মসজিদ মিশন একাডেমির সাবেক শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:৫৭; আপডেট: ১৭ মে ২০২৪ ০৪:৪৩

একাডেমি নিয়ে ষড়যন্ত্র বন্ধের আবেদন জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী মসজিদ মিশন একাডেমির সাবেক শিক্ষার্থীরা রাজশাহী জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে মারুফ জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধির হাতে এই স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। রাজশাহী সেটি মেয়র, সদর আসনের এমপি ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর এর অনুলিপি প্রদান করা হয়।


স্মারকলিপিতে সাবেক শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, সম্পূর্ণ বেসরকারিভাবে পরিচালিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৮ বছরে কোন ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। বরঞ্চ এ সুদীর্ঘ সময়ে প্রতিষ্ঠানটি পাবলিক পরীক্ষাসমূহে ভাল ফলাফল, শিক্ষার সুষ্ঠু মান ধরে রাখা, শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি অন্যান্য সহ-পাঠ্যক্রমিক কর্মকাণ্ড যেমন- ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করানো ইত্যাদির মাধ্যমে নগরীর সকল মানুষের মাঝে একটি আস্থা ও ভালোবাসার জায়গা করে নিয়েছে।

এসব কার্যক্রমের সমাপনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে সম্মানিত জেলা প্রশাসক বা তাঁর প্রতিনিধি, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা অন্য কোনো উর্ধতন কর্মকর্তা, শিক্ষা বিভাগীয় উর্ধতন কর্মকর্তা প্রমুখ সরকারি কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন পর্যায়ে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকেছেন এবং একাডেমীর কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে এসেছেন। কিন্তু ২০১৯ সালে মো: নুরুজ্জামান খান অধ্যক্ষের পদে আসীন হওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা লক্ষ করা যাচ্ছে

। অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান খান প্রতিষ্ঠানটিতে নিজস্ব বলয় তৈরির উদ্দেশ্যে এবং নিয়মবহির্ভূত বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার লক্ষে গত ১২ জানুয়ারি মসজিদ মিশনের জেলা সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তার পছন্দের ব্যক্তিদের নাম দিয়ে প্রস্তাবিত গভর্নিং বডির তালিকা রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে প্রেরণ করেন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড উক্ত কমিটি অনুমোদন করে। পরে জালিয়াতির খবর জানাজানি হলে গত ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ মসজিদ মিশন, রাজশাহী জেলা সভাপতি মু. নুরুল ইসলাম বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগ পত্রে তিনি বোর্ডের অনুমোদনকৃত কমিটি বাতিলসহ অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সচিব আবু হায়াত মো: রহমতুল্লাহকে ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করেন। তিনি গত ৫ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি অধ্যক্ষর জালিয়াতির ঘটনার সত্যতা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি ‘অধ্যক্ষ কোনভাবে প্রলোভিত হয়ে এ ধরনের কাজ করেছেন’ বলেও মন্তব্য করেন। এদিকে জালিয়াতির ঘটনা ধামাচাপা দেয়া ও মানুষের মনোযোগ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান খান সমর্থিত কিছু লোক কাজ করে যাচ্ছে। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে কিছু সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী মহল।

তারা প্রতিষ্ঠানটিকে জামায়াত ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা প্রমাণের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জঙ্গি তৈরি, জামায়াত নেতাদের বই পড়নো, জামায়াতী স্কুল, জাতীয় সংগীত পরিবেশন না করা, অন্য ধর্মের ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি না করানো, প্রতিষ্ঠানের অর্থ জামায়াতের সন্ত্রাসী তৎপরতার পেছনে ব্যয় করা ইত্যাদি নানান ধরনের মিথ্যা ও ভ্রান্ত অভিযোগ এনে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়চ্ছে। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে বলতে পারি যে, আমাদেরকে কখনো কোন ধরনের জঙ্গি বই বা জামায়াত সিলেবাসের কোন বই পড়নো হয়নি।

এ প্রতিষ্ঠানে শুধু জামায়াত পরিবারের সন্তানেরাই লেখাপড় করে না, বরং আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী পরিবারের সন্তানেরাও এখানে ভর্তি হয়। যদি প্রতিষ্ঠানে কথিত ‘জামায়াতি বই’ পড়নো ও জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেয়া হতো তাহলে অন্য রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের এখানে ভর্তি করাতেন না। অন্যান্য যে সকল অভিযোগ ছড়নো হচ্ছে তাও মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

স্মারকলিপিতে বর্তমান অধ্যক্ষকে দ্রুত অপসারণ করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে গঠিত বর্তমান গভর্নিং বডি বিলুপ্ত ঘোষণা করা, স্বাক্ষর জালিয়াতির সাথে অন্য কোন শিক্ষক বা অভিভাবক জতি থাকলে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, মিথ্যা ও ভ্রান্ত তথ্য প্রচারের মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়।

আন্দালীব/4



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top