রাজশাহীতে হু হু করে বাড়ছে পদ্মার পানি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০২৫ ১২:১৫; আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৫ ১৪:৩৯

রাজশাহীতে পদ্মার পানি বেড়েই চলেছে। টানা ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে জুলাই থেকে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। তবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে পদ্মাতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০০ পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। এ ছাড়া পদ্মা নদীর চরও ডুবে গেছে। চর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অনেকে রাজশাহী শহরের দিকে আসছেন।
রোববার সকাল ৬টায় পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ১৩ মিটার। সোমবার সকাল ছয়টায় তা বেড়ে ১৭ দশমিক ৩২ মিটার এবং মঙ্গলবার ১৭ দশমিক ৪৩ মিটার হয়েছে। রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক শূন্য ৫ মিটার।
প্রতিদিন সকাল ৬টা, ৯টা, দুপুর ১২টা, বেলা ৩টা ও সন্ধ্যা ৬টায় পানির উচ্চতা মাপা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক বলেন, আজ সকাল ৬টায় ১৭ দশমিক ৪৩ মিটার পানির উচ্চতা মাপা হয়েছে। বিপৎসীমা ১৮ দশমিক শূন্য ৫ মিটার।
পদ্মার পানি বেড়ে রাজশাহী শহরের তালাইমারী, কাজলা, পঞ্চবটি, পাঠানপাড়া, লালনশাহ মঞ্চ, শ্রীরামপুরসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অনেক বাসিন্দা বাড়ি ছেড়েছেন। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তালাইমারী ও পঞ্চবটি এলাকায়।
রাজশাহীর মিরা খাতুন নামের একজন বলেন, রাত দুইটার দিকে ঘরে পানি আসে। রাত থেকে ঘুম হয়নি। সকাল থেকে জিনিসপত্র সরাচ্ছেন। লাইলি বেগম নামে এক নারী পদ্মার বাঁধের ধারে দুই দিন ধরে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, তাঁর বাড়ি নিচু হওয়ায় দুই দিন আগে বাড়ি ছেড়েছেন। এলাকায় সাপের ভয়ও রয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পানি এবার হয়েছে।
পানি বাড়ার কারণে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ, পবার চরখিদিরপুর ও বাঘার চকরাজাপুর চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পদ্মার দুই পাড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙনও। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চকরাজাপুরে। অনেক বাড়ি ইতোমধ্যে সরিয়ে নিতে হয়েছে। নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে কবরও।
চর খিদিরপুরের বাসিন্দা আবদুল হাকিম বলেন, চর প্রায় ডুবে গেছে। বেশিরভাগ মানুষ ওইপারে চলে গেছে। গবাদিপশুও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। চর থেকে মানুষ নৌকায় মালপত্র নিয়ে চলে যাচ্ছে। কেউ আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে, কেউ ভাড়া বাসায় উঠছে।
বাঘার চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আনোয়ার হোসেন শিকদার বলেন, নদীপাড়ের অনেক ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনদের কবর নদীতে ভেঙে নেমে যাচ্ছে।
চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, প্রতিবছর ভাঙনের কারণে আমার স্কুল তিনবার স্থানান্তর করা হয়েছে। এবারও আতঙ্কে আছি।
রাজশাহীতে পদ্মাপাড়ের জনপ্রিয় বিনোদন স্থান ‘টি-বাঁধ’ এলাকায় পানি বিপৎসীমায় পৌঁছানোয় পানি উন্নয়ন বোর্ড গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। দোকানপাট সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, ভারতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে এবং ফারাক্কার বেশির ভাগ কপাট খোলা থাকায় পদ্মার পানি বেড়েছে। জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য ‘টি-বাঁধ’ এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও টুরিস্ট পুলিশ। অনেকেই দেয়ালের পাশ দিয়ে ঢুকছে, যা আরও কড়াকড়ি করা হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: