ডেঙ্গু রোগীর চাপে চিকিৎসক ও নার্সরা দিশেহারা

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ৩০ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৩৬; আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৩৭

ছবি: সংগৃহীত

দেশে অপ্রতিরোধ্য ডেঙ্গু। যেন কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু। গাণিতিক হারে বেড়ে চলা রোগটির ঊর্ধ্বমুখী ধারায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ২২৯১ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একদিনের ব্যবধানে এবার ডেঙ্গু কেড়ে নিল ১৩ জনের জীবন। খবর ইত্তেফাকের। 

ঢাকার চেয়ে বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিনই। কিন্তু মৃত্যুর হার ঢাকায় বেশি। রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার-নার্স ও কর্মচারীরা। তার উপর প্রতিদিনই ঢাকার বাইরে থেকে ডেঙ্গু রোগী আসছে। রোগীর এই বাড়তি চাপে রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর ডাক্তার-নার্সরা এখন দিশেহারা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও মশা মারার দৃশ্যত কার্যকর কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। অথচ ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা সেবায় যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে তার তিন ভাগের এক ভাগ টাকা খরচ করে মশা মারার মাধ্যমে সারা বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

দেশে বর্তমানে সরকারি হাসপাতালে ৪৬ হাজার চিকিৎসক রয়েছেন। এর বিপরীতে নার্স প্রয়োজন প্রায় দেড় লক্ষাধিক। কিন্তু নার্স আছে মাত্র ৫৮ হাজার। বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, ডাক্তাররা শুধুমাত্র ব্যবস্থাপত্র দেন। রোগী গ্রহণ থেকে শুরু করে ছাড়পত্র প্রদান পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন নার্সরা। এমনিতেই দেশে ডাক্তার-নার্স সংকট। অন্যান্য রোগীদেরই হাসপাতালে জায়গা নেই।

তার উপর প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলেন, আমরা আর ডেঙ্গু রোগী চাই না। মশা মারার ব্যবস্থা করুন। মশা নিধন করলে ডেঙ্গু রোগীও হবে না। কিন্তু দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা মুখে বড় বড় কথা বলছেন। মশা মারার কাজের কাজ কিছুই করছেন না। ডাক্তাররা অযাচিত কথা বলার জন্য তাদের উপর বিরক্তি প্রকাশ করেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, মিডফোর্ট হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতালের কোথাও নতুন রোগী ভর্তি জায়গা নেই।

এসব হাসপাতালের কর্তৃপক্ষরা বলেন, কোন বেড খালি নেই, মেঝেতে, বারান্দায় ও সিঁড়ির নিচে বেড বসানোর আর জায়গা নেই। মশা মারলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু এই সহজ কাজটা কঠিন করা হচ্ছে। এর ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের। কিন্তু কোন কাজে আসছে না। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও সিট খালি নেই।

আবার অনেকে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন দালালের খপ্পরে পড়ে। অনেক রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন নেই, কিন্তু তাকে আইসিইউতে ঢুকিয়ে রেখে রোগীর কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রোগীরা সর্বশান্ত হচ্ছেন। প্রতিদিনই রোগীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার গড়ে উঠেছে শক্তিশালী দালাল চক্র। এর সঙ্গে এক শ্রেণীর ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীরা জড়িত। তারা চিকিৎসার নামে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে রোগীদের বিভ্রান্ত করে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে প্রতারণা করছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এমিরেটস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, মশা মারার কোন বিকল্প নেই। মশা মারলে রোগী থাকবে না। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আসলে ডেঙ্গুও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আর মশা হলো একটি চিহ্নিত শত্রু। এটা মারা কোন কঠিন কাজ নয়। কিন্তু এক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তার তিন ভাগের এক ভাগ অর্থ ব্যয় করলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক বলেন, মশা মারলে ডেঙ্গু থাকবে না-এটাই স্বাভাবিক। ইতিমধ্যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। মশা মেরে এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি বলেন, রোগ প্রতিকার হলো সর্বোত্রম ব্যবস্থা। হাম সহ অনেক রোগ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে টিকা প্রদানের মাধ্যমে। ডেঙ্গুর প্রতিকার হলো মশা মারা। মশা নিধনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে সম্মিলিত উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top