পথ শিশুদের মাঝে আশার আলো ছড়াচ্ছে উন্মুক্ত স্কুল

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:৫১; আপডেট: ২ মে ২০২৪ ১৪:২৬

সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে আশার আলো ছড়াচ্ছে কারিতাসের উন্মুক্ত স্কুল।

রাজশাহীর মহিষবাথান উত্তপাড়া বস্তির বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে সেফাউল। ভ্যান চালক বাবা আর অন্যের বাড়ীতে কাজ করে ছয় সদস্যের সংসার কোন রকমে চালানো মা এর পক্ষে সেফাউলের পড়া শোনার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।

যার ফলে শৈশবের মূল্যবান সাত বছর অতিবাহিত হলেও স্কুলের অঙ্গিনার যাবার সুযোগ হয়নি শিক্ষা-বঞ্চিত এই শিশুর। পথে-ঘাটে অলস সময় আর শিশুশ্রমের মধ্যে জড়িয়েই দিন কাটতো সেফাউলের।
তবে সম্ভাবনাময়ী এই শিশুর স্বপ্ন পুরণে এগিয়ে এসেছে কারিতাস বাংলাদেশ। চলতি বছরে কারিতাস বাংলাদেশের আলোকিত শিশু প্রকল্পের আওতায় জরিপের মাধ্যমে সেফাউলকে পথশিশু হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয় এবং প্রকল্পটির আওতায় পরিচালিত মহিষবাথান উন্মুক্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে এই শিশুর জীবনে নানা ইতিবাচক পরিবর্তনের ছোয়া লেগেছে। সে এখন স্কুলে আসার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন। নিজের নাম, বানান করে পড়া ও লেখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে রপ্ত করেছেন এই শিশু।

সেফাউল বলেন, প্রকল্পের স্কুল থেকে স্কুল ব্যাগ, খাতা,পেন্সিল, স্কেল, হার্ডবোর্ড পেয়ে খুবই খুশি হয়েছি। আমার লিখতে খুবই ভালো লাগে। আমি ভালো মানুষ হতে চাই।
রাজশাহী রাজপাড়ার বহরমপুর বস্তিতে বসবাস সাত বছর বয়সী জান্নাতের। মাসিক ৬ হাজার টাকা আয় করা ভ্যান চালক বাবার পক্ষে জান্নাতের পড়াশোনা চালানোর সামর্থ্য ছিল না বললেই চলে। এই শিশুটিকে কারিতাস আলোকিত শিশু প্রকল্পের বহরমপুর উন্মুক্ত স্কুলে ভর্তি নেয়া হয়। কয়েক মাসে ব্যবধানে বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালা ও সংখ্যা লেখতে পারা, অঙ্কন করাসহ নানারকমের ছড়া শিখেছেন এই শিশু। জান্নাতের স্বপ্ন সে একদিন ডাক্তার হবেন। জান্নাতের মা মমতাজ বলেন, আলোকিত শিশু প্রকল্পের উন্মুক্ত স্কুলে আমার মেয়ে এক নতুন জীবন পেয়েছে। সেখানে সে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার সুযোগ পেয়েছে। আমি নিজেও এখন চিন্তামুক্ত থাকতে পারি।

শুধু সেফাউল আর জান্নাত নয় রাজশাহীর কয়েকশো পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুর স্বপ্নের সারথি হয়ে দাঁড়িয়েছে আলোকিত শিশু প্রকল্প। উন্মুক্ত স্কুল ও ড্রপ-ইন-সেন্টারের মাধ্যমে এইসব শিশুকে সমাজের মূলধারার সঙ্গে যুক্ত করতে পড়াশোনা, নিরাপদ অবস্থান ও খাওয়াদাওয়াসহ নানা রকমের সেবা দিয়ে যাচ্ছে আলোকিত শিশু প্রকল্প।

২০২১ সাল থেকে কারিতাস জার্মানির সহায়তায় বহরমপুর বস্তি এলাকার পথশিশুদের নিয়ে কাজ শুরু করে আলোকিত শিশু প্রকল্প। এ এলাকার যেসব পথশিশু পড়াশোনাসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত তাদের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে প্রকল্পের কর্মীরা। বর্তমানে রাজশাহীতে আলোকিত শিশু প্রকল্পের দুইটা উন্মুক্ত স্কুল চালু আছে। প্রতিদিন ষাট জন পথশিশু স্কুলগুলোতে পড়তে আসেন। দুপুর ২টা থেকে শুরু করে বিকেল ৫ টা পর্যন্তু তাদের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয়। ৬ থেকে ১২ বছরের যেকোনো পথশিশু কেজি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত এখানে পড়াশোনা সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে মহিষবাথান উত্তরপাড়া উন্মুক্ত স্কুলের শিক্ষক আশা আগ্নেশ তপ্ন বলেন, সুযোগ পেলে শিশুরা অনেক ভালো কিছু করতে পারবে। আমাদের পাশাপাশি পরিবারের সুদৃষ্টিতে শিশুরা মুলধারায় ফিরে আসবে।

স্কুলের কার্যক্রম বিষয়ে আলোকিত শিশু প্রকল্পের জুনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মোঃ ফরিদুল ইসলাম বলেন, কারিতাস জার্মানির অর্থায়নে উন্মুক্ত স্কুলের শিশুরা তাদের জীবনকে সুন্দর করতে পারবে। আমরা সকলের সহযগিতায় এই সকল শিশুদের মুলধারায় ফিরিয়ে আনার চেস্টা চালিয়ে যাবো।###

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top