কঠোর নিরাপত্তায় শুরু বিশ্ব ইজতেমা

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:০০; আপডেট: ৬ মে ২০২৪ ১০:৫৫

ছবি: সংগৃহীত

 

কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীতে শুক্রবার (০২ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ইতোমধ্যে ১৬০ একরের ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।

অনেকেই বিশ্ব ইজতেমার মূল ময়দানে জায়গা না পেয়ে ইজতেমা মাঠে প্রবেশ পথের দুইপাশে অবস্থান নিয়েছেন। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। মাঠের উত্তর-পশ্চিম দিকে বিভিন্ন দেশের অতিথিদের জন্য আন্তর্জাতিক নিবাস তৈরি করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে ইজতেমা ময়দানের আশপাশে বেশ কিছু নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীর। জিকির-আসকারে সময় পার করছেন মুসুল্লিরা। শুক্রবার বাদ ফজর বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমা মূল কার্যক্রম শুরু হবে। তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে রোববার (০৪ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।

বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রথম পর্বের ইজতেমায় যোগ দিতে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের উপস্থিতি বাড়ছে। বাস, ট্রাক, ট্রেন ও হেঁটে টুপি-পাঞ্জাবি পরিহিত মুসল্লিরা টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আসছেন। রোববার (০৪ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লিদের এ আগমন অব্যাহত থাকবে। ময়দানের পশ্চিমে তুরাগ নদের পূর্ব পাশে নামাজের মিম্বর এবং উত্তর-পশ্চিম পাশে বিদেশী মুসল্লিদের কামড়ার পাশে বয়ান মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে।

নামাজের মিম্বর থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমাম এবং বয়ানের মঞ্চে বয়ানকারী অবস্থান করেন। বয়ান মঞ্চ থেকে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করা হবে। ইজতেমার প্রচলিত রেওয়াজ অনুসারে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় মহাসমাবেশ কোনো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ছাড়াই শুরু হবে। সভাপতিহীন এই মহাসমাবেশে থাকছে না কোনো প্রধান বা বিশেষ অতিথি।

নাম-পদবি ছাড়াই বিভিন্ন দেশের ওলামায়ে কেরামগণ এই সম্মেলনে তাবলিগের জামাতের রীতি অনুসারে শুধু ধর্মীয় অরাজনৈতিক বয়ান পেশ করবেন। এবারের ইজতেমায় চট সঙ্কট থাকায় নিজ উদ্যোগে সামিয়ানা ও চট টাঙ্গানোর কাজ করতে দেখা গেছে মুসল্লিদেরকে।

ইজতেমার প্রথম পর্বের আয়োজক মাওলানা জোবায়েরপন্থী জামাত। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুপুর দেড়টার দিকে কাকরাইল মসজিদের মুরুব্বি মাওলানা জোবায়ের প্রথম দিন দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজে ইমামতি করবেন। ১৬০ একরের পুরো ইজতেমা ময়দান ছাপিয়ে কামারপাড়া, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের অলিগলিতেও কাতারবদ্ধ হয়ে জুমার নামাজে অংশ নেবেন মুসল্লিরা।

বৃহত্তম জুমার নামাজে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তবলিগ জামাতের মুসল্লি ছাড়াও গাজীপুর ও আশপাশের জেলা থেকে তারা ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নিতে থাকেন। চার দিন বিরতির পর ভারতের তাবলিগ মারকাজের প্রধান মাওলানা সাদ কান্ধালবীর অনুসারিরা ৯, ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আয়োজক ।

প্রথম পর্বের মিডিয়া বিষয়ক জিম্মাদার মুফতি জহির ইবনে মুসলিম জানান, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের বিভিন্ন খিত্তায় নির্ধারিত বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা এসে অবস্থান নেবেন। আগত মুসল্লিদের ইজতেমার কর্মসূচিতে অংশ নিতে ও তাদের সব ধরনের সেবা প্রদানে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মাঠটিতে বাঁশের খুঁটির ওপর ছাউনির মধ্যে মুসল্লিদের বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা মাইক।

লাগানো হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি। দেশীয় তবলিগের মুসল্লিদের জন্য জেলাওয়ারি আলাদা খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে আসা মেহমানরা ঢাকার কাকরাইল মসজিদ, টঙ্গী ও গাজীপুরের বিভিন্ন মসজিদে গাস্তের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। ময়দানের উত্তর-পশ্চিম দিকে আন্তর্জাতিক নিবাসে বিদেশী মেহমানদের খাবার সরবরাহ, খাবার তৈরি ও পরিবেশনসহ খেদমতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রস্তুত করা হয়েছে।

টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে মুসুল্লিদেরকে বিনামূল্যে সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক ১০টি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকবে। হাসপাতালে অতিরিক্ত বেড স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে অর্ধশতাধিক ফ্রি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সহকারী বর্জ্য অপসারণ ও পয়ঃপ্রণালি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় আগতদের জন্য ১০টি গভীর নলকূপ থেকে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ও ওজু-গোসলখানা নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে কঞ্জাভেঞ্চি টিম প্রস্তুত রয়েছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মাহবুবুল আলম বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় পুলিশ, র‌্যাব, আনসারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ৭ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন রয়েছে। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা টহল শুরু হয়েছে। ইজতেমা নিয়ে যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা রয়েছে। আমরা তাদের ব্রিফিং করেছি, প্রশিক্ষণ দিয়েছি।

কে, কখন, কোথায়, কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে সেভাবে তাদের প্রস্তুত রয়েছ। সাইবার মনিটরিং ও সাইবার প্যাট্রোলিং জোরদার করা হয়েছে। কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ময়দানের নিরাপত্তায় বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াট টিম, ডগ স্কোয়াড, বিস্ফোরক প্রশিক্ষক টিম, ক্রাইম সিন, প্রশিক্ষক টিমসহ নৌবহর ও হেলিকপ্টার দিয়েও টহলের ব্যবস্থা থাকবে।

পর্যাপ্তসংখ্যক সিসি ক্যামেরা, আইপি ক্যামেরা ও নাইট ভিশন ক্যামেরা থাকবে। পুলিশের পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা থাকবেন। ইজতেমা ময়দানে অগ্নি নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ও ফায়ার ফাইটার টিমও মোতায়েন করা হয়েছে।

সামমগ্রিকভাবে ইজতেমায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে র‌্যাব ফোর্সেস সদর দফতর র‌্যাব-১ সহ অন্যান্য পাঁচটি ব্যাটালিয়ন দায়িত্বরত থাকবে। ইজতেমা এলাকায় নিরাপত্তা সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য র‌্যাবের স্পেশাল টিম বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং পর্যাপ্ত স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স সার্বক্ষণিকভাবে রাখা হয়েছে।

বিদেশী মুসল্লিদের নিরাপত্তায় বিদেশী খিত্তায় অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সতর্ক দৃষ্টি ও নজরদারি রাখা হয়েছে। ইজতেমামুখী যানবাহন ও যাত্রীদের তল্লাশির জন্য চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ড, টঙ্গী-কালীগঞ্জ রোড, উত্তরা নর্থ টাওয়ারের সামনে ও আশুলিয়া-কামারপাড়া এলাকায় নিয়মিত চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

এদিকে, তাবলিগ জামাতের নিজেদের মধ্যে বিরোধের কারণে এবারো বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সে হিসেবে এখন যারা মাঠে আছেন বা আসছেন তারা সবাই মাওলানা জুবায়েরপন্থী। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে জুবায়ের পন্থীদের ইজতেমা। আর সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা ইজতেমা করবেন ফেব্রুয়ারির ৯, ১০ ও ১১ তারিখে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top