ওদের কান্নার শেষ নেই

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২১ ১৪:৫০; আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:২১

ছবি: সংগৃহিত

কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়েছে আগেই। বছর যায় আসে কিন্তু, তাদের অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয় না। তবুও আশা হয়তো প্রিয়জন একদিন ফিরে আসবে। এমন আশা নিয়ে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে হাজির হয়েছিলেন গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। স্বজনদের ফিরে পাবার দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তাদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ। পাশাপাশি বিশিষ্টজনদের অংশগ্রহণে আয়োজিত একটি আলোচনা অনুষ্ঠানেও গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।
আন্তর্জাতিক গুম বিরোধী দিবস উপলক্ষে এ কর্মসূচি পালন করে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা সেলিম রেজার বোন রেহানা বানু মুন্নি বলেন, আমার ভাইয়ের কোনো শত্রু ছিল না।

 

সে শুধু রাজনীতি করতো। এ কারণে তাকে গুম হতে হয়েছে। ৮ বছর ধরে আমরা তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমার ভাইয়ের জন্য আমার মা শয্যাশায়ী। তিনি বলেন, ভাই রাজনীতি করতো এটা যদি অন্যায় হয় তাহলে এখন যারা ক্ষমতাসীন তারাও তাহলে রাজনীতি ছেড়ে দিক। মুন্নি যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন তার হাতে তার ভাই পিন্টুর একটি ছবি ছিল। গুম হওয়া খালেদ হাসান সোহেলের স্ত্রী শারমিন সুলতানা বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে থেকে সোহেলকে তুলে নেয়া হয়। ৮ বছর ধরে তাকে আমরা খুঁজে বেড়াচ্ছি। কিন্তু কোনো সন্ধান পাইনি। সোহেল গুম হওয়ার সময় তার সন্তানের বয়স ছিল ৫ বছর। এখন তার ১৩ বছর বয়স। এখন সে তার বাবাকে খুঁজে বেড়ায়। সোহেলের বাবা তার সন্তানের চিন্তায় স্ট্রোক করেছেন। আমাদের একটাই দাবি সোহেলকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিন। ছাত্রদল নেতা সোহেলের ছোট্ট মেয়ে সাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, সবাই বাবার হাত ধরে স্কুলে যায়। আমি যেতে পারি না। আপনারা আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।

মানববন্ধনে অংশ নেয়া গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনের ছবি হাতে হাজির হয়েছিলেন। তারা তাদের বক্তব্যে প্রিয়জনের সন্ধান দাবি করেন সরকারের কাছে।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখানে অনেকে আছেন যে, ৯ বছর ১০ বছর ধরে তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী, ঢাকার কমিশনার চৌধুরী আলমসহ ৫ শতাধিক নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছেন। ইলিয়াস আলীর মেয়ে এখন বড় হয়েছে, সে এখনো দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থা

কে যে, কখন তার বাবা ফিরে আসবে? বাবা ফিরে আসে না। বাচ্চাদের আহাজারি আপনারা শুনলেন।
তিনি আরও বলেন, আপনারা (সরকার) বলেন যে, এখানে এগুলো (গুম) হয় না। তাহলে গুম হওয়া মানুষগুলো গেল কোথায়? দায়িত্ব তো আপনাদের। খুঁজে বের করেন তাদেরকে। তাদের পরিবারের কাছে একে একে ফেরত দিন। এই দায়িত্ব অবশ্যই আপনাদেরকে দিতে হবে। অন্যথায় ইতিহাসের কাঠগড়ায় আপনাদেরকে তার জবাব দিতে হবে। জনগণের আদালতে আপনাদের বিচার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এমন দেশ, এমন রাষ্ট্র আমরা বানালাম যেখানে আমার সন্তানেরা নিখোঁজ হয়ে যাবে, তাদের হদিস কেউ খুঁজে পাবে না এবং সেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী লোকেরা তাদেরকে তুলে নিয়ে যাবে সরকার তার কোনো জবাব দেবে না। আমরা তো আমাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। অসহায়ত্বের বেদনার যন্ত্রণা আমাদের কুঁরে কুঁরে খায়।


মির্জা ফখরুল বলেন, এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সরকার আজকে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বেআইনিভাবে অবৈধভাবে গোটা জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের সংবিধানকে ধ্বংস করেছে, গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে, গোটা প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে। সেজন্য আমাদের উচিত হবে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করে একটা সত্যিকার অর্থেই জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। যে সরকার এই অসহায় বাচ্চাগুলোর, এই পরিবারগুলোর যারা হারিয়ে গেছেন তাদেরকে বের করে নিয়ে আসার জন্য তারা কাজ করবে।
বিএনপি’র মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, গুম হওয়া আনোয়ার হোসেনের মেয়ে রাইসা, মো. সোহেলের মেয়ে সাবা, মো. কাউসারের মেয়ে মীম, সেলিম রেজার বোন রেহানা আখতার মুন্নী, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন আফরোজা ইসলাম আখি ও খালেদ হোসেনের মেয়ে শাম্মী আখতার নিপা বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে ‘মায়ের ডাক’ শিরোনামে এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, একটা প্রশ্ন মনের মধ্যে আসে যে, গুম কারা করে? এই গুম সরকারি বাহিনী করেছে, সরকার করেছে, এটা বিশ্বাস করার বহু কারণ রয়েছে? যদি গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সরকারি বাহিনী না করে থাকে, তাহলে যারা গুম হয়েছেন-তাদের খুঁজে বের করছেন না কেন? কেউ কেউ তো গুম হয়েছেন ১০ থেকে ১২ বছর হয়ে গেছে।


তিনি আরও বলেন, কেন খুঁজে বের করা হচ্ছে না নিখোঁজ ব্যক্তিরা কোথায়? কারা জড়িত, তাদের বের করা হচ্ছে না। এমনকি এ ব্যাপারে মামলা করতে গেলে সেটা গ্রহণ করতে চান না। নিজেরা না করে থাকলে মামলা গ্রহণ করার কথা। যখন আপনি নিজে করবেন, তখন মামলা নিতে চাইবেন না।
সভায় উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম প্রমুখ।



বিষয়: গুম


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top