মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে টাকার প্রবাহ কমানোর সিদ্ধান্ত

রাজটাইমস ডেক্স | প্রকাশিত: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৪:৪৯; আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ২১:৫১

 ছবি : সংগৃহীত

বাজারে টাকার প্রবাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য বড় ধরনের সংশোধনী আনা হয়েছে মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রায়। এমন একটি সময়ে এ সংশোধনী আনা হলো যখন পুরো বছরের মধ্যে ৬ মাস পার হয়ে গেছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের দ্বিতীয় ঢেউ এখনো চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তবে, গত ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে যেতে না পারলেও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ।


জানা গেছে, গত জুলাই মাসে এক বছরের মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু ডিসেম্বর শেষে বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৪ শতাংশ, যা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বনিম্ন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অর্থবছরের বাকি ৬ মাসের মধ্যে ইতোমধ্যে এক মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। বাকি ৫ মাসে বেসরকারি খাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব হবে না বলে তারা জানিয়েছেন। কিন্তু এর পরেও বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে, করোনার চলমান পরিস্থিতি উন্নতি হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কিছুটা বাড়তে পারে।

এদিকে, চলমান করোনার প্রাদুর্ভাবে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিম্নমুখী হলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ চাঙ্গা ছিল। করোনার নেতিবাচক প্রভাবে টিকতে না পেরে বিদেশ থেকে অনেকেই দীর্ঘ দিনের জমানো অর্থ নিয়ে দেশে চলে আসছেন। এর সামগ্রিক প্রভাব রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর পড়েছে। কিন্তু আমদানিপ্রবাহ ব্যাপকভাবে কমে যায়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকে। এমনি পরিস্থিতিতে অর্থবছরের বাকি ৬ মাসের জন্য নিট বৈদেশিক সম্পদের লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ দশমিক ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ায় নিট বৈদেশিক সম্পদের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও নিট অভ্যন্তরীণ সম্পদ, মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ ও ব্যাপক মুদ্রার সরবরাহ কমানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতিতে নিট অভ্যন্তরীণ সম্পদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছরের বাকি ৬ মাসের জন্য তা কমিয়ে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করেছে। মোট অভ্যন্তরীণ ঋণও ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। একই সাথে ব্যাপক মুদ্রার সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, করোনার প্রভাবে নিট অভ্যন্তরীণ সম্পদ, মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ ও ব্যাপক মুদ্রার সরবরাহ গত ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কমে গেছে। যেমন, নিট অভ্যন্তরীণ সম্পদের ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ডিসেম্বর শেষে অর্জন হয়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। আর মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ ১৯ দশমিক ৩ শতাংশের বিপরীতে অর্জন হয়েছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া করোনার কারণে জাতীয় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ইতোমধ্যে ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কারণে মুদ্রার সরবরাহ কমানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের মাধ্যমে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনছে বাজারে চাহিদা না থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা কিনে নিচ্ছে। এর বিপরীতে ছাড়া হচ্ছে স্থানীয় মুদ্রা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ হটমানি হিসেবে ধরা হয়। এক টাকার বিপরীতে কয়েকগুণ মুদ্রা স্ফীতি হয়।
গত ৬ মাসে বৈদেশিক মুদ্রা কিনে এমন প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছাড়া হয়েছে। সব মিলিয়ে মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে গেছে। আর মুদ্রার সরবরাহ বাড়লে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্যই মুদ্রার সরবরাহ কমানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্ত গত ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫০তম পর্ষদ সভায় নেয়া হয়েছে। যেখানে সভাপতিত্ব করেন গভর্নর ফজলে কবির।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top