দিল্লি সালতানাত প্রতিষ্ঠায় ইলতুৎমিশ
আহসান হাবিব: | প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৩৩; আপডেট: ৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:১৬

১১৯২ সালে তিনি কুতুবউদ্দিন আইবেকের ক্রীতদাস হিসেবে জীবন শুরু করেন। ইলতুৎমিশ তুখোড় মেধার অধিকারী ছিলেন বিধায় কুতুবউদ্দিন আইবেক তাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে নিজ কন্যাকে তার সাথে বিয়ে দেন এবং বদায়ুনের শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগতার ভাইয়েরা তার রুপ ও যোগ্যতায় ইর্ষান্বিত হয়ে তাকে এক দাস ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেয়।
বিক্রির পর তাকে বুখারার কাজী সদর জং কিনে নেন। বুখারায় তিনি ভাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পান। এর পরে তাকে দিল্লি নিয়ে আসা হয়, সেখানে তাকে কুতুবউদ্দিন আইবেক কিনে নেন। কুতুবউদ্দিন আইবেক তার যোগ্যতা খুশি হয়ে তাকে সার-জান্দার ( প্রধান প্রহরী ) হিসেবে নিয়োগ দেন।
কঠোর প্ররিশ্রমের দ্বারা তিনি আমির-ই-শিকার এবং পরে গোয়ালিয়রের আমির হিসেবে উন্নিত হন। আইবেক তার কন্যাকে ইলতুতমিশের সাথে বিয়ে দেন। কুতুবউদ্দিন আইবেকের মৃত্যুর পর তার পুত্র শাসনভার গ্রহণের অযোগ্য প্রমাণিত হলে তুর্কিরা তাকে সুলতান হিসেবে মনোনিত করে। ইলতুতমিশ একজন যোগ্য শাসক ছিলেন। তিনি জ্ঞানী, প্রশাসক ও উচ্চপদস্থ সেনাকর্মকর্তাদের দেশে নিয়ে আসেন যারা মঙ্গল আক্রমণের সময় চলে গিয়েছিল।
এদের নিয়ে ইলতুতমিশ এক শক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন।তিনি ধর্মপ্রান ছিলেন এবং দরবেশদের গভীরভাবে শ্রদ্ধা করতেন। কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি তার সময়ের একজন বিখ্যাত দরবেশ। তিনি কখনো নামায কাযা করেন নি। তিনি কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকীর জানাযার ইমামতি করেন।
স্থাপত্যশুরু করা কুতুব মিনারের কাজ ইলতুতমিশের সময় শেষ হয়। তিনি আজমিরে একটি বিখ্যাত মসজিদ তৈরি করেন।ইলতুতমিশ দিল্লীর সুলতানদের মধ্যে সর্বপ্রথম খাঁটি আরবি মুদ্রার প্রবর্তন করেন। ভারতবর্ষে রোপো বা তঙ্কা (১৭৫ গ্রাম) ও তাম্র মুদ্রা বা জিতল এই দুটি মুদ্রার প্রচলন করেন। নামে অভিহিত হত।
তার সময়ে বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফা মুনতানজির বিল্লাহ ১২২৯ সালে ভারতে বিপুল বিনিয়োগ করেন।ইলতুতমিশ দিল্লীর সুলতানদের মধ্যে সর্বপ্রথম খাঁটি আরবি মুদ্রার প্রবর্তন করেন। ভারতবর্ষে রোপো বা তঙ্কা (১৭৫ গ্রাম) ও তাম্র মুদ্রা বা জিতল এই দুটি মুদ্রার প্রচলন করেন। নামে অভিহিত হত। তার সময়ে বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফা মুনতানজির বিল্লাহ ১২২৯ সালে ভারতে বিপুল বিনিয়োগ করেন। ইলতুতমিশ একজন মহান শাসক ছিলেন।
তিনি নতুন বিজিত অঞ্চলগুলোর বিদ্রোহ থেকে সাম্রাজ্যকে রক্ষা করেন। ঘুরি বংশের নাসিরউদ্দিন কুবাচাহ নিজ রাজ্যের স্বাধীনতা ঘোষণা করে উচ, মুলতান এবং লাহোর দখল করে নেন।
অন্যদিকে, তুর্কি বংশোদ্ভূত তাজউদ্দিন ইলদিজ গজনীতে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ইলতুতমিশ দ্রুত পরিস্থিতি সামলে নিয়ে তাদের উভয়কে পরাজিত করেন। ১২২৫ সালে তিনি বাংলার খিলজী বংশের শাসক হুসামউদ্দিন ইয়াজকে পরাজিত করে বাংলা দখল করে নেন। তিনি সিন্ধুর সুম্রা শাসকের পরাজিত করেণ।
১২৩১ সালে ইলতুতমিশ গোয়ালিয়রের কেল্লা অবরুদ্ধ করেণ। গোয়ালিয়রের শাসক মঙ্গল দেব একবছর পর পলায়ন করলে ইলতুতমিশ গোয়ালিয়র শহর দখল করেন। ইলতুতমিশ মালওয়া, বিলসা, উজ্জান দখল করেন এবং দক্ষিণে তার সাম্রাজ্য নারবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত করেন।
ইলতুতমিশের আমলে চেঙ্গিস খান জালালউদ্দিন খোয়ারিজমিকে পরাজিত করে আতুকের নিকটে চলে আসে। জালালউদ্দিন ইলতুতমিশের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। কিন্তু ইলতুতমিশ চেঙ্গিস খানের বিরুদ্ধে যেতে চান নাই, ফলে জালালউদ্দিনকে চিঠি লিখে জানান দিল্লি আবহাওয়া ভাল নয়, এই আবহাওয়া জালালউদ্দিন সহ্য করতে পারবেন না।
তখন জালালউদ্দিন সিন্ধু হয়ে ইরান চলে যান। এভাবে ইলতুতমিশ তার নব্য মুসলিম সম্রাজ্যকে মঙ্গল আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন।বিদ্যোৎসাহীঃ তার শাসনামলে দিল্লী শিক্ষা সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। তার দরবারে অসংখ্য কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, ইসলাম প্রচারক ও জ্ঞানী ব্যক্তির সমাবেশ ঘটেছিল। এ সময় দিল্লীতে বহু স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাঃ ইলতুৎমিশ একজন ন্যায়বিচারক ছিলেন। তিনি অন্যায় কঠোর হস্তে দমন করেন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেন।
জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিঃ জনসাধারণের কল্যাণে ইলতুৎমিশ অসংখ্য রাস্তাঘাট ও সরাইখানা নির্মাণ, বন জঙ্গল অপসারণ, কর লাঘব প্রভৃতি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন। প্রজাদের অভিযােগ শ্রবণের জন্য তিনি দরবারে ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখতেন। হৃদয়বান মানুষঃ উদারতা, মহানুভবতা ও পরােপকার ইলতুৎমিশের। চরিত্রকে মহিমান্বিত করে তুলেছিল।
তার ধর্মপরায়ণতা ছিল সর্বজনবিদিত। তিনি সুফী সাধকদের যথেষ্ট শ্রদ্ধা করতেন। উন্নত চরিত্রের অধিকারীঃ সুলতান ইলতুৎমিশ ব্যক্তি চরিত্রে ছিলেন সৎ নিষ্ঠাবান, দয়ালু, পরােপকারী ও প্রজাহিতৈষী। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে তিনি সব সময় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করতেন।অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন, বহিঃশত্রুর আক্রমণরােধ এবং মুসলিম শাসন সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপন করে ইলতুৎমিশ ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
ড. ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন- llfufmish is Undoubtedly the real founder of the slove dynasty. উল্লিখিত কৃতিত্বসমূহ পর্যালােচনা করে ইলতুৎমিশকে ভারতের মুসলিম শাসনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা যায়।
লেখক: আহসান হাবিব, শিক্ষার্থী :রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: