মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে গাজীপুরের সাফারি পার্ক
রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:৪১; আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৪১

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গত এক মাসে ১১টি জেব্রা, একটি বাঘ ও একটি সিংহীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে এত অল্প সময়ের মধ্যে এত প্রাণী সেখানে মারা যায়নি। একের পর এক বন্যপ্রাণীর মৃত্যুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কটি যেন হয়ে উঠেছে ‘মৃত্যুপুরী’।
পার্কের সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ১১টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও একটি বাঘ ও সর্বশেষ বৃহস্পতিবার একটি সিংহীর মৃত্যু হয়। এভাবে একের পর এক বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পারেনি পার্ক কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় পার্কের তিন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এভাবে এত প্রাণীর মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করতে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পার্কের জেব্রা ও বাঘ সিংহীর মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। তবে আমার জানামতে বর্তমানে পার্কে কোনো পশুপাখি অসুস্থ নয়।
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে রয়েছে বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, হাতি, জেব্রা, জিরাফ, হরিণ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সাপ, কুমির, ময়ূর, প্রজাপতি, দেশে বিলুপ্ত প্রজাতির নীলগাই। এছাড়া রয়েছে বানর, জলহস্তী, রঙিন মাছ, কাছিমসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। এসব বন্যপ্রাণীর বেশির ভাগই উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে। বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ বসবাসের উপযোগী ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। কিন্তু হঠাৎ করে এভাবে বন্যপ্রাণীদের মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছে না। এজন্য দায়ি কে বা কারা—এই প্রশ্নই সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে অভিযোগ উঠেছে পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণেই একে অন্যকে ফাঁসাতে তারা হত্যা করছে এসব বন্যপ্রাণী—এমন সন্দেহই দানা বেঁধে উঠছে অনেকের মনে। এ পার্কে রয়েছে বিশাল শালবন। এছাড়াও রয়েছে ফলজ ও ঔষুধিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা। বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছিল এই সাফারি পার্ক। তবে এখন সেখানে ভিন্নচিত্র। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কটি যেন বন্যপ্রাণীদের মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এক মাসে এতগুলো জেব্রা, একটি বাঘ ও সিংহীর মৃত্যু হওয়ায় সাফারি পার্কে দর্শনার্থীর সংখ্যা দিনদিনই কমছে। গত এক সপ্তাহে দর্শনার্থী কমেছে কয়েক গুণ।
স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ হাজার দর্শনার্থী এলেও প্রাণীগুলোর মৃত্যুর পর তা কমতে থাকে। বুধবার সারাদিনে মাত্র ৫ শত দর্শনার্থী এসেছেন এ পার্কে। সুনসান নীরবতায় যেন চিরচেনা রূপ হারিয়েছে সাফারি পার্ক। কাউন্টার কর্মী, দোকানি ও হকাররা এক রকম অলস সময় কাটাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্কের বিভিন্ন জোনগুলোর সামনে দর্শনার্থীদের ভিড় নেই। দর্শনার্থী কম হলেও ব্যস্ত ছিলেন পার্কের লোকজন। নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের দ্বিতীয়বার যোগদান ও ক্লোজ হওয়া দুই কর্মকর্তার বিদায় উপলক্ষ্যে দিনভর ব্যস্ত ছিলেন তারা। দায়িত্ব হস্তান্তর ছাড়াও প্রয়োজনীয় কাজ বুঝে নেওয়া ও দেওয়ায় ব্যস্ত সময় পার করেন কর্মকর্তারা। এ দিন পার্কের ভেতর ও কোর সাফারির (যে এলাকায় বাঘ, সিংহ, জেব্রা, জিরাফ থাকে) বিভিন্ন পয়েন্টে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ দিতে দেখা গেছে। তাছাড়া বাঁশ দিয়ে জেব্রার পাল চড়ানোর জায়গায় নিরাপত্তা জোরদার করার কাজও চলছিল।
বৃহস্পতিবার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল পার্ক পরিদর্শন করেন। দীর্ঘ সময় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। বৈঠক শেষে তারা প্রাণীদের খাদ্য সংরক্ষণাগার পরিদর্শন করেন। যারা জেব্রার খাবার সংগ্রহ ও বিতরণের কাজ করেন, তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন তারা। মৃত জেব্রাগুলোর বিভিন্ন স্যাম্পল নিয়েও কথা বলতে দেখা গেছে তাদের। এসব কী প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা হয়েছে তা জানতে ময়নাতদন্ত কাজে সহায়তাকারী ব্যক্তির সঙ্গেও কথা বলেন তারা। তবে এ নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। তারা জানান, গবেষণার কাজ শেষ হলে আইইডিসিআরবি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে সব জানানো হবে, এর আগে এ বিষয়ে তারা কিছুই বলবেন না।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বড় রাথুরা ও সদর উপজেলার পীরুজালী মৌজায় খণ্ড খণ্ড শালবনের ৪ হাজার ৯০৯ একর বনভূমি বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে ৩ হাজার ৮১০ একর এলাকাকে সাফারি পার্কের মাস্টারপ্ল্যানের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। ২০১১ সালের ৪ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি একনেক কর্তৃক বর্ধিত আকারে ২১৯.৮৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয়।
সূত্র: ইত্তেফাক
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: