পরিচয়ের লেখকমেলা ও চরভোজন : এক অনন্য আয়োজন

মাহফুজুর রহমান আখন্দ | প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:৫০; আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:৫১

- ছবি - ইন্টারনেট

‘পদ্মাচরে গান কবিতা আড্ডা চড়ুইভাতি’ শ্লোগানকে ধারণ করে পরিচয় সংস্কৃতি সংসদের লেখকমেলা ও চরভোজন আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩। নৌবিহার, মিডিলচরে হাঁটহাঁটি, চরের জনজীবন থেকে লেখালেখির উপাত্ত সংগ্রহ, লেখকের দায় শীর্ষক আলোচনা, শিক্ষাথীদের গানের প্রতিযোগিতা, পুরুষদের বাস্কেটে বল নিক্ষেপ, মহিলাদের পিলো পাসিং গেম এবং গান-কবিতাসহ খাইদাই ও জমকালো আড্ডার মধ্যদিয়ে পালিত হলো মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই দিনব্যাপী কর্মসূচি।

সকল সাড়ে আটটায় রাজশাহীর জাহাজঘাট থেকে দুটো বড় নৌকায় ভ্রমণ শুরু হয়। লোকগানের তালে তালে নৌবিহার জমিয়ে রাখেণ শিল্পীবৃন্দ। মিডিলচরে পৌঁছে চরজীবনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য হাঁটাহাঁটি শুর হয়। চরখিদিরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় সারাদিনের এ আয়োজন।

রান্নাবান্নার প্রস্তুতি চলতেই সকালের নাস্তা সেরে নেয়া হয় হাঁড়িভর্তি ঝালমুড়ি মাখিয়ে। নানা শশা, চমেটো, কাঁচামরিচ, পিয়াজ সরিয়ার তেলে মেখে চানাচুর, খাগড়াই এবং কবি ফারহানা শরমিন জেনীর বাড়ি থেকে তৈরী করা ছোলভুনার মাধ্যমে মাখিয়ে নেয়া হয় মুড়ি। চরের পরিবেশে ঝাঁঝানো মুড়িমাখা সকলেই দারুণভাবে উপভোগ করেন।

মুড়িচক্র শেষে শুরু হয় দিনের মৌলিক কর্মসূচি। পরিচয়ের অন্যতম উপদেষ্টা কথাশিল্পী দেওয়ান মোহাম্মদ শামসুজ্জামানের সভাপতিত্বে হাফেজ শীষ মুহাম্মদ এর তিলাওয়াতের মাধ্যমে উদ্বোধনী পর্ব শুরু হয় সকাল সাড়ে এগারোটায়। কবি ও গবেষক ড. ফজলুল হক তুহিনের উপস্থাপনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিচয়ের সাধারণ সম্পাদক এবং চরভোজন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যবস্থাপক কবি ও গবেষক ড. সায়ীদ ওয়াকিল।

লেখকের দায় শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেন পরিচয়ের সভাপতি এবং চরভোজন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক কবি ও গবেষক প্রফেসর ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ। লেখালেখিতে নান্দনিকতা ও মূল্যবোধের উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি লেখালেখির বিশ্বাসী ধারা ও গতানুগতিক ধারার সাফল্য-ব্যর্থতার বিভিন্ন দিক উপস্থান করেন।

শিক্ষার্থীদের গানের প্রতিযোগিতার মধ্যদিয়ে আনন্দঘন আয়োজন শুরু হয়। নানা ধরনের গানের আবহে আন্দোলিত হয়ে ওঠে খিদিরপুর প্রাইমারি স্কুলের হলকক্ষ। শিল্পী-সুরকার ইউসুফ বকুল, শিল্পী-সুরকার শোয়েব আলী এবং কবি ও শিল্পী পারভীন আকতার বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিযোগিতায় ইসমাম প্রথম, প্রাপ্তি দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেন মিশকাতুল মুজাইয়্যেনা নাজিফা।

গানের পর্ব শেষ করেই হলরুমের অনুষ্ঠানের আপাতত ইতি টানা হয়। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় মহিলাদের পিলো পাসিং গেম। দারুণ উত্তেজনা এবং হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যদিয়ে পর্বটি সকলেই উপভোগ করেন। কবি আবদুর রাজ্জাক রিপনের তত্বাবধানে এ পর্বে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন চরভোজন বাস্তবায়ন কমিটির খাদ্যউপকমিটির আহ্বায়ক কবি এরফান আলী এনাফ এবং অর্থউপকমিটির অন্যতম সদস্য কবি সরদার মুক্তার আলী। দারুণ করতালি টান টান উত্তেজনার মধ্যেই প্রথম স্থান অধিকার করেন দিলা খানম, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে কবি সুফিয়া রহমান নার্গিস এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেন মিমি।

মজার আয়োজনে পুরুষদের জন্য ছিলো বাস্কেটে বল নিক্ষেপ। জোহরের নামাজের বিরতির পর কবি শেখ তৈমুর আলমের বল নিক্ষেপের মধ্যদিয়ে খেলার উদ্বোধন ঘোষনা করা হয়। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন কথাশিল্পী দেওয়ান মোহাম্মদ শামসুজ্জামান এবং কবি ও গীতিকার জামাল দীন সুমন। দারুণ উপভোগ্য এই খেলায় জনাব নজরুল ইসলাম প্রথম, সুরকার-শিল্পী ইউসুফ বকুল দ্বিতীয় এবং শান্ত তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।

খেলা শেষ হতে না হতেই খিচুড়ির ঘ্রাণে মৌ মৌ করে উঠেছিলো চরের মৃদু বাতাস। ভুনাখিচুড়ির ঘ্রাণে সকলের মন নাচিয়ে তোলে। শুরু হয় খাইদাই আয়োজন। আট প্রকারের সবজি, চার প্রকারের ডাল এবং গরুর গোশতের ভুনা খিচুড়ি। পর্যাপ্ত শশা-টমোর সালাদ। ফাঁকে ফাঁকে কবি রাকিবা রাখির নিজ হাতে বানানো মজাদার আচার।

সে এক অন্যরকম মজা। এই মজাকে স্বার্থক করে তুলেছেন কবি জুবাইর রহমান, কবি সালেকুর রহমান সম্রাট, কবি লিটন হালিম, কবি তানিম আলামিন প্রমুখ। খোলা মাঠে ডেকোরেটরের কাপড় বিছিয়ে লাইন হয়ে মজলিশ-মেজবান খাওয়ার অন্যরকম মজা উপভোগ করেন সকলেই।

দুপুরে মধ্যহ্নপর্বে চরভোজন শেষ করেই শুরু হয় গান-কবিতা জমকালো আসর। বাংলা লিটারেচার সম্পাদক ও পরিচয়ের অন্যতম উপদেষ্টা কবি সায়ীদ আবুবকর এ পর্বে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আলোচক ছিলেন কবি মোস্তাক রহমান।

কবি ও গবেষক ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ’র উপস্থাপনায় স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি জামাল দ্বীন সুমন, কবি নূরুল হক, কবি এরফান আলী এনাফ্, ড. আমিনুল ইসলাম বিশ্বাস, কবি অভী মন্ডল, কবি ড. মঞ্জিলা শরীফ, কবি সাবের রাহী, কবি আবদুল রাজ্জাক রিপন, কবি শেখ তৈমুর আলম, কবি হোসনে আরা মেঘনা, কবি সরদার মুক্তার আলী, কবি কামাল হোসেন, কবি আবু নাসের তারেক, কবি খোশবর আলী, কথাসাহিত্যিক মনির বেলাল, কবি মোস্তফা ফেরদৌস হাজরা, কবি সাঈদ কামরুল, কবি আহমেদ সুহাইল, কবি আব্দুল্লাহ আল মারুফ, কবি আব্দুল্লাহ রিফাত, কবি শাহরুজ্জামান তুহিন, কবি সফিকুল ইসলাম মজিদী প্রমুখ। গান পরিবেশন করেন কবি পারভীন আকতার, শিল্পী শোয়েব আলী, শিল্পী ইউসুফ বকুল প্রমুখ।

কবি আসাদুল্লাহ মামুন সেলিম, কবি ফারহানা শরমিন জেনী, অধ্যাপক শওকত আরিফ, লামিয়া তাসনীম, লামিয়ার বান্ধবী, কবি তারেকুল ইসলাম, কবি ফুয়াদ হাসান, অধ্যাপক মোহা. জোহরুল ইসলাম, কবি নাহিদা আকতার নদী, কবি রাকিবা রাখি, রাফসান হোসেন, দিলা খানম, হাসানুল বান্না খান, রেবেকা খান, হোসনে আরা খাতুন, রাবিয়া খাতুন, রিজওয়ানাতুর রাজ্জাক, বাচিকশিল্পী গোলাম মোর্শেদ, মহুয়া তাসীন আভা, ইস্তিয়াক আহমেদ, মাহবুব আলম, কবি তানিম আল আমিন, মান্না খান, সান্না খান, আরিফুল ইসলাম, শামীম হাসান, রায়হান আহমেদ, ইমরান হোসাইন, মতিউর রহমান, দিপ্তী বিবি, রানী বিবি, লাকি বিবি, স্নেহা বিবি, লুবানা বিবি, কবি সাজ্জাদ খন্দকার, কবি মঞ্জুর রাহী, কবি আনোয়ার হোসেন শাওন, কবি জুবাইর রহমান, কবি হাসান আলী, কবি মোস্তফা মমিন, কবি ইয়াহিয়া সেলিম, কবি সুফিয়া রহমান নার্গিস, হেলাল উদ্দিন, কবি সালেকুর রহমান সম্রাট, কবি লিটন হালিম প্রমুখের এর প্রাণবন্ত উপস্থিতি আয়োজনকে দারুণভাবে আনন্দময় করেছে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top