ধ্বসে পড়ছে কাঁচা ঘর-বাড়ি

রাজশাহী অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৪ অক্টোবর ২০২০ ০০:১৬; আপডেট: ৪ অক্টোবর ২০২০ ০০:৫৮

বাগমারা উপজেলায় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত বাড়িঘর-ছবি বাগমারা প্রতিনিধি

রাজশাহী অঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটচে। ধ্বসে পড়ছে কাঁচা ঘর-বাড়ি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বিভিন্ন উপজেলার লাখো মানুষ। তলিয়ে বিভিন্ন ফসলী জমি। যার প্রভাব পড়েছে রাজশাহীর কাঁচা বাজারে। আগের চেয়ে বিভিন্ন সবজির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
রাজশাহী জেলার বাগমারা, তানোর, মোহনপুর, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে রয়েছে। তানোর উপজেলায় পানির নিচে তলিয়ে গেছে রোপা-আমন ধান। ডুবে যাচ্ছে বিল কুমারী বিল। পাড়ের কাঁচা বাড়িঘর ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। স্থানীয়রা জানায়, বিল কুমারী বিলসহ বিলের ধারের তালন্দ, কামারগাঁ, দমদমা, গোকুল, ধানতৈড়, কান্টা পুকুর, গুবিরপাড়ার পূর্ব দিকের জমি কুঠি পাড়ার নিচের জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া আমশো, জিওল, ভন্দ্রখন্ড, বুরুজ এলাকাসহ নিম্ন এলাকায় রোপন করা কয়েক হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান পানির নিচে। এখানকার নিম্ন এলাকায় রোপন করা কয়েকশ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। অপরদিকে কুঠিপাড়া, শীতলীপাড়া ও ড্রেন পাড়াসহ নিম্ন এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ঘর-বাড়িতে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে অর্ধশত পরিবার।
দুর্গাপুরে অপরিকল্পিত পুকুর খননের ফলে টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে দুর্গাপুরের ঝাঁলুকা গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার। স্থানীয়রা জানান, এ বছরে এই এলাকায় অসংখ্য কৃষি জমি নষ্ট করে অপরিকল্পিত পুকুর খনন করা হয়েছে। যার কারণে বিভিন্ন ডোবা-নালার ও ব্রীজ কালর্ভাটের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণে প্রবল জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ঝাঁলুকা গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই এখন পানি জমে আছে। সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে ঘরের মেঝে ও বারান্দা পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। পানির মধ্যে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এলাকাবাসী।
মোহনপুর উপজেলায় মোহনপুরে বৃষ্টির পানিতে ধ্বসে পড়ে মাটির ঘর। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির পানিতে মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের মহিষকুন্ডি গ্রামের চারটি মাটির বাড়ি ধ্বসে পড়ে। এতে মানুষের ক্ষতি না হলেও ঘরের আসবাবপত্রের ক্ষতি হয়।
পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের বারনই নদী পাড়ের বাড়িঘরে ও মাঠে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এতে মাঠের আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। ভেঙে পড়ছে কাঁচা ঘরবাড়ি। ওই এলাকার মানুষজন আতঙ্কে মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।
বাগমারা উপজেলায় দ্রুতগতিতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার গোবিন্দপাড়া, নরদাশ, বাসুপাড়া, মাড়িয়া, হামিরকুৎসা ও যোগীপাড়া ইউনিয়নের আরও প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম নতুনভাবে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এনিয়ে এ পর্যন্ত একটি পৌরসভাসহ মোট ১১টি ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। উপজেলায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার শতশত পরিবার। ডুবে গেছে বিভিন্ন সড়ক। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আরও বিভিন্ন গ্রাম নতুন ভাবে বন্যা কবলিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে ওই সব গ্রামের লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য মতে, চলতি মওসুমে দু’দফা বন্যায় বাগমারার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় কৃষি খাতে প্রায় ৩১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সম্পন্ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৩ হাজার ৭শ ৫৫ হেক্টর ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২৬ হাজার ১শ দুই হেক্টর জমির রোপা ও আউশ ধান, ৩ হাজার ৯শ ৩৯ হেক্টর জমির সবজি এবং ৩৫ হেক্টর জমির পানবরজ সম্পন্নরুপে ও ১শ ২০ হেক্টর জমির পানবরজ আংশিক রুপে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ফসলেরও সম্পন্ন ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

আন্দালীব



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top