বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষে স্বাবলম্বী মিঠুন

সেলিম সানোয়ার পলাশ, গোদাগাড়ী   | প্রকাশিত: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৪:২৪; আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩৪

পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় ফল কুল। এ কুলের আবাদ হচ্ছে বাণিজ্যিকভিত্তিতে। দেশীয় প্রযুক্তিতে চাষীরা যখন ভাগ্য বদলের খেলায় পরাজিত হচ্ছে, ঠিক তখনই প্রযুক্তির সমন্বয়ে কুলের বাগান করে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে কুল চাষী রহমত আলী মিঠুন।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের কুন্দলীয়া মাঠে ৫৫ বিঘা জমিতে বল সুন্দরী ও কাশমিরি জাতের কুলের বাগান করেছে মিঠুন। একার চারা লাগিয়ে ৮ থেকে ১০ বছর ভালো ভাবে বাগান থেকে এ কুল সংগ্রহ করা যায়।

মচমচে, রসালো, ও সুস্বাদু ফল হিসেবে বল সুন্দরী ও কাশমিরি কুলের কোন তুলনা নেই। একবার গাছের চারা লাগিয়ে ৮ থেকে ১০ বছর ভালো ফল সংগ্রহ করা যায়। ভালো দাম ও ব্যাপক চাহিদার কারণে জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে তার বাগানের কুল। অল্প সময়ে, স্বল্প খরচে লাভজনক সুস্বাদু ফল কুল চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে এ চাষী।

কথা হয় কুল চাষি রহমত আলী মিঠুনের সাথে। সে বলে আগে সে কুলের ব্যাবসা করতো। অন্যর বাগান থেকে কুল কিনে ব্যাবসা করে ভালো লাভোবান হওয়ায় নিজেই কুল চাষের উদ্দ্যেগ নেই। প্রায় ২ বছর আগে ৪০ বিঘা জমি ১০ বছরের জন্য বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকা করে লিজ নিয়ে তৈরী করে কুলের বাগান। তার এ কুলের বাগান তৈরী করার সময় নিজের ৬ লক্ষ টাকা, আড়ৎ দারের কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা বাবার ৬ কাঠা জমি বিক্রি করে শুরু করে কুল চাষ।

কুলের চারা লাগানোর প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস পর কুল সংগ্রহ শুরু করে। প্রথম বছর ২ হাজার ১শ’ ক্যারেট বাগান থেকে কুল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন। কুল বিক্রি করে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা পান। তারপর তিনি আরো ১৫ বিঘা জমি ১৫ বছরের জন্য লিজ নিয়ে বাগান তৈরী করেন। এখন তার ৫৫ বিঘা কুলের বাগান। বিঘা প্রতি ১শ’ করে কুল গাছ লাগিয়েছে। বর্তমানে তার বাগানে প্রায় ৫ হাজার ৫শ” গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ২শ’ কাশমিরি কুলের গাছ বাকী সব বল সুন্দরী। তার ৫৫ বিঘা কুলের বাগান তৈরী করতে জমি লিজের টাকা বাদে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। ২য় বছর ( চলতি মৌসুমে) ১ হাজার ক্যারেট কুল বাজার জাত করা হয়ে গেছে বলে জানান মিঠুন। প্রতি ক্যারেটে গড়ে ২৯ কেজী করে কুল ধরে। বর্তমানে সে প্রতি কেজী কুল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজী দরে বিক্রি করছে। ১ হাজার ক্যারেট কুল বিক্রি করে প্রায় ১৭ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা পেয়েছেন। সে আশা করছে এ মৌসুমে আরো ৩ হাজার ক্যারেট কুল সংগ্রহ করবে বাগান থেকে। এছাড়াও কুল বাগানে সাথী ফসল হিসাবে লাউ ও পেপে চাষ করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে কুল চাষি রহমত আলী মিঠুন বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা পায়নি।

এদিকে কৃষিবিদরা বলছে, উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রমের তুলনায় কুল চাষ অত্যন্ত লাভজনক। একটি চারা গাছ ৬ মাস বয়সেই ফল দেয়া শুরু করে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে এ কুলের আবাদ করলে একদিক দিয়ে যেমন কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে, অপরদিকে পুষ্টিকর ফলের চাহিদাও পূরণ হবে। বেকার ও দারিদ্র জনগোষ্ঠির মানুষ এবং প্রান্তিক কুল চাষীদের যদি অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করা যায়, তাহলে এ জেলায় কুলের আবাদ বৃদ্ধি পাবে। দারিদ্র বিমোচনে বিরাট অবদান রাখবে।
গোদাগাড়ী কৃষি অফিসের উপসহকারী অফিসার অতনু সরকার বলেন, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে যেহেতু পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে, তাই বড়ই চাষে পানি কম লাগে। এছাড়া এই ফলটি পুষ্টি চাহিদা পূরণে ও কৃষকের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। 


 



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top