বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যেই রামপুরায় বাসে আগুন দেওয়া হয়

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:০৩; আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৪৮

ফাইল ছবি

দেশজুড়ে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরির লক্ষ্যে গত ২৯ নভেম্বর রাতে রাজধানীর রামপুরায় বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটায় একটি চক্র।

এই অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে জড়িত চারজনকে মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ঘটনার অন্যতম হোতা মনির হোসেন (৫৪), মো. হৃদয় হাসান পারভেজ (১৯), মো. আলাউদ্দিন সিফাত (২৫) ও মো. নাঈম হাসান মীর (২৪)।

বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর কাওরান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৯ নভেম্বর রামপুরায় বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়।

এনএসআই সহিংসতার পেছনের কারণ উৎঘাটনে নিবিড়ভাবে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে। মাঠ পর্যায়ে তদন্ত, বিভিন্ন ফুটেজ বিশ্লেষণে ও তথ্য প্রযুক্তির বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের শনাক্ত করতে সক্ষম গোয়েন্দারা। পরবর্তীতে র‌্যাব ও এনএসআই যৌথ অভিযান পরিচালনা তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা র‍্যাবকে জানায়, মনিরের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় রামপুরায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। রামপুরার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো দেশব্যাপী একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পরিকল্পনা ছিল তাদের। তারা জানতে পারে গাজীপুরে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে রামপুরায় সম্ভাব্য উত্তেজনা সৃষ্টির আশংকা রয়েছে। ওই ঘটনাকে ব্যবহার করে তারা রামপুরার বিটিভি ভবন এলাকায় সম্ভাব্য নাশকতা ও অগ্নিসংযোগের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

তিনি আরও বলেন, গাজীপুর চৌরাস্তার ঘটনা সম্পর্কে গত ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাসচাপায় নিহত মাঈনউদ্দিনের ভগ্নিপতি সাদ্দাম ও তার বন্ধুর সঙ্গে ঘাতক অনাবিল বাসে ওঠা নিয়ে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এর সূত্র ধরে সাদ্দাম ও তার বন্ধু অন্য একটি বাসযোগে গাজীপুর থেকে রামপুরায় রওনা দেয়।

পথিমধ্যে সাদ্দাম ও তার বন্ধু রামপুরা এলাকায় তাদের নিকট আত্মীয় ও বন্ধুদের বাসটিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য জড়ো হতে বলে। এরই ধারাবাহিকতায় বাসচাপায় নিহত মাঈনউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন রামপুরায় জড়ো হয়। সুযোগের অপব্যবহার করার লক্ষ্যে সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যসহ নাশকতা ও অগ্নিসংযোগের পরিকল্পনা করে।

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবদে র‍্যাবকে আরও জানায়, গ্রেফতার মনির নাশকতা সংগঠনের জন্য আলাউদ্দিন ও নাঈমসহ আর ৪/৫ জনকে নির্দেশনা দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী আলাউদ্দিন ও হৃদয়সহ আরও ৩/৪ জনকে বোতলে ভর্তি অকটেন সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

গ্রেফতার নাঈম অগ্নিসংযোগকারী দল, সন্ত্রাসী ও হামলাকারী দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে। ঘটনার সংগঠনে চক্রের বিশ্বস্ত ১৫ থেকে ২০ জনকে অগ্নিসংযোগ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। গ্রেফতাররা সুপরিকল্পিতভাবে গাজীপুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রামপুরায় ঘটতে যাওয়া সম্ভাব্য ঘটনাকে ব্যবহার করে নাশকতার পরিকল্পনা করে। মূলত এই চক্রটি চলমান শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ ভাড়া’ ইস্যু অপব্যবহারের উদ্দেশ্যে নাশকতার জন্য প্রস্তুত ছিল।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতাররা পরিকল্পনা অনুযায়ী রামপুরায় বিটিভি ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। তারা সাদ্দামের গাজীপুর থেকে রামপুরায় পৌঁছানোর বিষয়টি জানতে পারে। এর মধ্যে তারা বাসের নাম জেনে নেয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নাশকতাকারীর সহযোগীরা অবস্থান নিয়ে বাসটি আসার আগাম তথ্য দেয়।

বাসটি রামপুরার বিটিভি ভবনের সামনের এলাকা অতিক্রমকালে তারা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এর ফলে অনাবিল বাসের চালক ও হেলপার সম্ভাব্য হামলা আঁচ করতে পেরে বেপরোয়া গতিতে রামপুরা ত্যাগ করতে যায়। বাসটি ৪০০ থেকে ৫০০ মিটার অতিক্রম করার পর সাদ্দাম ও তার শ্যালক বাসটি পলাশবাগে থামাতে চেষ্টা করে।

একপর্যায়ের সাদ্দামের শ্যালক নিহত মাঈনউদ্দিন বাসে জোরপূর্বক উঠতে গেলে বাসের হেলপার তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এমন সময় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মাঈনউদ্দিন মৃত্যুবরণ করে। তখন সুযোগ সন্ধানীরা শিক্ষার্থী নিহত বলে প্রচারণা করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে উত্তেজনা ছড়ায়।

একইসঙ্গে তারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাস্তায় চলমান বাস ও অন্যান্য যানবাহনে অকটেন ঢেলে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনার অন্যতম হোতা মনির হোসেন একটি রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ডের সভাপতি। মূলত তারই নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কোনো আর্থিক লেনদেন ছিল না। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে ফায়দা নেওয়া।

 




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top