বিশ্ব বিবেককে নাড়া দেওয়া সেই আফগান শিশু কোথায়?

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৩ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩৪; আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ২২:১৮

ছবি: সংগৃহীত

গত ১৫ আগস্ট তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তান থেকে পালাতে মরিয়া হয়ে গিয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। ঠাসাঠাসি করে বিমানে উঠে পালতে গিয়ে কাবুল বিমানবন্দরে বিভিন্ন করুণ দৃশের অবতারণা হয়েছিল।

তবে কাবুল বিমানবন্দরের একটি দৃশ দেখে থমকে গিয়েছিলেন বিশ্ববাসী। ১৯ আগস্ট কাবুল থেকে পালাতে মরিয়া এক আফগান বিমানবন্দরের দেয়ালে কাঁটাতারের ওপর দিয়ে দুগ্ধপোষ্য শিশুকে এক মার্কিন সেনার হাতে হাতে তুলে দেন। ছবিটি দাগ কাটে বিশ্ববাসীর হৃদয়ে। শিশুটি শেষ পর্যন্ত নিরাপদে মা-বাবার কাছে পৌঁছাতে পেরেছে কী না তা নিয়েও কৌতুহল ছিল মানুষের মনে।

সেই শিশুটি মা-বাবার কাছে পৌঁছেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় মা-বাবার সঙ্গে শিশুটি ভালো আছে বলে এক মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

শিশুটির বাবা হামিদ জানান, শিশুটির বয়স এখন আট সপ্তাহ। শিশুটিকে মার্কিন সেনাদের হাতে তুলে দেওয়ার সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ দিন।

হামিদ পাঁচ বছর ধরে মার্কিন বাহিনীর হয়ে দোভাষীর কাজ করেছেন। আগস্ট মাসের শুরু থেকেই তিনি কাবুল বিমানবন্দরে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছেন। এমনকি নিজের প্রথম সন্তানের জন্মের সময়ও যেতে পারেননি তিনি। তালেবান কাবুলের কাছে চলে আসায় ১২ আগস্টের মধ্যে তিনি বুঝতে পারেন তাদের আফগানিস্তান ছেড়ে পালাতে হবে।

তার স্ত্রী সাদিয়া ১৬ দিন বয়সী মেয়ে লিরাকে নিয়ে ১৯ আগস্ট কাবুল বিমানবন্দরের উদ্দেশে বের হন। তিনি পরিচয়পত্র, কিছু নগদ অর্থ আর অল্পকিছু জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়েছিলেন।

পথে এক চেকপয়েন্টে তালেবান তার সব জিনিসপত্র ছিনিয়ে দেয়। মেয়েকে নিয়ে আফগান ছাড়তে ইচ্ছুক জনতার ভীড়ে মিশে যান সাদিয়া। সে সময়ই বিমানবন্দরের মধ্যে থাকা হামিদ দেয়ালের ওপর পাশে সাদিয়াকে দেখতে পান।

তিনি জানান, সেদিনের পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল। ভিড় ঠেকাতে তালেবান লাঠিচার্জ করছিল। জলকামানও ব্যবহার করেছিল।

হামিদ বলেন, আমি বুঝতে পারছিলাম এভাবে ভীড়ের মধ্যে চাপাচাপিতেই আমার মেয়ে মারা যাবে। কিংবা গুরুতর জখম হবে।তখন আমি মেয়েটিকে দেয়ালে ওপার থেকে বিমানবন্দরের ভেতর এনে দিতে এক মেরিন সেনার কাছে সাহায্য চাই। ওই মেরিন সেনা জানান, তিনি বাচ্চাটিকে কাঁটাতারের ওপারে নিয়ে আসতে পারবেন। কিন্তু এতে ওর ব্যথা পাওয়ার আশঙ্কা আছে।

হামিদ জানান, আমি ওই মেরিন সেনাকে বলেছিলেন, ওখানে থাকলে ও মরেই যাবে। তাই ব্যথা পেলেও আমার কিছুই করার ছিল না।

আলোচিত সেই ছবিতে হামিদকে ওই মেরিন সেনার পা ধরে থাকতে দেখা গেছে। এরপর মেয়েটিকে হামিদের কোলে তুলে দেন ওই মেরিন সেনা। জীবনের প্রথমবারের মতো মেয়েটিকে কোলে নেন হামিদ।

সাদিয়াও কয়েকঘণ্টা পর বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে সক্ষম হন। ওই দিনই বিমানে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওয়ানা দেন তারা।

বর্তমানে নিরাপদ জায়গায় থাকলেও তাদের আগের কোনো পরিচয়পত্র নেই। নেই কোনো চিকিৎসা বীমা। তাই সাদিয়া ও লিরার চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও তাদের চিকিৎসকদের কাছে নিতে পারছেন বলে জানিয়েছেন হামিদ।

সূত্র: যুগান্তর/এএস



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top