দাম বেড়েছে অধিকাংশ পণ্যের, বিপাকে সাধারণ মানুষ

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ৭ জুন ২০২৪ ১২:২২; আপডেট: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৩

ছবি: সংগৃহীত

সপ্তাহ ব্যবধানে ফের অস্থির হয়ে উঠেছে রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার। দাম বেড়ে গেছে মাছ-মাংস ও শাক-সবজিসহ প্রায় প্রতিটি পণ্যের। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা।

শুক্রবার (৭ জুন) সাপ্তাহিক এ ছুটির দিনে এমন চিত্র দেখা যায় কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর এবং রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ানবাজারসহ বেশকটি বাজার ঘুরে। কোরবানির ঈদের বাকি এক সপ্তাহের কিছু বেশি সময়। রোজার ঈদের আগে যেভাবে পণ্যের দাম বেড়েছিল, বর্তমানেও ঠিক একই পরিস্থিতি বাজারে।

ক্রেতাদের দাবি, প্রতিদিনই বাড়ছে কোনো না কোনো পণ্যের দাম। এর বিপরীতে কিছুই কমছে না, আর কমলেও খুবই নগণ্য। এতে সংসার চালানোই দায়!

রাশেদুল ইসলাম নামে বেসরকারি এক চাকরিজীবী বলেন, এমনিতেই পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। প্রতিদিনই বাড়ছে পণ্যের দাম। তার ওপর গতকাল (বৃহস্পতিবার) ঘোষণা করা হয়েছে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর আরও সুযোগ পেয়েছেন। আরেক ক্রেতা নয়ন বলেন, কোরবানি আসছে। এ সুযোগে মসলাসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ানোর যেন উৎসবে মেতে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা।

বাজারে দারুচিনি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা, জিরা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, এলাচ প্রকারভেদে ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা, গোলমরিচ ৮৮০ থেকে ৯০০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ থেকে ১৬৫০ টাকা, তেজপাতা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শুকনো মরিচ মানভেদে ৩৮০ থেকে ৪৩০ টাকা, আলুবোখারা ৯৯০ টাকা, কাজুবাদাম ১২৫০ থেকে ১৩০০ টাকা ও ধনিয়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম বাড়ার ফলে আমদানি কমায় মসলার দাম বেড়েছে পাইকারি বাজারগুলোতে। ফলে দাম বাড়ছে খুচরা বাজারেও। আমদানি না বাড়লে ঈদে দাম আরও বাড়তে পারে।

কারওয়ানবাজারের পাইকারি বিক্রেতা রাকিব জানান, ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি পর্যায়ে খরচ বেড়ে গেছে। যে কারণে সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে। অবশ্য বাজেটের কোনো প্রভাব এখনও পড়েনি।

এছাড়া, কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। আর কেজিতে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন ২৩০-২৪০ টাকা, আর আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। এছাড়া কেজিতে ২০-৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে আদা বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়।

এদিকে, সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে শাক-সবজির দাম। বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৬০-৮০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, পেঁপে ৫০-৬০ টাকা, টমেটো ৪০-৫০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৪০-৫০ টাকা, কহি ৪০ টাকা, ধুন্দল ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, লতি ৬০-৮০ টাকা, আলু ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা ও কাঁকরোল ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া, প্রতি পিস লাউ ৫০ টাকা ও চালকুমড়া ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি আঁটি লালশাক ১৫ টাকা, পাটশাক ১০ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, কলমিশাক ১৫ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। তবে দাম কমেছে কাঁচা মরিচের। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০ টাকা। আর পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা।

রাজধানীর কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, কাঁচা মরিচের দাম কমলেও, বেড়েছে অন্যান্য সবজির। মূলত সরবরাহ কমায় দাম বাড়ছে।

স্বস্তির খবর নেই ডিম ও মাংসের বাজারেও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা ও কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত কমে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৪০ টাকায়। প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৭০০-৭৫০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৪০-৩৫০ টাকায়। এছাড়া, জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়।

বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০-৮০০ টাকায়। তবে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।

দাম কমেনি ডিমেরও। মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, আর সাদা ডিম ১৪৫ টাকায়, আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২০০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়।

এদিকে, ইলিশ বাদে স্বস্তির খবর নেই মাছের বাজারে। প্রায় সব ধরনের মাছে কেজিতে দাম বেড়েছে ২০-৫০ টাকার মতো। বিক্রেতাদের অজুহাত, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে।

বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০-২৩০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০-২৪০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৬৫০ টাকা ও চাষের কৈ বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়। এছাড়া আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, কোরাল ৭০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ও আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে ইলিশের দাম। এ মুহূর্তে প্রতি কেজি ইলিশের দাম পড়ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা। যদিও ৮০০-৯০০ গ্রাম ইলিশ ১৪০০ টাকা ও ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকায়।

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়। আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top