স্যাংশন আসলে ক্রেতারা পোশাক নেবে না, এলসি খোলা যাবে না: বিজিএমইএ সভাপতি

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:৩৪; আপডেট: ১৫ মে ২০২৪ ১৪:১৯

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।

সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বারা বাংলাদেশের ওপর সম্ভাব্য বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্যের বৈশ্বিক ক্রেতারা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের ক্রয় আদেশে নতুন শর্ত যুক্ত করেছেন। খবর টিবিএস বাংলার। 

শিল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শর্তে তারা বলেছেন, এ ধরনের সম্ভাব্য কোনো নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়িত হলে তারা পণ্য বা অর্থপ্রদানের দায়ভার গ্রহণ করবেন না।

এই শর্ত বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য একটি নেতিবাচক ধাক্কা; যা স্থানীয় রপ্তানিকারকদের অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, "একজন বায়ার (ক্রেতা) ইতোমধ্যেই তাদের নতুন এলসি (লেটার অফ ক্রেডিট)-তে এমন একটি ধারা যুক্ত করেছে যে, বাংলাদেশ যদি কোনো নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়, তাহলে তারা পণ্য নেবে না; বা যদি পণ্য চালানের পরে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়িত হয়, তবে তারা ওই পণ্যের জন্য পেমেন্ট করতে সক্ষম হবে না।"

চট্টগ্রামে বিজিএমইএর কার্যালয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পোশাক উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যেই কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন এবং ক্রেতাদের থেকে উদ্ভূত সর্বশেষ এই শর্ত তাদেরকে আরও শঙ্কিত করে তুলেছে।

'গুরুতর সমস্যা'

বিশ্বব্যাপী পোশাক ব্যবসা যখন ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় রয়েছে ঠিক তখনই এই সমস্যা হাজির হয়েছে উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, "এটি পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। এখন ব্যাংকগুলো এ ধরনের মাস্টার এলসি বা রপ্তানি আদেশের বিরুদ্ধে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খুলতে ইচ্ছুক নাও হতে পারে।"

গত ব্ল্যাক ফ্রাইডে, থ্যাংকসগিভিং এবং সাইবার মানডেতে যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা বিক্রি বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সময়ে পোশাক পণ্যের বিক্রিতে একটি বড় উল্লম্ফন দেখা গিয়েছিল।

ফারুক আরও বলেন, পোশাক রপ্তানিকারকরা যদি আগামী ছয় মাস টিকে থাকতে পারেন, তাহলে সামনের দিনে তারা আরও শক্তি নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

বাংলাদেশ সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং অ্যান্ড বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিজিএমইএ।

বন্দর পরিষেবার গুণমান উন্নয়ন নিয়ে ডাকা বৈঠকটিতে সম্ভাব্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বেশি।

বাজার পুনরুদ্ধারের এই সময়ে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সব স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতা চেয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এ মান্নান কচি ও প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে ইউরোপের বাজারেও নামতে পারে ধস

সম্প্রতি টিবিএসের সঙ্গে আলাপকালে ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের এক প্রতিনিধি সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ ব্যবসার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে; এরফলে দোকানে মালামাল কমে যেতে পারে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে চীন ও রাশিয়া বাদে ইউরোপের দেশগুলোসহ বেশিরভাগ দেশই তা অনুসরণ করতে পারে।

তিনি বলেন, "সাশ্রয়ী মূল্যে বাংলাদেশের পোশাকের ক্রেতা থাকতে পারে; তবে যাদের ক্রয়ক্ষমতা ভালো তারা অন্য দেশে বিকল্প খুঁজবে। যদি কোনো ক্রেতা অন্য কোথাও বিকল্প খুঁজে পান, তাহলে আগের দেশে ফিরতে তার কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।"

মানবাধিকার গোষ্ঠী, পশ্চিমা সরকারদের চাপ

বিশ্বব্যাপী অধিকার গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান ও সরকার থেকে বাংলাদেশের ওপর চাপ বেড়েছে। দেশে 'যারা হুমকি দেয়, ভয় দেখায়; যারা ইউনিয়ন নেতা, শ্রমিক অধিকার রক্ষাকারী এবং শ্রমিক সংগঠনকে আক্রমণ করে' তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের এই সতর্কবার্তা উদ্বেগজনক।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশি পোশাক কর্মী কল্পনা আকতারের নাম উল্লেখ করে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার রক্ষাকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

শ্রম অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে এমন সব দেশ ও ব্যবসায়ের ওপর গত ১৬ নভেম্বর নতুন সতর্কতা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের এক-পঞ্চমাংশ রপ্তানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, যার আর্থিক মূল্য ৪৭ বিলিয়ন ডলার। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রভাব রয়েছে।

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে শ্রম ও মানবাধিকার নিয়ে একই ধরনের উদ্বেগ দেখানো হয়েছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ৫০ ভাগই হয়েছে ইইউ এবং যুক্তরাজ্যে।

এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় ২০২৪ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ১.৩০ শতাংশ। এ বছরের নভেম্বরে মোট রপ্তানি হয়েছে ৪.৭৮ বিলিয়ন ডলারের, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের ৫.০৯ বিলিয়নের চেয়ে ৬.০৫ শতাংশ কম।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top