পার্কের মূল্যবান গাছ কাটার মহোৎসব !

রাজ টাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:২৬; আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:২৮

শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেনে কেটে নেয়া গাছ

রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানায় নির্বিচারে চলছে গাছ কাটা। বছরখানেকের মধ্যে দফায় দফায় গাছ কাটার ফলে ঐতিহ্যবাহী এ বিনোদন কেন্দ্রটি বিনোদনপ্রেমীদের কাছে গুরুত্ব হারাতে বসেছে। বেশ কয়েকটি স্থান ফাঁকা হয়ে পড়েছে। 

সর্বশেষ ২৩ সেপ্টেম্বর বুধবার থেকে আবারও গাছ কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জাতের বড় বড় মূল্যবান শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। তবে এর জন্য কোনো টেন্ডার দেয়া হয়নি। টেন্ডার ছাড়াই গাছগুলো কাটছেন রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকার রবিন নামের এক ব্যবসায়ী। তিন দিন ধরে নির্বিচারে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ফলে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসা দর্শনার্থী এবং সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

বৃহস্পতিবার সকালে চিড়িয়াখানায় ঢুকতেই চোখে পড়ে এখানে-ওখানে গাছ কাটার দৃশ্য। পড়েছিল কাটা ডালপালা ও গাছের গুঁড়ি। চিড়িয়াখানার ভেতরে কৃত্রিম পাহাড়ের কাছে যেতেই চোখে পড়ে গাছ কাটার মহোৎসব। প্রায় ৩০ জন শ্রমিক করাত দিয়ে বড় বড় গাছ কাটছিলেন। কাটা গাছের গুঁড়ি দ্রুত ট্রলিতে উঠিয়ে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত ছিলেন অন্যরা। কতগুলো গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তার হিসাব রাখার দায়িত্বে ছিলেন মো. ইদুল নামের এক তরুণ। তিনি জানান, রবিন নামের এক ব্যক্তি গাছগুলো কাটার কাজ পেয়েছেন। বুধবার থেকে তারা গাছ কাটছেন। চিড়িয়াখানার ভেতরে তাদের ২০০ গাছ কাটার অনুমতি রয়েছে।

শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা পরিচালনা করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন-রাসিক। অভিযোগ উঠেছে, চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাসিকের কর্মকর্তারা প্রায় আট লাখ টাকায় গাছগুলো বিক্রি করেছেন। টেন্ডার ছাড়াই পানির দরে বিক্রি করা এসব গাছের টাকা সংশ্লিষ্টরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানার এ জায়গাটি ব্রিটিশ আমলে ছিল ঘোড়দৌড়ের মাঠ। ঘোড়ার রেস ও টমটম বন্ধ হওয়ার পর এই রেসকোর্স ময়দান দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল। শহরবাসীর বিনোদনের আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তৎকালীন মন্ত্রী শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান এখানে কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ১৯৭২ সালে এর কার্যক্রম শুরু হয়।

উদ্যানে মূল্যবান গাছের চারা রোপণ, ফুল গাছের কোয়ারি ও কুঞ্জ তৈরি, লেক ও পুকুর খনন, কৃত্রিম পাহাড় তৈরি অর্থাৎ সামগ্রিক কাজ ১৯৭৪ সালে শুরু হয়। তখন এ উদ্যানে কিছু দুষ্প্রাপ্য বৃক্ষরোপণ করা হয়েছিল। সাম্প্রতিককালে সেসব গাছের বেশকিছু কাটা পড়েছে নভোথিয়েটার নির্মাণের জায়গা করে দিতে। এখন আবার বোটানিক্যাল গার্ডেনের উন্নয়নমূলক কাজের নামে শতাধিক গাছ কাটা হচ্ছে টেন্ডার ছাড়াই।

জানতে চাইলে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা পরিচালনা কমিটির সভাপতি রাসিকের সাত নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি বলেন, পার্কের ভেতর কিছু প্রবেশ করতে কিংবা বের করতে হলে আমাকে জানাতে হবে। কিন্তু গাছ কাটার বিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।

গাছ কাটার বিষয়ে ব্যবসায়ী রবিনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম কী এবং কত টাকায় তিনি গাছগুলো কিনেছেন তা জানাতে চাননি। এ বিষয়ে তিনি কোনো কথাও বলতে চাননি। তিনি গাছগুলো টেন্ডার নিয়েছেন কিনা- এ ব্যাপারে জানার জন্য তিনি রাসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তথ্য সূত্র: যুগান্তর।

চিড়িয়াখানার উদ্ভিদ তত্ত্ববিদ হেলেন খাতুন বলেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনে সাধারণত সব বিরল প্রজাতির গাছ থাকে। এত সাধারণ গাছ থাকার তো দরকার নেই। সে জন্য গাছগুলো কাটা হচ্ছে। সেখানে বিরল প্রজাতির গাছ লাগানো হবে। তবে টেন্ডার হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে রাসিকের কর্মকর্তারা বলতে পারবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। যোগাযোগ করা হলে চিড়িয়াখানা দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন, গাছের ডালপালা কাটার জন্য বলা হয়েছে। গাছ তো কাটতে বলা হয়নি। আর এর জন্য কোনো টেন্ডারও হয়েছে কিনা তাও আমার জানা নেই। তাজা গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আলমগীর কবির বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি জানাবেন। কিন্তু পরে তিনি আর কিছু জানাননি। তার মোবাইল ফোনে দু’বার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

আন্দালীব



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top