তোমার ঘাড় মটকে দেব

নির্বাচনী জনসভায় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ‘তোমার ঘাড় মটকে দেব, তুমি এখনও লোক চিনো নাই’ বলে হুমকি দিয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের নৌকার প্রার্থী নুরুজ্জামান আহমেদ। জনসভার ওই বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ ঢাকা মেইলের কাছে এসেছে।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে কালীগঞ্জ উপজেলার চামটারহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও কালীগঞ্জের ভোটমারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মর্তুজা হানিফকে উদ্দেশ্য করে হুমকি দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, ভুল্ল্যারহাটের জনসভায় গোলাম মর্তুজা হানিফা যে বাজে কথা বলেছেন, তাকে সতর্ক করে দিচ্ছি। এ ধরনের বাজে কথা যদি আর কোনো দিন বলো, তোমার ঘাড় মটকে দেব। তুমি এখনও লোক চিনো নাই। তোমার চরিত্রের ঠিক নাই। তুমি কাজের মেয়ের সঙ্গে অসৎ সম্পর্ক গড়ে তুলে নেতা সাজতে চাও?

আওয়ামী লীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হুমকি দিয়ে মন্ত্রীর এ বক্তব্য এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

তবে এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা হানিফ স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্যে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে অপমানজনক কথা বলেছেন। তাই মন্ত্রী তাকে সতর্ক করার জন্য কথাগুলো বলেছেন। মন্ত্রী হুমকি দেননি।

সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীর্ঘ ১০ বছরে কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন দাবি করে তিনি বলেন, সাধারণ ভোটাররা নৌকার সঙ্গেই আছেন। এই আসনে বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় হবে। কারও বিরোধীতায় নৌকা মার্কার ভোটে কোনও প্রভাব পড়বে।

এর আগে গত শুক্রবার ভুল্ল্যারহাট মাঠে মন্ত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল হকের ঈগল প্রতীকের জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন গোলাম মর্তুজা হানিফ।

সেই বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মর্তুজা।

তিনি বলেন, জামান সাহেব (নুরুজ্জামান আহমেদ) ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিন লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেই টাকা আজও পাইনি। তিনি এতই টাকাওয়ালা, তো আমার ঋণ পরিশোধ করলেন না কেন? এতই যদি ভালো মানুষ হন। তো সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না কেন?

প্রকাশ্যে জনসভায় ঘাড় মটকে দেওয়ার হুমকির বিষয়ে গোলাম মর্তুজা হানিফ বলেন, এ ঘটনায় আমি জিডি করব, নির্বাচন কমিশনে মামলা করব। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। আমি আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই। তিনি (মন্ত্রী) এত বড় মাপের মানুষ হয়ে না দেখে একটি মেয়ের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য কীভাবে করেন? তিনি কি আমার বাড়িতে ছিলেন যে কাজের মেয়ে সঙ্গে আমার সম্পর্ক তিনি দেখেছেন? তার চরিত্র নিয়ে তো কোনো কথা বলিনি। জানি না তা নয়। জনসভায় সব বলা যায় না।

টাকা ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের একজন আইন প্রণেতা ব্যক্তি জনসভায় গডফাদারের মতো বক্তব্য দেবেন, এটা তো হতে পারে না। নুরুজ্জামান ৯৬ সালে ঘড়ি মার্কায় নির্বাচনের সময় আমার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা হাওলাদ নেন। সেটা নিয়ে কথা বলায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে হুমকি দিয়েছেন। হাওলাদের টাকা ফেরত চাইতে চাইতে আমি বিরক্ত হয়েছি।

বক্তব্যের বিষয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে কল দেওয়া হলে তাকে পাওয়া যায়নি।