ওসি-পত্নীর শখে ধ্বংস যুবকের জীবন

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারী ২০২৪ ১২:০২; আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ০১:১১

ছবি: সংগৃহীত

হাফিজুর রহমান তখন শরীয়তপুরের নড়িয়া থানার ওসি। বর্তমানে কর্মরত জাজিরা থানায়। তার স্ত্রীর শখ হয়েছে তিনি ড্রাইভিং শিখবেন। ড্রাইভিং শিখতে গিয়ে রাস্তার উল্টো দিকে দ্রুতগতিতে তার গাড়িটি আঘাত হানে এক মোটরসাইকেলে। মোটরসাইকেল তো ভাঙেই, ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে যায় এর চালক দ্বীন ইসলামের (৩৫) ডান পায়ের হাড়। দ্বীন ইসলাম ভাড়ায় এ মোটরসাইকেল চালিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ করে আসছিলেন।

ঘটনাটি ঘটে গত বছরের ১৯ আগস্ট সকাল ১০টায় শরীয়তপুর সদরের চিকন্দি ইউনিয়নের টাউন চিকন্দি এলাকায়। দুর্ঘটনার পরও ওসির স্ত্রী গাড়িটি না থামিয়ে দ্রুত পালাতে চেষ্টা করলে পাশের গঙ্গানগর বাজারে স্থানীয়রা গাড়িটিকে আটক করেন। তবে ড্রাইভিং সিট থেকে নেমে ওই নারী নিজের পরিচয় দিয়ে হম্বিতম্বি করেন এবং লোকজনকে ভয়ভীতি দেখান।

এই খবরে ওসির কিছুটা ‘দয়া’ হয়। তিনি আহত দ্বীন ইসলামকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ার অনুরোধ করেন। এ ছাড়া চিকিৎসার সব খরচ বহন করারও আশ্বাস দেন। স্বজনসহ স্থানীয়রা দ্বীন ইসলামকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে সেখানে জাজিরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মতিনের মাধ্যমে কথামতো ১০ হাজার টাকাও পাঠিয়ে দেন।

পরে এসআই মতিনের সহায়তায় উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে দ্বীন ইসলামকে পাঠানো হয় ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল)। অ্যাম্বুলেন্স খরচ বাবদ আরও ১০ হাজার টাকা দেন ওসি হাফিজুর রহমান। এমনটাই জানিয়েছেন এসআই মতিন। পঙ্গু হাসপাতালে দ্বীন ইসলাম ২০ দিন চিকিৎসা নিলেও এ সময়ে এক দিনের জন্য খোঁজ নেননি ওসি বা তার স্ত্রী। অথচ ধারদেনা করে চিকিৎসার পেছনে দ্বীন ইসলামের ৬ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। দ্বীন ইসলামের বাবা বৃদ্ধ আহসান উল্লাহ মাদবর কয়েকবার ওসির সঙ্গে দেখা করতে গেলেও তিনি দেখা দেননি। উল্টো ওসি লোকমারফত তাদের এ নিয়ে বেশি ‘বাড়াবাড়ি’ যেন না করেন, সেই হুমকি দেন।

দ্বীন ইসলাম এখন পঙ্গু হয়ে বাড়িতে বসে আছেন। তার একমাত্র আয়ে চলত বাবা আহসান উল্লাহ মাদবর ও স্ত্রী রেহানা বেগম, মাদ্রাসাপড়ুয়া ছেলে মেহেদী হাসান (১৩) ও মেয়ে মার্জিয়াসহ (৫) পাঁচ সদস্যের সংসার। একদিকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঋণের বোঝা, অন্যদিকে পঙ্গু হয়ে কর্মহীন। পুরো পরিবারটি এখন পড়েছে অথৈ সাগরে। প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনরা চাল-ডাল দিয়ে এখনো সহায়তা করে যাওয়ায় কোনোমতে বেঁচে আছেন তারা।

ছয় মাস ধরে পঙ্গু হয়ে ঘরে পড়ে থাকা দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘ধারদেনা করতে করতে এরই মধ্যে অনেক টাকা ঋণী হয়ে গেছি। সংসার চালানোর জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় বাজার করারও টাকা-পয়সা নেই। এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে বেঁচে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তারা (পুলিশ) প্রশাসনের লোক বলে কি আমি ন্যায়বিচার পাব না? আমি এর সুষ্ঠু বিচার এবং ক্ষতিপূরণ চাই। এজন্য আমি এসপি স্যারের কাছে যাব।’

দ্বীন ইসলামের স্ত্রী রেহানা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে যা রোজগার করতেন, তা দিয়ে আমাদের সংসার মোটামুটি ভালোই চলছিল। কিন্তু ওসি হাফিজুর রহমানের স্ত্রীর শখের বলি হয়ে স্বামী আমার পঙ্গু হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। টাকার অভাবে এখন চিকিৎসাও করাতে পারছি না। অথচ ওসি আশ্বাস দিয়েছিলেন যাবতীয় খরচ তিনি বহন করবেন।’

এ বিষয়ে ওসি হাফিজুর রহমানের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ওই গাড়িটি আমার ওয়াইফের নয়। ওটা একটা ভাড়া গাড়ি ছিল। আমার ওয়াইফও গাড়িটি চালাচ্ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আহত দ্বীন ইসলামের জন্য আমি সবকিছু করতে রাজি আছি। সে কোথায় আছে, তার বাবাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) মো. আহসান হাবিব বলেন, ‘এ ঘটনা আমি আজ আপনার কাছ থেকে শুনলাম। তা ছাড়া গত আগস্টের শেষ দিকে আমি এখানে যোগদান করেছি।’




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top