চায়ে ফিরে এল সুদিন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০২০ ১৬:১৩; আপডেট: ৪ জুলাই ২০২০ ০৭:১১

অনলাইন থেকে পাওয়া

এক দশক আগেও ছিল শঙ্কা। রপ্তানি তো হবেই না। উল্টো চায়ের বড় আমদানিকারক দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাতে প্রতিবছর হাতছাড়া হবে বৈদেশিক মুদ্রা।

এক দশকের ব্যবধানে এই শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। বড় আমদানিকারক দেশ তো হয়নি; উল্টো রপ্তানিতে দিচ্ছে সুখবর।

গত বছর পানীয় এই পণ্যের রেকর্ড উৎপাদন হয়, যা ছিল চাহিদার চেয়ে বেশি। এই বাড়তি চা-ই এখন রপ্তানি হচ্ছে। গত পাঁচ মাসে ৯ লাখ ৮৭ হাজার কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। ২০১৮ বা ২০১৯ সালে পুরো বছরে এই পরিমাণ চা রপ্তানি হয়নি।

আবার আমদানিও কমছে। চা বোর্ডের হিসাবে, এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে চা আমদানি হয় ১ লাখ ৬২ হাজার কেজি। কাস্টমসের হিসাবে, গত বছর একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৪৬ লাখ কেজি।

উৎপাদন দিয়ে চাহিদা না মেটায় ২০০৯ সালে চা আমদানি শুরু হয়। সর্বোচ্চ আমদানির রেকর্ড ছিল ২০১৫ সালে। মোট ৯৩ লাখ কেজি।

চায়ে এই সুদিনের নেপথ্যে আছে এক দশক ধরে চা বোর্ড ও উদ্যোক্তাদের নানা উদ্যোগ। এক দশক আগে চা বোর্ড উৎপাদন বাড়ানোর কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে। উদ্যোক্তারা শত বছরের পুরোনো বাগানগুলো সংস্কার করেন। পুরোনো-পরিত্যক্ত বাগান চা চাষের আওতায় আনা হয়। সমতলভূমিতে চা চাষ সম্প্রসারণ হয় এ সময়। বাজারে ভালো দাম থাকায় চা চাষে মনোযোগী হন উদ্যোক্তারা। তাতেই এই সুফল এসেছে বলে মনে করেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

চা উৎপাদন ও রপ্তানিতে অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ফিনলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কিউ আই চৌধুরী বলেন, চা এখন আর আমদানিনির্ভর নয়। দেশীয় উৎপাদন দিয়ে চাহিদা পূরণ হচ্ছে। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন যত বেশি বাড়বে, রপ্তানির সম্ভাবনাও তত বাড়বে। প্রায় ৫১ বছর ধরে চা–শিল্পের সঙ্গে জড়িত এ কিউ আই চৌধুরীর মতে, এ জন্য উৎপাদনের মতো রপ্তানিতেও ধারাবাহিকতা থাকতে হবে।

সুদিনের অতীত-বর্তমান

বাংলাদেশে চায়ের সুদিন ধরা হয় নব্বই দশককে। লন্ডনভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটি’র ১৯৮৩ সালের বার্ষিক বুলেটিনে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে চা রপ্তানির প্রথম বছরেই বিশ্ববাজারে এ দেশের অবস্থান ছিল নবম অবস্থানে। রপ্তানি আয়ের হিসাবে ১৯৮১ ও ১৯৮২ সালে ষষ্ঠ অবস্থানে উন্নীত হয়। এখন পঞ্চম অবস্থানে থাকা ভিয়েতনাম তখন ছিল ১৮তম।

রপ্তানির পরিমাণের হিসাবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি চা রপ্তানি হয় ১৯৮২ সালে। সে বছর ৩ কোটি ৪৪ লাখ কেজি চা রপ্তানি করে ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় হয়। তখন দেশে চা উৎপাদন হয় ৪ কোটি ৯ লাখ কেজি। এখন উৎপাদন দুই গুণের বেশি বেড়ে ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজিতে উন্নীত হয়েছে। দেশে চাহিদা বেশি বাড়ায় অবশ্য তখনকার মতো রপ্তানি হচ্ছে না।

চায়ে আমদানি কমছে, বাড়ছে রপ্তানি
গত পাঁচ মাসে ৯ লাখ ৮৭ হাজার 

সে সময় এক কোটি কেজি উৎপাদন বাড়াতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১১-১২ বছর। এখন এক বছরেই কোটি কেজি উৎপাদন বাড়ার রেকর্ড হয়। গত বছরের রেকর্ড এটি। এ বছরের শুরুতে প্রতিকূল আবহাওয়ায় উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেলেও তা পুষিয়ে আনতে শুরু করেছেন উদ্যোক্তারা।

বাংলাদেশ চা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহ মঈনুদ্দীন হাসান প্রথম আলোকে বলেন, উদ্যোক্তা ও চা বোর্ডের সম্মিলিত চেষ্টার সুফল এখন দ্রুত পাওয়া যাচ্ছে চা খাতে।

উচ্চ মূল্যের চা

উৎপাদনে রেকর্ড হচ্ছে, রপ্তানি বেড়েছে—এতেই থেমে থাকতে চান না উদ্যোক্তারা। কালো চায়ের বাইরে সবুজ চা উৎপাদন বাড়িয়েছেন তাঁরা। আবার হোয়াইট টি বা সাদা চা, মসলা চায়ের মতো পণ্য এনেছেন উদ্যোক্তারা।

ফিনলে, পেডরোলো, কাজী অ্যান্ড কাজীর মতো গ্রুপ নতুন নতুন চা উৎপাদনে নজর দিয়েছে। হালদা ভ্যালির মতো একসময় পরিত্যক্ত বাগানে এখন উৎপাদন হচ্ছে হোয়াইট টি, যেটি সাধারণ চায়ের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি দামি।

হালদা ভ্যালির মালিকানায় থাকা পেডরোলো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাদের খান প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ মানের চায়ের চেয়ে সবুজ চা, সাদা চায়ের মূল্য অনেক বেশি। বৈশ্বিক বাজারে চাহিদাও ভালো। সে জন্য হালদা ভ্যালি বাগানে উচ্চ মূল্যের চা তৈরির আওতা বাড়ানো হচ্ছে।

বৈশ্বিক বাজার

২০১৮ সালে বিশ্বে চায়ের বাজারের আকার ছিল ২৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে রপ্তানি হয়েছে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের চা। রপ্তানির বাজারের দুই-তৃতীয়াংশ চীন, ভারত, কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কার দখলে। পঞ্চম অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম। বিশ্বের ৩৫টি দেশে চা উৎপাদন হয়। এ তথ্য গবেষণা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইনডেক্সবক্সের।

বাংলাদেশে চা রপ্তানি থেকে আয় এখনো খুবই কম। রপ্তানি আয় বাড়াতে চায়ের পণ্যে বহুমুখীকরণের (সুগন্ধি ও ওষুধশিল্পে ব্যবহার) ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ফিনলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কিউ আই চৌধুরী মনে করেন, পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়ানো গেলে রপ্তানি বাজারে আয়ও বাড়ানো সম্ভব।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top