তারেক কেন্দ্রিক বলয় তৈরীর পরিকল্পনা

বিএনপির শীর্ষ পদগুলোতে আসছে পরিবর্তন

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:৪৭; আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:৫২

ফাইল ছবি

শীর্ষ পদগুলোতে পরিবর্তন আসছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিতে। দলটি বয়স্ক নেতা এবং যেসব নেতাদের বিরুদ্ধে নিস্ক্রিয়তা ও সরকারের সাথে 'আঁতাত' এর অভিযোগ আছে তাদের বাদ দেয়ার পরিকল্পনা করছে।

ছাঁটাইয়ের পর শূণ্যপদগুলোতে আস্থাভাজন এবং দলে কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিতদের স্থলাভিষিক্ত করা হবে।

পরিবর্তন আসতে মহাসচিব পদেও। যদিও এখন পর্যন্ত বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি আস্থা রয়েছে হাইকমান্ডের। করোনাপরবর্তী রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং ভবিষ্যতে ভাঙন থেকে দলকে রক্ষা করতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে এসব পদে পরিবর্তন কাউন্সিলের আগে না পরে হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

মহামারী করোনায় এতদিন সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির ছিল বিএনপির। দলটি স্থগিত থাকা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ফের শুরু করেছে। দ্রুত সব ইউনিটের কমিটি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী বছরের মার্চ কিংবা এপ্রিলে সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল করার চিন্তাভাবনা রয়েছে হাইকমান্ডের।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি না হওয়ায় তারেকের উপরই থাকছে দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব। দলটির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা ততটা ভালো নয়। মামলাজট কাটিয়ে এবং সুস্থ হয়ে পুনরায় তার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া কঠিন। শীর্ষ নেতৃত্বে তিনি থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে দলের মূল নিয়ন্ত্রণ থাকবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতেই। তারেক রহমান যেখানেই থাকুন, তার নেতৃত্বেই চলবে দল। এমন পরিস্থিতিতে তারেক রহমানও তার নিজের মতো করে দল গোছানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তারেক রহমান বিরোধী হিসেবে পরিচিতদের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে। এসব পদে তারেক অনুসারী হিসেবে পরিচিতদের বসানো হতে পারে। বিশেষ করে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে এ পরিবর্তনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এ কমিটিতে যারা নিষ্ক্রিয় এবং বয়সের ভারে ন্যুব্জ তাদের সরিয়ে দেয়া হবে। তাদের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে ঠাঁই দেয়া হতে পারে।

মূলত তারেক রহমানের বিশ্বস্ত লোকদের শীর্ষ পদগুলিতে আনা হবে বলে জানান নীতিনির্ধারকরা। তারা জানান, সিনিয়র নেতাদের প্রায় সবাই খালেদা জিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসছেন। তবে তাদের অনেককেই তারেক রহমান তার নিজের লোক মনে করেন না। অনেককে বিশ্বাসও করেন না। এজন্য এমন নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনতে চান, যারা তার বলয়ের ও তার বিশ্বস্ত। যাতে দলে নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। এছাড়া দলের ভাঙনরোধে আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবেও এ পরিবর্তন আনা হবে। বিগত ওয়ান-ইলেভেনের কথা মাথায় রেখেই সবকিছু করা হবে। ভবিষ্যতে যাতে দলের মধ্যে কেউ ভাঙন সৃষ্টি করতে না পারেন।

মহাসচিব পদে অন্য কেউ আসার বিষয়ে তেমন মত নেই দলের হাইকমান্ডের। এমনকি দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে এ নিয়ে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। হঠাৎ করে মহাসচিব পদে পরিবর্তনের গুঞ্জনকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না নেতাকর্মীরা। তারা মনে করেন, এ মুহূর্তে মির্জা ফখরুলের বিকল্প কেউ তৈরি হয়নি। দেশে এবং দেশের বাইরে তার যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে, তা এ মুহূর্তে অন্য কারও নেই। কূটনীতিকদের কাছেও তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এছাড়া দলের মধ্যে যে দ্বিধাবিভক্তি, তাতে এখন মহাসচিব পরিবর্তন করলে তা আরও তীব্র হবে। সবকিছু বিবেচনায় দলের হাইকমান্ড এখন পর্যন্ত মির্জা ফখরুলের প্রতি আস্থাশীল।

সাংগঠনিকভাবে নেতৃত্বের পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন আমাদের সাংগঠনিক পুনর্গঠন স্থগিত ছিল। সম্প্রতি তা শুরু হয়েছে। এ মুহূর্তে দল পুনর্গঠনকেই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিল কবে হবে তার দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে কাউন্সিলের আগে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়। আমরা এখন সেটাই করছি। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা কাউন্সিলের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করব। কাউন্সিল হলে তো বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যক্রম এমনিতেই থাকে না। নতুন কমিটি করতে হয়। কাউন্সিলের আগে পদগুলো পূরণ করা হবে কিনা তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মহাসচিব পরিবর্তন নিয়ে দলের মধ্যে কোনো আলোচনা নেই। কিছু গণমাধ্যম এ নিয়ে মনগড়া রিপোর্ট করছে।

তারেক কেন্দ্রিক বলয় তৈরীতে নেতৃত্বের পরিবর্তন আসবে সব জায়গায়। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু স্থায়ী কমিটি নয়, নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ এমনকি অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বেও কট্টরপন্থীদের জায়গা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতদের এসব পদে বসানো হচ্ছে। দলের পাশাপাশি অন্যান্য উপকমিটিতেও তারেক রহমানের প্রতি আস্থাভাজনরাই পাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ পদ।

জাতীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় পরবর্তী কাউন্সিল না হওয়ায় নতুন কমিটি এখনো গঠিত হয় নি। করোনার মধ্যে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ফের শুরু হওয়ায় কাউন্সিলের আলোচনা গুরুত্ব পাচ্ছে। দ্রুততম সময়ে পুনর্গঠন শেষ করতে চায় বিএনপি। পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কাউন্সিলের উদ্যোগ নেবে দলটি। সে ক্ষেত্রে আগামী বছরের মার্চ কিংবা এপ্রিলে দলের সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করেছিল বিএনপি। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় নির্বাহী কমিটি ৩ বছরের জন্য নির্বাচিত হবে এবং পরবর্তী জাতীয় নির্বাহী কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত এ কমিটিই দায়িত্ব পালন করবে। গত বছরের মার্চে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকার কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কাউন্সিলের উদ্যোগ নেয়নি দলটি। যদিও সরকারের নির্বাহী আদেশে বর্তমানে মুক্ত আছেন খালেদা জিয়া। তবে রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় নেই। এর মধ্যে চলছে করোনা মহামারী। সব মিলিয়ে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের মতো পরিবেশ ছিল না বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা।

কবে নাগাদ কাউন্সিল শুরু হতে পারে এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দীর্ঘদিন পর দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ফের শুরু হয়েছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম কাউন্সিলের একটা অংশ। প্রতিটি জেলা, উপজেলা বা থানা কমিটিগুলো কাউন্সিলের আগেই সম্পন্ন করতে হয়। সেই কাজটা আমাদের শুরু হয়েছে। কাউন্সিল তো একটা সময় হবেই। তবে করোনা পরিস্থিতি দেখেই আমরা কাউন্সিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। বিএনপি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। এমন একটা দলের কাউন্সিল ভার্চুয়াল বা অনলাইনে হয় না। খবর-যুগান্তর

  • এসএইচ

 

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top