ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে রুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

রুয়েট প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২৫ ০০:০৬; আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৫ ০২:৩৪

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে শনিবার (১৯ এপ্রিল ২০২৫) রুয়েট প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

দেশের প্রকৌশল খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সাংবিধানিক ও পেশাগত বৈষম্যের প্রতিবাদে এবং ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক নৈরাজ্যের বিরুদ্ধেই এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে রুয়েট পুরকৌশল-১৯ সিরিজের শিক্ষার্থী শিহাব বলেন "বাংলাদেশের প্রকৌশল খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কিছু কাঠামোগত বৈষম্য বিএসসি ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীদের সাংবিধানিক অধিকার, মেধাও পেশাগত মর্যাদার পরিপন্থী। এই বৈষম্যের ফলে দেশের প্রকৌশল ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার সংকট ও ন্যায্যতার অভাব তৈরি হচ্ছে। আমরা তিনটি যুক্তিসম্মত ও অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য দাবি উপস্থাপন করছি:

১. ইঞ্জিনিয়ারিং ৯ম গ্রেড / Assistant Engineer / সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবার জন্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং অবশ্যই বিএসসি ডিগ্রি থাকতে হবে। কোনো কোটা বা সমমান পদ তৈরি করে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া যাবে না। কারণ, ৯ম গ্রেড একটি প্রথম শ্রেণির পদ, যেখানে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হওয়া উচিত বিএসসি। বিসিএস কিংবা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে যারা Assistant Engineer/সমমান পদে আসছেন, তাদের পাশ কাটিয়ে কোটাভিত্তিক পদোন্নতি মেধার চরম অবমূল্যায়ন। এটি সংবিধানের ২০(১) ও ২৯(১) অনুচ্ছেদেরও লঙ্ঘন।

২. টেকনিক্যাল ১০ম গ্রেড / Sub Assistant Engineer/ সমমান পদ সবার জন্ য উন্মুক্ত রাখতে হবে, যাতে ডিপ্লোমা ও বিএসসি ডিগ্রিধারী উভয়েই চাকুরীর পরীক্ষায় সুযোগ পান। বর্তমানে এই পদে প্রায় ১০০% কোটা শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের জন্য সংরক্ষিত, যা সাংবিধানিক ১৯(১), ২৭ ও সরকারি চাকুরী আইন ৭(১) লঙ্ঘন করছে। ৪ বছরের পূর্ণাঙ্গ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীদের জন্ য এই পদে আবেদনের কোনো সুযোগ না থাকা চরম বৈষম্য এবং মেধার চরম অবমূল্যায়ন।

৩. বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ "ইঞ্জিনিয়ার" পদবি ব্যবহার করতে পারবে না-এ জন্য আইন পাস করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। ডাক্তার, আইনজীবী, শিক্ষকের মতোই "ইঞ্জিনিয়ার" পদের জন্ য নির্ধারিত যোগ্যতা থাকা উচিত। IEB Act অনুযায়ী কেবলমাত্র বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররাই প্রকৃত "ইঞ্জিনিয়ার" হিসেবে স্বীকৃত। এই শব্দের অপব্যবহার বন্ধ করা জনস্বার্থে জরুরি।"

এসময় যন্ত্রকৌশল ২০ সিরিজের ছাত্র মারুফ বিল্লাহ রিফাত বলেন, "আজকে আমরা ক্লাস, ল্যাব, ভাইভা, পরীক্ষা-এসব বাদ দিয়ে রোদের ভিতর রাজপথে হাজির হয়েছি। আমরা মনে করি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার। ১০ম গ্রেডে আসতে হলে মেধার সমমূল্যায়নের পরীক্ষা দিয়ে আসেন, আমাদের কোনো কথা থাকবে না। কিসের ভিত্তিতে, কি অধিকারে, ১০ম গ্রেডে শুধুমাত্র কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ পেতে চান? আমাদের দাবি সুস্পষ্ট। ১০ম গ্রেডে সবাই অ্যাপ্লাই করতে পারবে, কিন্তু এটা সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে হতে হবে।"

যন্ত্রকৌশল ২০ সিরিজের ছাত্র তানজিমুল ইসলাম বলেন "আমরা আমাদের ৩ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি। প্রিয় ডিপ্লমা ভাইয়েরা আমরা আপনাদের শত্রু নই। আমরা চাই, আপনারা আপনাদের যোগ্যতা যতটুকু আছে, মেধা যতটুকু আছে, তার ভিত্তিতে আপনাদের যে চাকরি গুলো পাওয়া দরকার আপনারা তা পান। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই আমরা রাস্তায় নেমেছি আমাদের সম্মানের জন্য, আমাদের অধিকারের জন্য।"

উল্লেখ্য, শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ফ্যাকাল্টির ডীনসহ ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে ৩ দফা দাবির পক্ষে স্মারকলিপিও প্রদান করেন রুয়েটের শিক্ষার্থীরা।



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top