ইসলামকে মুছে ফেলতে চাইছে চীন: অ্যামনেস্টি

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২১ ১৫:৪৯; আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০১:১০

চীনে উইগুরদের শিবির।

চীনের উইগুর মুসলিমদের নিয়ে নতুন ১৬০ পাতার রিপোর্ট প্রকাশ করল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। রিপোর্টের শিরোনাম, 'আমরা যেন যুদ্ধে শত্রুপক্ষ'।

অ্যামনেস্টির সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''চীন মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ করেছে, তা তথ্য সহ রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে।'' তিনি বলেছেন, ''অন্য দেশগুলি যেন সাহসী হয়ে উপাায় ঠিক করে এবং চীনকে এই কাজ বন্ধ করতে বাধ্য করে।''

অ্যাগনেস বলেছেন, ''আমরা যে তথ্যপ্রমাণ দিয়েছি, তারপর দেশগুলির পক্ষে চুপ করে থাকা মুশকিল।''

অ্যামেরিকা ইতিমধ্যেই উইগুরদের প্রতি চীনের নীতিকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে। চীন অবশ্য উইগুরদের বিরুদ্ধে কোনোরকম অত্যাচারের কথা অস্বীকার করে। তাদের অভিযোগ, চীনের ঘরোয়া বিষয়ে বাইরের দেশগুলি হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে।

রিপোর্টে কী বলা হয়েছে

অ্যামনেস্টি ২০১৯-এর অক্টোবর থেকে ২০২১-এর মে পর্যন্ত গবেষণা করেছে। তারা ১২৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তার মধ্যে ৫৫ জন চীনের উইগুর শিবিরে ছিলেন। আর ৬৮ জন সেই সব পরিবারের সদস্য, যে পরিবার থেকে কেউ হারিয়ে গেছেন বা তাদের আটক করা হয়েছে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।

মুসলিমদের শিবির যেভাবে চালায় চীন
নির্দেশনা
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় দশ লাখ মুসলমান বন্দি রয়েছেন৷ এসব ক্যাম্প কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে ২০১৭ সালে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷ রবিবার ১৭টি গণমাধ্যমে একযোগে সেটি প্রকাশিত হয়েছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ আইসিআইজে-কে এই নির্দেশনাটি দিয়েছে৷

রিপোর্ট বলছে, শিনজিয়াংয়ে ১০ লাখের বেশি মানুষকে শিবিরে পাঠানো হয়েছে। মুসলিমদের ভয় দেখানোর জন্য চীন তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সাইটগুলি বন্ধ করে দিয়েছে। প্রচুর সাক্ষী অ্যামনেস্টিকে বলেছেন, চীন ইসলামকেই মুছে ফেলতে চায়।

অনেকে বলেছেন, মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এমনকী মসজিদে ও মুসলিমদের বাড়িতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-য়ের ছবি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

যাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে, তাদের অনেকেই বলেছেন, তারা চীনে নিজেদের ধর্মাচরণ করতে ভয় পাচ্ছেন। তারা জানেন যে, রাষ্ট্র তাদের উপর নজর রাখছে।

উইগুর শিবিরের কথা

রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোনো রকম সতর্কতা ছাড়াই উইগুরদের মাঝরাতে বাড়ি থেকে তুলে শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের তথাকথিত শিক্ষা-শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং জোর করে নিজেদের অপরাধের কথা স্বীকার করানো হয়।। তারপর তাদের মধ্যে কিছু মানুষকে শিবিরে রাখা হয়, কারণ দেখানো হয়, তারা সন্ত্রাসবাদী এবং বিশ্বাসযোগ্য নয়।

মুসলমানরা বন্দিশিবিরে, পর্যটকরা শিনচিয়াংয়ে
মুসলিমদের বাস
চীনের শিনচিয়াং রাজ্যে মূলত উইগুরসহ তার্কিক ভাষা বলা অন্য মুসলিমদের বসবাস ছিল৷ গত শতকের ৫০ থেকে ৭০ দশকের মধ্যে সেখানে সরকারিভাবে হান চীনাদের সংখ্যা বাড়ানো হয়৷ তখন থেকে মুসলমান ও হানদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ লেগে থাকে৷

যাদের শিবিরে আটকে রাখা হয়েছিল, তাদের কয়েকজন অ্যামনেস্টিকে বলেছেন, শিবিরের অবস্থা চীনের কারাগারের থেকেও খারাপ। তাদের সংশোধন-ক্লাসে যেতে হয়। তার আগে সারাদিন তাদের বসিয়ে রাখা হয়। শিবিরের ক্লাসে তাদের ইসলামের 'খারাপ' দিকগুলি বাধ্যতামূলকভাবে শিখতে হয়।

অ্যামনেস্টির সুপারিশ

এই মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, শিবির থেকে চীনকে সব উইগুরকে মুক্তি দিতে হবে। যদি না তাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অকাট্য প্রমাণ থাকে। চীনকে এই শিবির বন্ধ করতে হবে। উইগুরদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অত্যাচার ও তাদের হেনস্থা করা বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ শিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ও অপরাধের তদন্ত করতে আন্তর্জাতিক দল পাঠাবে। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল জানিয়ে দেবেন, চীন বেআইনি কাজ করেছে এবং তা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার।

সূত্র: ডয়েচভেলে




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top