প্রক্টরেরা আছেন খাতায়-কলমে, উপাচার্যই করেন তাঁদের কাজ

ববি প্রতিনিধি: | প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২৫ ২২:২২; আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ০৪:২৪

ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) প্রক্টরিয়াল বডি থাকা সত্ত্বেও, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মতো কাজ উপাচার্যকেই সরাসরি তদারকি করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসেন ফয়সাল।

এছাড়াও প্রক্টরিয়াল বডির অন্যান্য সহকারী প্রক্টরেরা হলেন: আইন অনুষদের আলমগীর হোসেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নাহিদা সুলতানা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের মহিন উদ্দিন এবং কলা ও মানবিক অনুষদের কবির হোসেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রক্টরিয়াল বডির অধিকাংশ শিক্ষকই শহরে থাকেন। ফলে মারামারি-সহ অন্যান্য জরুরি যেকোনো প্রয়োজনে তাঁদের সময়মতো পাওয়া যায় না। এর ফলস্বরূপ, উপাচার্যকেই মাঠে নেমে এসব সমস্যার সমাধান করতে হয়।

অনেক সময় মারামারির মাঝে উপাচার্যকে ঢুকে যেতে দেখা যায়। কিছুদিন আগে তাঁকে রক্ষা করতে গিয়েই একজন শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। প্রক্টরিয়াল বডির ক্যাম্পাস পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব থাকলেও বিভিন্ন সময়ে, এমনকি রাতের বেলাতেও, উপাচার্যকে একাই টহল দিতে দেখা যায়। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে হরহামেশাই মাদক সেবন চললেও প্রক্টরিয়াল বডির কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না।

মাঠপর্যায়ে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রক্টর রাহাত হোসেন ফয়সালকে কিছু শিক্ষার্থী চিনলেও, সহকারী প্রক্টরদের অধিকাংশকেই তাঁরা চেনেন না। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সহকারী প্রক্টরদের মাঠে না থাকা এবং তাঁদের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দাবি, প্রক্টরিয়াল বডির বারবার রদবদল, স্বল্প মেয়াদে দায়িত্ব পালন এবং কার্যত তাঁদের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলমকে অনেক ক্ষেত্রে একাই প্রশাসনিক ও শৃঙ্খলাজনিত কার্যক্রম হাতে নিতে হচ্ছে।

খাতায়-কলমে প্রক্টর থাকলেও, বাস্তবে তাঁদের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গত কয়েক বছরে প্রক্টর পদে ঘন ঘন পরিবর্তন আসায় এই পদের ধারাবাহিকতা বজায় থাকেনি। বিভিন্ন সময়ে প্রক্টর এবং সহকারী প্রক্টরদের পদত্যাগ বা অব্যাহতি নেওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষাকারী এই গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোটি দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, প্রক্টরিয়াল বডির দুর্বলতার কারণে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন মোকাবিলা, বিভিন্ন প্রশাসনিক সমস্যা সমাধান, এমনকি ছোটখাটো ঘটনাতেও উপাচার্যকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। ফলে, একজন উপাচার্যের মূল কাজ – বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, একাডেমিক উন্নয়ন এবং উচ্চশিক্ষা প্রসারের দিকে মনোযোগ ব্যাহত হচ্ছে।

সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায় উপাচার্যকে সরাসরি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা, প্রশাসনিক অচলাবস্থা নিরসন করা এবং অনেক ক্ষেত্রেই প্রক্টরের দায়িত্বের অংশ হিসেবে গণ্য হওয়া কাজগুলোও তদারকি করতে দেখা গেছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে – কাগজে-কলমে থাকা প্রক্টরিয়াল বডি কি কেবলই নামকাওয়াস্তে, নাকি তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালনে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না? এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও শিক্ষার পরিবেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখ বলেন, "প্রক্টরদের কাজ শুধু বিজ্ঞপ্তিতে সই করা নয়, ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা সবার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখা। কিন্তু এখানে হয় তাঁরা কম সময় পান, নয়তো অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা চাপে কাজ করতে পারেন না। ফলে প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল হয়েছে।"

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাহাত হোসেন ফয়সাল বলেন, "আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটু দূরে থাকি বিধায় মাঝেমধ্যে রাতের বেলায় জরুরী সময়ে আসতে একটু সময় লাগে, তবে তার আগেই ভিতর থেকে যতটুকু পারা যায় ম্যানেজ করে ফেলি। আমার সহকারী প্রক্টরেরা যারা আছেন তাঁরাও যথেষ্ট সক্রিয়। তিনি আরো বলেন, উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করেন এবং তিনি ক্যাম্পাসেই থাকেন বিধায় সাথে সাথে যেকোনো সমস্যা সমাধানে মাঠে নামেন।"

উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম বলেন, "ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রক্টরদের জন্য বাসভবনের প্রয়োজন হয়, যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁরা যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেন। তবে দুঃখজনক যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ব্যবস্থা নেই। তবে তাঁদের বাসভবনের ব্যবস্থা হলে সে সমস্যার সমাধান হবে। তিনি আরও বলেন, সহকারী প্রক্টরেরা তুলনামূলক নবীন হওয়ায় তাঁদেরকে শিক্ষার্থীরা চিহ্নিত করতে পারেন না, কিন্তু তাঁরা সর্বক্ষণ মাঠেই থাকেন।"



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top