ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্যবসায় সর্বশান্ত যুবক, দেনা মেটাতে অপহরণের নাটক

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:০২; আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:২৩

২০১৪ সাল থেকে অনলাইনে ফরেন এক্সচেঞ্জ ফরেক্স ফ্যাক্টরি ব্যবসায় নামেন রাজশাহীর যুবক মিজানুর রহমান (২৬)। কিছুদিন মুনাফাও কুড়িয়েছিলেন। লোভে পড়ে ধাপে ধাপে বিনিয়োগ করেন বিপুল অর্থ। ব্যবসা চালাতে গিয়ে তিনি নানা জনের কাছে ৩১ লাখ টাকা ঋণ নেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত পড়েন লোকসানে। পুঁজি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে যান তিনি। পাওনাদারদের অর্থ পরিশোধে বেছে নেন অভিনব কৌশল। আত্মগোপনে গিয়ে অপহরণের নাটক সাজিয়েছেন মিজানুর রহমান।

মুক্তিপণের নামে স্ত্রী, শাশুড়ি, ভাইসহ স্বজনদের কাছে চেয়েছিলেন ২০ লাখ টাকা। সেই টাকা পেলে আবারও ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্যবসা শুরুর পরিকল্পনা ছিল তার।

কিন্তু মিজানুরের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিল রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।

বুধবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে নিজ কার্যালয়ে এই অভিযানের আদ্যপান্ত জানান নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল। এ সময় নগর গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

মিজানুর রহমান জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার কাজীহাটা ধরমপুর এলাকার এমারত আলীর ছেলে। তিনি নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার টুলটুলি পাড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। ১২ ডিসেম্বর মাগরিব নামাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকেই নিরুদ্দেশ। পরে নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার মা মনিরা বেগম।

উপ-পুলিশ কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, নিখোঁজ ডায়েরির পর আরএমপি কমিশনারের নির্দেশে মিজানুর রহমানের অবস্থান সনাক্তসহ উদ্ধারের কাজ শুরু করে ডিবি পুলিশ। এক পর্যায়ে নিখোঁজ মিজানের পরিবার পুলিশকে জানায়, ৬-৭ জনের একটি দল কাশিয়াডাঙ্গা মোড় থেকে অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গেছে। ‍

ওই সময় নিজের মোবাইল ফোন থেকে ম্যাসেজ এবং ফোন করে স্বজনদের নিজের জিম্মি দশার কথা জানান মিজান। মুক্তিপণ হিসেবে নিজের ডাচ বাংলা অ্যাকাউন্টে ২০ লাখ টাকা জমা দিতে বলেন। পরে ১০ লাখ এবং শেষ ৫ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। এই টাকা না পেলে অপহরণকারীরা তাকে হত্যা করবে এমন তথ্য দেন স্বজনদের।

উপ-পুলিশ কমিশনার আরও জানান, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর হওয়ায় ডিবি পুলিশের দলটি আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মিজানুর রহমানের অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা চালায়। কখনও ঢাকা, কখনো চট্টগ্রামে, এমনকি কক্সবাজার ও সিলেটে তার অবস্থান দেখায়। সবশেষ মঙ্গলবার রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিজানুর রহমান পুলিশকে জানান, অপহরণকারী চক্র তার অনলাইন অ্যাকাউন্টে থাকা ৭৮ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। এর পর মাইক্রোযোগে তাকে অর্ধ অচেতন অবস্থায় গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় ফেলে গেছে। কিন্তু পরে স্বীকার করেন, তিনি আদতে অপহরণ হননি। তার বিরুদ্ধে কাশিয়াডাঙ্গা থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান এই ডিবি পুলিশ কর্তা।

 

এসকে




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top