আশা জাগিয়েও পারলো না বাংলাদেশ

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২১ ০১:৪৯; আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৪৮

সংগৃহীত ছবি

টম লাথামের দুটি ক্যাচ মিস। সাথে শেষের দিকে আলগা ফিল্ডিং। বাউন্ডারি হলো হুড়মুড়িয়ে। যাকে বিদায় করতে পারলে বাংলাদেশের জয়ের রাস্তা হতো সুগম। সেই টম লাথাম থাকলেন ক্রিজে বীরদর্পে। ফলাফল, পারলো না বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে রেকর্ড গড়ে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। টানা দুই জয়ে সিরিজ করায়ত্ত করলো স্বাগতিকরা (২-০)।

আগে ব্যাট করতে নেমে তামিম-মিঠুনের ব্যাটে ৬ উইকেটে ২৭১ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে লাথামের সেঞ্চুরিতে ১০ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে নিউজিল্যান্ড। হ্যাগলি ওভাল মাঠে ২৬০ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ছিল নিউজিল্যান্ডের। এবার ওই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ডই গড়ল লাথাম শিবির।

জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নামা নিউজিল্যান্ডকে শুরুতে চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। সবচেয়ে ভয়ংকর মার্টিন গাপটিলকে খোলস ছেড়ে বের হতে দেয়নি টাইগাররা। দলীয় ২৮ রানের মাথায় কিউই ওপেনারকে দারুণ এক স্লোয়ারে সাজঘরে পাঠান মোস্তাফিজুর রহমান। ২৪ বলে ২০ রান করেন গাপটিল। বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি।

দলীয় ৪৩ ও ৫৩ রানে তরুণ তুর্কি মেহেদী হাসানের জোড়া আঘাত। বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনায় লাগে জোর হাওয়া। প্রথমে হেনরি নিকোলসকে সরাসরি বোল্ড। পরে উইল ইয়ংও বোল্ড। ১৮ বলে এক চারে ১৩ রান করেন নিকোলস। সাত বলে এক রান ইয়ংয়ের।

এরপর থেকে ম্যাচের চিত্রে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। অধিনায়ক লাথামের সাথে কনওয়ের জুটি আস্তে আস্তে চাপ বাড়াতে থাকে টাইগার শিবিরে। রানও আসতে থাকে তরতরিয়ে। নিউজিল্যান্ডের জয়ের ভিত্তিই মূলত গড়ে দেয় এই জুটি। এই জুটি যোগ করে ১১৩ রান।

তামিম ইকবালের দারুণ এক থ্রোয়ে এই জুটি যখন ভাঙে তখন নিউজিল্যান্ডের রান ১৬৬। ৯৩ বলে ৭২ রান করে রান আউট হয়ে ফেরেন কনওয়ে। তার ইনিংসে ছিল সাতটি চারের মার।

অপর প্রান্তে থাকা কিইউ অধিনায়ক টম লাথাম তখনো দুরন্ত। সঙ্গী তখন জেমস নিশাম। রান বাড়তে থাকে হু হু করে। এর মধ্যে বাংলাদেশ শিবিরে হতাশা যোগ করে কিছু মিস ফিল্ডিং ও ক্যাচ। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম লাথামের দুটি ক্যাচ মিস বাংলাদেশকে রেস থেকে ছিটকে দেয়। একটি ক্যাচ নিতে পারেননি উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহীম। আরেক ক্যাচ নিজের বলে নিতে পারেননি মেহেদী হাসান।

তার খেসারত ভালোমতোই দিয়েছে বাংলাদেশ। লাথাম পেয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত দলকে জিতিয়েই তিনি মাঠ ছাড়েন বীরদর্পে। এর আগে জেমস নিশামকে বিদায় করে মোস্তাফিজুর রহমান কিছুটা আলো ছড়ালেও তা ধোপে টেকেনি। ৩৪ বলে ৩০ রান করা নিশামের ক্যাচ নেন বাউন্ডারি লাইনে সৌম্য সরকার।

১০৮ বলে ১১০ রানের জ্বলজ্বলে ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন নিউজিল্যান্ড অধিনায় টম লাথাম। তার ইনিংসে ছিল ১০টি চারের মার। নেই কোনো ছক্কা। কতটা সতর্ক নিয়ে খেলেছেন তিনি, তা সহজেই অনুমেয়। ৬ বলে দুই চারে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন ড্যারেল মিশেল।

বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান। দারুণ হার না মানা সেঞ্চুরির সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম লাথাম।

এর আগে টস হেরে বাংলাদেশের শুরুটা বড্ড হতাশারই। দলীয় ৪ রানে বিদায় নেন ওপেনার লিটন দাস। দ্বিতীয় ওভারে হেনরির বলে ইয়ংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। চার বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি লিটন।

শুরুর হতাশার বদ্ধভূমিতে ফুল ফুটাতে শুরু করেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তার সাথে ছিলেন সৌম্য সরকার। দু’জনের বিচক্ষণ জুটিতে বাংলাদেশ পায় বড় স্কোরের ভিত্তি। বলের চেয়ে রান কম হলেও ক্রিজে থাকাটা তামিম-সৌম্য শ্রেয় মনে করেছেন। আস্তে আস্তে তার সুফল পেতে শুরু করে বাংলাদেশ।

এই জুটিতে আসে মূল্যবান ৮১ রান। হঠাতই ছন্দপতন। সান্টনারের বলে লাথামের স্টাম্পিংয়ের শিকার সৌম্য। ৪৬ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় তার রান ৩২। অপর প্রান্তে তামিম তখনো দুরন্ত। আস্তে আস্তে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করেন তিনি। ৫০ বলে করেন ক্যারিয়ারের ৫০তম ফিফটি, বাংলাদেশের প্রথম কোনো ব্যাটসম্যান হিসেবে।

একটা সময় মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরিও পেয়ে যাবেন। কিন্তু না। দুর্ভাগ্যজনক এক রান আউটে থামে তামিমের পথচলা। ব্যক্তিগত রান তখন তামিমের ৭৮। দলীয় রান ১৩৩। অপর প্রান্তে মুশফিক। নিশামের বলে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে ঠেকিয়ে রান নিতে চাইলেন, বল স্টাম্পের কাছে। মুশফিকের চেয়ে অপর প্রান্তে তামিমের দৌড়ের গতি ছিল বেশি। ফলে মুশিও দৌড়ালেন। কিন্তু তামিম পৌঁছাতে পারলেন না। দৌড়ে মাটিতে পড়ে থাকা বল নিশাম পায়ের সাহায্যে আলতো ধাক্কায় ভাঙলেন স্টাম্প। রান আউট তামিম। ১০৮ বলের ইনিংসে তামিম হাঁকান ১১টি চার, নেই কোনো ছক্কা। ভাঙে মুশফিকের সাথে তামিমের ৪৮ রানের জুটি।

এরপর মুশফিকের সাথে রসায়নটা দারুণ জমে ওঠে মোহাম্মদ মিঠুনের। মুশফিক একটু ধীরলয়ে থাকলেও মিঠুন ছিলেন মারমুখি। চার-ছক্কায় রানের গতি বাড়াতে থাকেন তিনি। এই জুটি দলকে নিয়ে যান প্রায় দুই শ’-এর কাছাকাছি। ১৮৪ রানের মাথায় এই জুটি ভাঙেন পেসার সান্টনার। ফেরান ৫৯ বলে তিন চারে ৩৪ রান করা মুশফিককে। ভাঙে ৬১ বলে ৫১ রানের জুটি।

এরপর মাহমুদউল্লাহর সাথে মিঠুনের জুটিটা বাংলাদেশের ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি পেয়ে যান মিঠুন। দলীয় ২৪৭ রানে এই জুটি ভাঙেন জেমিসন। ১৮ বলে ১ চারে ১৬ রানে গাপটিলের হাতে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ। এই জুটিতে আসে ৪৫ বলে ৬৩ রান।

কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন মেহেদী হাসানও। তবে শেষ অবধি ক্রিজে টিকে ছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। ৫৭ বলে অপরাজিত থাকেন ৭৩ রানের জ্বলজ্বলে ইনিংস খেলে। ছয়টি চারের পাশাপাশি মিঠুন ছক্কা হাকিয়েছেন দুটি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এটি মিঠুনের। আগেরটি ছিল ৬৩ রানের।

হাসান মাহমুদের বদলে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জায়গা পাওয়া অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন ৪ বলে থাকেন ৭ রানে অপরাজিত। ৫০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ২৭১ রান।

বল হাতে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সান্টনার দুটি, জেমিসন, হেনরি ও বোল্ট নেন একটি করে উইকেট।
আগামী ২৬ মার্চ ওয়েলিংটনে হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচ। যে ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচ।

 

 

 

 

 




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top