আমি তদন্ত করছি। মেয়রপক্ষ আদালতে মামলা করেছে বলে শুনেছি। তবে আদালত থেকে এখনো নথিপত্র আসেনি। সেটা এলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় যারা উপস্থিত ছিল, তারা সবাই এখন পলাতক। কোনো পক্ষের লোকজনই এলাকায় নেই। এ রকম ঘটনার পর এমনই হয়।’



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top