প্রাইমারী স্তরে অটোপাস ও মাধ্যমিক স্তরে মূল্যায়ন

বিশ্ব মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপে লেজেগোবরে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। পিএসসি, জেএসসি, ও এইচএসসি নিয়ে আপাত: সমাধান হলেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর নিয়ে ভাবতে হচ্ছে সরকারকে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিকল্প মূল্যায়নের মাধ্যমে পরের ক্লাসে তুলে দেয়ার চিন্তা চলছে। পাঠ্যবইয়ের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দেয়া হবে। বাড়িতে থেকে তারা সেই অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ ব্যবস্থায় সেটা সংগ্রহ ও মূল্যায়ন করবে। এর ভিত্তিতেই তাদের নতুন ক্লাসে তুলে দেয়া হবে।

তবে প্রাথমিকের ক্ষেত্রে এসব বিকল্প মূল্যায়ন না করে শিক্ষার্থীদের দেয়া হবে ‘অটোপাস’। আগের বছরের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে রোল নম্বর। করোনার প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললেই এসব পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে প্রায় আড়াই কোটি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত অভিভাবকরা।

দু একদিনের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের সম্ভাবনা আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মাধ্যমিকের পরিকল্পনা নিয়ে এ সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলনে আসতে পারেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। প্রাথমিকের অটোপাসসহ অন্যান্য বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়া হবে আগামী মাসে।

দেশের করোনা প্রাদুর্ভাব স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত বিকল্প পরিকল্পনা অনুসরণ করা হবে। এতে প্রাথমিক স্তরের জন্য প্রণীত পরিকল্পনা অনুসরণ করতে বলা হবে শিক্ষকদের। আর মাধ্যমিক স্তরের পরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ তা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছাবে। এরপর তা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রকাশ করা হবে।

সরকার করোনাভাইসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় তৎপর জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি। করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং নভেম্বরে বা এরপর সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ থেকে জনগণকে সুরক্ষা দেয়ার কাজে সরকার বেশি তৎপর।

শিশুদের ঝুঁকির মুখে ফেলা যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, নভেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে কিনা তা নিয়ে আমি সন্দিহান। যদি খুলে দেয়া হয় তবে ইতোমধ্যে প্রণীত পাঠ-পরিকল্পনা অনুযায়ী লেখাপড়া ও বার্ষিক পরীক্ষা নেব। আর যদি খুলে দেয়া সম্ভব না হয় সে ক্ষেত্রে ‘অটোপাস’-এর কোনো বিকল্প দেখছি না।

মূল্যায়নের মাধ্যমেই মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের প্রমোশনের কথা জানান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের ‘অটোপাস’ দিচ্ছি না। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বন্ধ নেই। মধ্য মার্চ পর্যন্ত শ্রেণিকাজ, টেলিভিশন ও অনলাইনে পাঠদানসহ অন্যান্য দিক বিবেচনায় নিয়ে তাদের মূল্যায়ন করা হবে। মূল্যায়নের মাধ্যমেই নতুন শ্রেণিতে পদোন্নতি দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। মাঝে কয়েক দফা ছুটি বাড়ানো হয়েছে। মার্চের শেষে মাধ্যমিকে এবং এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে প্রাথমিক স্তরে টেলিভিশন পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ শতাংশের কাছে সংসদ টেলিভিশনের পাঠদান পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। আর মাউশির হিসাবে প্রায় ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী এসেছে এই পাঠদানের আওতায়।

বর্তমানে দেশে প্রাথমিক শিক্ষার সাথে জড়িত প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ছাত্রছাত্রী। ৩৫ শতাংশ পাঠদানের বাইরে থাকলে এর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় অর্ধকোটি। আর মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ। মাউশির হিসাবে, যেসব জায়গায় টিভির পাঠদান পৌঁছানো যায়নি তার সংখ্যা সাড়ে ১০ লাখ (শিক্ষার্থী)।

এর আগে, শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা না দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ২৭ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘যা কিছু করছি সব তোমাদের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। এখন করোনাকাল চলছে। তোমরা স্কুলে যেতে পারছ না। পরীক্ষা তো হবে না, হয়তো প্রমোশন দিতে হবে। আমরা দেখছি কী করা যায়।’

এই বছর সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয় বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, ছেলেমেয়েদের ঝুঁকিতে ফেলতে চাচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

স্কুল খোলার মত অবস্থা এখনো হয় নি জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ জানান, শিক্ষার্থীরা বর্তমানে যে ক্লাসে আছে, তার আগের ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়ন করে পরের ক্লাসে তুলে দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।

তবে এখনো সব কিছু চূড়ান্ত নয় জানিয়ে সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, পরীক্ষা নিতে না পারলে নতুন ক্লাসে ভর্তি যে আগে হবে তার রোল আগে থাকবে- এই নীতি নেয়া যায়। তবে পরের শ্রেণিতে পদোন্নতিতে আগের বছরের বা ২০১৯ সালের বার্ষিক পরীক্ষার ফল বিবেচনা নিলে বিতর্ক না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে কী হবে সেটা আরও পরে জানানো হবে। এখনও সময় আছে।

করোনা প্রাদুর্ভাবে স্কুল খোলা বা না খোলার কথা মাথায় রেখে মাধ্যমিকে মূল্যায়নের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি) পরিকল্পনা তৈরি করছে। দুই নীতি সামনে রাখা হচ্ছে। একটি হচ্ছে বছরের অবশিষ্ট সময় বিবেচনায় নিয়ে যতটুকু বিষয়ের ওপর অ্যাসাইনমেন্ট বা বাড়ির কাজ দেয়া যায় সেটা রাখা হবে।

প্রণীত সিলেবাসের যেসব অংশ অপঠিত থাকবে তা পরের বছরের জন্য অপরিহার্য। সেটা পরের ক্লাসে নেয়া হবে। আগামী বছর পাঠদানের আগে শিক্ষক সেটি পড়িয়ে নেবেন। এই পরিকল্পনা আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রণয়ন শেষে স্কুল শিক্ষকদের কাছে পাঠানো হবে।

এই বছরের বাকি সময়ের সিলেবাস শেষ করে নির্ধারিত অংশ অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়ের নির্দেশনা থাকছে। এরপর অ্যাসাইনমেন্টে নম্বর দিয়ে শিক্ষার্থী মূল্যায়নের পাশাপাশি নতুন ক্লাসে তার রোল নম্বরও নির্ধারণ করা হতে পারে।

উল্লেখ্য, সরকার ইতিমধ্যে পিএসসি, জেএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে সৃষ্ট ঝামেলার সমাধান করেছে।

• এসএইচ