যাদের জন্য রোজা শুধুই ক্ষুধা পিপাসা

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২২ ০৪:২০; আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৩১

রমজানে মুমিনের আত্মজিজ্ঞাসার সুবর্ণ সুযোগ। ইবাদত ও পুণ্য হাসিলের মাস রমজান দ্বারা কতটা উপকৃত হওয়া গেল আর কতটা সময় অবহেলায় গেল, অবশিষ্ট সময়টুকু কিভাবে আরো বেশি ইবাদতমুখর করা যায়, রমজান-পরবর্তী সময়ে তাকওয়াপূর্ণ জীবনযাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা যায় এ সবই উপলব্ধি করার উপযুক্ত সময় হচ্ছে এই রমজান। আর যারা এই মাসটিকে এসব কাজে লাগাতে না পারেন তাদের কাছে তো রোজা মনে হবে শুধুই ক্ষুধা পিপাসায় অতিবাহিত হওয়া কষ্টকর একটি মাস।

আত্মজিজ্ঞাসা হচ্ছে মুমিনের বৈশিষ্ট্য। একজন মুমিন দৈনন্দিন কাজের ভালো-মন্দ পর্যালোচনা করবে এটাই তার বৈশিষ্ট্য।

মুমিন ভালো কাজ করলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে এবং পাপ করলে আল্লাহর দরবারে অনুতপ্ত হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় কোরো; প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কোরো, তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। ’ (সুরা হাশর, আয়াত : ১৮)

রমজানে আত্মজিজ্ঞাসা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলাধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)

পূর্বসূরি পুণ্যাত্মা ব্যক্তিরা রমজানে আত্মজিজ্ঞাসায় লিপ্ত হতেন। বিশেষত রমজানের শেষভাগে তাদের ব্যাপারে উদ্বেগ বেড়ে যেত। রমজানের শেষভাগে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘আমাদের মধ্যে কার রোজা কবুল হলো, আমরা তাঁকে অভিনন্দন জানাব এবং কে বঞ্চিত হলো তাঁর জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করব। হে সৌভাগ্যবান, যার রোজা কবুল হয়েছে তোমাকে অভিনন্দন এবং হে হতভাগা, যার রোজা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে আল্লাহ তোমার পাপ মার্জনা করুন। ’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ২১০)

রমজানে মুমিন সেসব বিষয়ে আত্মজিজ্ঞাসা করবে, যেসব বিষয় অর্জন বা বর্জনের নির্দেশ দিয়েছে ইসলামী শরিয়ত। এমন কয়েকটি বিষয় হলো—

১. তাকাওয়া অর্জন : রমজানের প্রধান উদ্দেশ্য তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করা। মুমিন হিসাব করে দেখবে সে কতটা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পেরেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। ’(সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

২. ভালো কাজে অগ্রগামী হওয়া : ভালো কাজে অগ্রগামী হওয়া রোজা পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘(এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী, অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত, বিরত হও। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬৮২)

৩. পাপ পরিহার করা : উল্লিখিত হাদিস দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয় পাপ পরিহার করা রোজা পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

৪. জীবনে সংযম ও শৃঙ্খলা আসা : জীবনে সংযম ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা রোজা পালনের একটি উদ্দেশ্য। এ জন্য যার জীবনে রমজান কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি তার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)

৫. ক্ষমা লাভ করা : রমজানে মুমিন অবশ্যই হিসাব করে দেখবে আল্লাহর দরবারে তার পাপগুলো মার্জনা করা হলো কি না। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলাধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)

আত্মজিজ্ঞাসা না থাকলে ব্যক্তি তার আমলের ব্যাপারে আত্মতৃপ্তিতে ভোগে। ফলে উদাসীনতার কারণে তাঁর আমলগুলো একসময় নিষ্ফল হয়ে যায়। এই শ্রেণির মানুষের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কত রোজাদার এমন, যাদের রোজা ক্ষুধা পিপাসা ছাড়া আর কিছুই না এবং কত তাহাজ্জুদ আদায়কারী এমন, যাদের তাহাজ্জুদ রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছু না। ’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ২০১৪)

আল্লাহ রমজানের অবশিষ্ট সময়গুলোকে মূল্যায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top