রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে অস্থিরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৩৭; আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ২০:১১

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), দেশের কৃষি অর্থনীতিতে যা গুরুত্বর্পূণ স্তম্ভ, বর্তমানে তা এক গভীর সংকটের মুখে। গত ১৫ বছরে দেশের আর্থিক খাতে ব্যাংকগুলো নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়েছে। পলাতক ফ্যাসিস্ট সরকারের ভূয়া উন্নয়নের কারিগর এবং লুটেরাদের অন্যতম ফ্যাসিস্ট দোসররা এখনও সক্রিয় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে। ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রন এখনও একটি ফ্যাসিস্ট চক্রের হাতে। বদলি,পদন্নেতিসহ নানা অনিয়মের বেড়াজালে স্থবির ব্যাংকটিকে চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

বিতর্কিত ও আদালতের আদেশ অমান্যকারী সাজাপ্রাপ্ত মামলার আসামি হয়েই নিয়োগপ্রাপ্ত এমডি ওয়াাহিদা বেগম-এর অনিয়মতান্ত্রিক শাসন। রাকাবের বর্তমান মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তাজউদ্দীন আহমদ তার বড় সহযোগী। রূপালী ব্যাংক পিএলসি-র সাবেক এই কর্মকর্তা ছিলেন এবং নিষিদ্ধ বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা পদে 'স্বৈরাচারী নেতা' হিসেবে পরিচিত তাজউদ্দীন আহমদ কর্মীবান্ধব ব্যাংকিং পরিবেশকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে রাকাবের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করছেন। তার বিরুদ্ধে বিশেষ মতাদর্শের সমর্থক নিয়োগ, অবৈধ পদোন্নতি, এবং বড় অঙ্কের ঋণ প্রদানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তার প্রত্যক্ষ মদদে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা মেধা ও যোগ্যতার পরিবর্তে আওয়ামি স্বৈরাচারের রাজনৈতিক আনুগত্যকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

স্বৈরচারী উর্ধ্বতনদের এই সফল কর্মকান্ডের পিছনে গুপ্ত সহচর হিসেবে কাজ করছে ব্যাংকেরই কিছু সুবিধাবাদী ও মধ্যস্বত্তভোগী ফ্যাসিস্ট ডিজিএম ও এজিএম। জানা যায় রূপালী ব্যাংকে ঋণ প্রদানে অনিয় ও দুর্নীতি করায় দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকার মামলা করেছে। এই অভিযোগের বিষয়ে তাজউদ্দীন আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে ওয়াহিদা বেগমসহ অগ্রণী ব্যাংকের আরও ৪ কর্মকর্তাকে আদেশ অমান্য করার দায়ে তিন মাসের কারাদন্ড দেন। রাজধানীর দিলকুশাস্থ মুন টাওয়ারকে কেন্দ্র করে একটি ঋণ সংক্রান্ত মামলায় এ রায় হয়। হাইকোর্টের এই রায়ের পরও তার মতো একজন বিতর্কিত কর্মকর্তা কীভাবে আবার এমডি হিসেবে দায়িত্ব পেলেন, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। অভিযোগ রয়েছে, ওয়াহিদা বেগম অগ্রণী ব্যাংকে কর্মরত থাকা অবস্থায় ঘুষ দিয়ে পদোন্নতি এবং বদলি বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন। ২০ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে উচ্চ আদালতে ওয়াহিদা বেগমের রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যংকে এমডি পদে নিয়োগে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন এক আইনজীবি, তারা প্রেক্ষিত সম্প্রতি রুল জারি হয়েছে।

ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের এক প্রমোশনে তিনি প্রায় ৪০ জন কর্মকর্তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায় করেন। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে কর্পোরেট গ্যারান্টি ছাড়া ঋণ অনুমোদন, সিন্ডিকেট চালানো, এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ ও প্রমোশন বাণিজ্য চালানোর অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া ওয়াহিদা বেগম শেখ ফজলে নূর তাপসের ঘনিষ্ট ছিলেন বলে জানা যায়। এসব বিষয়ে দুদকে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে বলেও জানা গেছে। চলতি বছরের ৯ মার্চ ওয়াহিদা বেগম রাকাবের এমডি হিসেবে যোগদান করেন। তিনি আগের সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির ধারা আবারো সক্রিয় করছেন। রাজশাহীর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, "একজন দন্ডপ্রাপ্ত, বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার এভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরে আসা শুধু অর্থনৈতিক নয়, প্রশাসনিকভাবেও ঝুঁকিপূর্ণ।" যে কর্মকর্তা হাইকোর্টে দন্ডিত হয়েছেন, যিনি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত, তাকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে রাখা যায় না। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের আদেশ, প্রশাসনের নৈতিকতা এবং ব্যাংকিং খাতের জবাবদিহিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে রাকাবের এমডি ওয়াহিদা বেগম বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেই সাজার রায় হয়েছিলো তা স্থগিত আছে, এছাড়া মামলা আমার ব্যাক্তিগত কোন বিষয়ে না, ঋন খেলাপিদের রোষানলে পড়ে এই মামলার আসামি হতে হয়েছে।



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top