রাজশাহী ও নবাবগঞ্জের মোকাম প্রায় ক্রেতাশূন্য

রাজশাহী অঞ্চলে আমের বাজারে দাম চড়া

বিশেষ প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২০ ২১:৫০; আপডেট: ১৪ জুন ২০২০ ১৭:৪৮

ফলের রাজা আমের মওসূম শুরু হলেও রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজার ও মোকামগুলো প্রায় ক্রেতাশূন্য। যদিও শুরুতে বাজারে আমের দামও বেশ চড়া। ট্রেন ও কুরিয়ারযোগে পরিবহন শুরু হলেও তাতে চলছে ঢিলেঢালা অবস্থা। মূলত করোনার প্রভাবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় হতাশায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশ কিছু স্থানের বাজারগুলোতে আমের বেচাকেনা শুরু হয়েছে। কিন্তু ক্রেতা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। এসত্ত্বেও আমের দাম বেশ চড়া। ৪০ কেজি গোপালভোগ ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা, ক্ষিরসাপাত ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা হাঁকা হচ্ছে। হিমসাগরের দাম চাওয়া হচ্ছে ৩০০০ টাকা। রাজশাহীর বাজারে গুটিজাতের আম নামতে শুরু করে গত মাসের মাঝামাঝি। আর ২০ মে থেকে নামাতে থাকে গোপালভোগ জাতের আম। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জাতের আমও নামতে থাকবে চলতি মাসের পুরোটা জুড়ে। এদিকে আম বাজারজাত হওয়ার মওসূম চলতে থাকলেও পাইকারী ক্রেতাও অন্যবারের চেয়ে কম। করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকেই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাছ থেকে আম নামানোর সময়পঞ্জি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাইরের ব্যবসায়ীদের সরকারিভাবে থাকার ব্যবস্থা করার কথাও জানানো হয়েছে। রাজশাহীর ঐতিহ্য আমের কোনো ক্ষতি যেন না হয় সেদিকে প্রশাসনের নজর আছে বলেও জানানো হয়েছে। কোনো বাগান মালিকও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন তাও লক্ষ্য রাখার কথা বলা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পরিস্থিতি
আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থানীয় বাজারে সুমিষ্ট পরিপক্ক আম গোপালভোগ ও খিরসাপাত আসা শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আবহাওয়াজনিত কারণে দেরিতে আম পাকতে শুরু করেছে। তবে তারা বলছেন, করোনার কারণে বাজারে ক্রেতারা কম আসছেন। আমবাজার ঘুরে দেখা যায়, গুটিকয়েক ব্যবসায়ী গোপালভোগ ও খিরসাপাত আম বাজারে নামিয়েছেন। আম বিক্রির জন্য অস্থায়ীভাবে টিনসেড ঘর নির্মাণ এবং আমের ঝুড়ি থরে থরে সাজানো রয়েছে। একজন আম ব্যবসায়ী জানান, এ জেলার সুমিষ্ট আমের চাহিদা থাকলেও ক্রেতাও যৎসামান্য, করোনার কারণে আম তেমন নামেনি। তবে এ বছর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে গোপালভোগ আম ঝরে পড়ার কারণে বাজারে এ আমের আমদানি কম। ঢাকার কিছু পুরাতন পাইকার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমের চাহিদা পাঠানোর পর ঢাকায় আম প্রেরণ করা হচ্ছে। আরেক আম ব্যবসায়ী জানান, আম পরিপক্ক হওয়ার পরেই বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। বাজারে কিছু গোপালভোগ আম এসেছে, দাম মোটামুটি ভাল পাওয়া যাচ্ছে। গতবছর আমের দাম কম ছিল, এবার প্রথমেই ২৭০০ থেকে ৩০০০ টাকা মণ। এদিকে খিরসাপাত আম ২৩০০ থেকে ২৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ক্রেতারা বাজারে না আসলেও মোবাইলফোনের মাধ্যমে তারা চাহিদা দিচ্ছেন এবং ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, এবার জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন।
আম পরিবহন পরিস্থিতি
আমের উল্লেখযোগ্য মোকাম রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম পরিবহনের জন্য ইতোমধ্যে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’ নামে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী-ঢাকা রুটে একটি ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে সম্প্রতি। সিডিউল অনুয়ায়ী ট্রেনটি প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিকেল ৪টায় ছেড়ে রাজশাহী পৌঁছাবে ৫টা ২০ মিনিটে। এখানে ৩০ মিনিট থেমে ৫টা ৫০ মিনিটে যাত্রা শুরু করবে। এরপর ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ১টায়। ঢাকা থেকে ট্রেনটি রাত ২টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে আসবে। রাজশাহী পৌঁছাবে সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে। এখানে ২০ মিনিট থেমে ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। পৌঁছাবে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে। ট্রেনটিতে মোট ছয়টি ওয়াগন থাকছে। প্রতিটি ওয়াগনে ৪৫ হাজার কেজি আম নেয়া যাবে। তবে শুধু আম নয়; সব ধরনের শাকসবজি, ফলমূল, ডিমসহ কৃষিপণ্য, বাড়ির আসবাব এবং রেলওয়ের আইনে পার্সেল হিসেবে বহনযোগ্য সব সামগ্রী বহন করা হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে এসে ট্রেনটি আমনূরা বাইপাস, কাকনহাট, রাজশাহী, সরদহ, আড়ানি ও আব্দুলপুর বাইপাস স্টেশনে থামে। এসব স্থানে আমসহ পার্সেল পণ্য ট্রেনে তোলা হয়। টাঙ্গাইল, মির্জাপুর, কালিয়াকৈর, জয়দেবপুর, টঙ্গী, বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও ও কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনটি থামে। এই স্থানগুলোতে পণ্যগুলো খালাস করা হয়ে থাকে। ফেরার পথে ট্রেনটি তেজগাঁও, টঙ্গী, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ এম মনসুর আলী, চাটমোহর ও রাজশাহী স্টেশনে থামছে। তবে যাত্রাপথে কোথাও সাধারণ যাত্রী এ ট্রেনে তোলা হচ্ছে না। আমসহ অন্য পার্সেল তুলেতে কুলিদের জন্য ভাড়াও নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ট্রেনে রাজশাহী স্টেশন থেকে এক কেজি আম ঢাকার বিমানবন্দর, তেজগাঁও বা কমলাপুরে নিতে খরচ পড়ছে ১ টাকা ১৮ পয়সা। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এক কেজি আমের ভাড়া লাগছে ১ টাকা ৩১ পয়সা। রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী, ট্রেন ছাড়ার আগে যে কেউ তাঁদের মালামাল বুকিং দিতে পারেন। তবে রেলসূত্রে জানা গেছে, ট্রেনযোগে আম পরিবহনের বিষয়টি এখনো জনপ্রিয় হয়নি। ফলে পরিবহণ ক্ষমতা অনুয়ায়ী মালামাল বুকিং হচ্ছে না। এজন্য করোনা পরিস্থিতির প্রভাব অনেকটা দায়ি। আমের পরিপূর্ণ মওসূম জমে উঠলে ট্রেনে আম ও কৃষিপণ্য পরিবহন জনপ্রিয়তা পাবে বলে তারা আশা করছেন।
অন্যদিকে কুরিয়ার সার্ভিসে আম পরিবহন শুরু হলেও তা এখনো জমে উঠেনি। কুরিয়ারে প্রতিকেজি আমের জন্য ১৫ টাকা থেকে থেকে ১৮ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। নতুন করে লকডাউন শুরু হওয়ায় এই পরিবহন ব্যবস্থা কতোটা অব্যাহত রাখা যাবে সে নিয়েও আশংকা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে মনে করা হচ্ছে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top