১ হাজার ৯০ টাকা ইলিশ কলকাতায় ২ হাজার রুপি

রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৯; আপডেট: ৯ মে ২০২৫ ১৩:০৩

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে প্রতি কেজি ১০ ডলারে (ভারতীয় মুদ্রায় ৮২০ রুপি আর বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ৯০ টাকা) ইলিশ আমদানি করেছেন ভারতীয় মাছ ব্যবসায়ীরা। তবে ভারতে আসার পর প্রথমদিনের পাইকারি বাজারেই ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১ হাজার ৭০০ রুপিতে। যা আমদানি মূল্যে প্রায় দ্বিগুণ।

তবে পাইকারি বাজার থেকে এই মাছ সাধারণ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০ রুপি পর্যন্ত (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা)। যা গতবারের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। দাম বেশি হওয়ায় পদ্মার ইলিশের প্রথম চালান কার্যত বাজারে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল বলেই দাবি সংশ্লিষ্টদের।

সীমান্ত পেরিয়ে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো দুর্গা পুজোর উপহার পদ্মার ইলিশের প্রথম চালান।

প্রথম দিনের সেই চালান হাওড়া বাজার হয়ে এখন রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে হাওড়া বাজারে ডাকের মধ্যদিয়ে ইলিশ মাছ বিক্রি শুরু হয়। তবে গতবারের চেয়ে এবার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পদ্মার ইলিশ। তাই প্রথমদিন প্রায় ক্রেতাশূন্য ছিল হাওড়া বাজার।

অন্য বছরের মতো এবার হাওড়া বাজারে পদ্মার ইলিশ নিয়ে তেমন কৌতুহল দেখা যায়নি। পাইকারি মাছ ক্রেতার চেয়ে পদ্মার ইলিশ দেখতে বাজারে দোকানের সামনে ভিড় করেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার তুলেছেন সেলফিও।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসেব অনুযায়ী, প্রথমদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ১২টি ট্রাকে করে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে ৭০ মেট্রিক টন ইলিশ। মূলত বরিশাল জেলার বিভিন্ন নদীতে ধরাপড়া এই ইলিশের ওজন ১ কেজির বেশি। দেখতেও রুপোর মতো চকচক করছে।

শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে ডাকের মধ্যদিয়ে বিক্রি শুরু হয় বাংলাদেশি ইলিশ। পাইকারি হিসাবে সর্বোচ্চ দাম ওঠে ১৭০০ রুপি কেজি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার নির্ধারিত সময়ের অনেকটা দেরিতে ‘বাংলাদেশের উপহার ইলিশ’ পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে। এছাড়াও কাগজে কলমে ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশের কথা বলা হলেও ১১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেধে দেয়ায় এবার মাছও কম আমদানি হবে। ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকারের সম্প্রতি দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রথম প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বাংলাদেশের ৭৯ জন রফতানিকারক আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে কলকাতায় ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি করতে পারবেন।

আর দ্বিতীয় আরেকটি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ইলিশ প্রজননের জন্য আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরা, বিক্রি ও পরিবহন বা সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।

সরকারি এই নির্দেশনার কোনটা কে কিভাবে মানবেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আবার সীমান্তে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলে মাছ রফতানি করতে দেবে না বাংলাদেশর কাস্টমস কতৃপক্ষ।

তাই সংশ্লিষ্টর মাছ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করছে, ১১ অক্টোবর পর্যন্ত তারা ইলিশ পাঠাতে পারবে কলকাতায়। আর ওই সময় পর্যন্ত গড়ে রোজ ৭০ টন করে ইলিশ পাঠানো হলে ১ হাজার ৪০০ টনের বেশি ইলিশ রফতানি সম্ভব নয়।

ফলে বাংলাদেশের ৭৯টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ও কলকাতায় ইলিশ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও সার্বিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে বলে দাবি করছেন বাণিজ্য বিশ্লেষকরা।

ভারতে ইলিশ আমদানিকারক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ জানান, গত বছরও একইভাবে রফতানির অনুমোদন হয়েছিল ২ হাজার ৯০০ টন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতের আমদানি হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩০০ টন। সেবারও একইরকমভাবে সময়ের ফাঁদে পড়ে গিয়েছিল ইলিশ রফতানি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশের সরকার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখবেন।

২০১২ সাল থেকে স্থানীয় বাজারে যোগান ঠিক রাখতে ইলিশ রফতানি বন্ধ করে বাংলাদেশ সরকার। যদিও ২০১৯ সাল থেকে দুর্গা পুজোয় বিশেষ উপহার হিসাবে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর নিয়ম করে শর্ত সাপেক্ষে পদ্মার ইলিশ রফতানির অনুমোদন দিয়ে আসছে।

একইভাবে গত বছরও ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেয়া হয়। তবে ২ হাজার ৯০০ মেট্রিক টনের অনুমোদন থাকলেও সময় কম পাওয়ার কারণে ইলিশ ঢোকে মাত্র ১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন।



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top