তালের পুষ্টি গুণ

রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:২৫; আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০১:৫৩

ছবি: সংগৃহীত

আমাদের চারপাশের উদ্ভিদের মধ্যে তাল গাছ খুবই পরিচিত। এই তাল গাছের ফল হলো তাল। শ্রাবণ-ভাদ্রমাসে অনেক পাকা তাল বাজার হাটে প্রচুর পাওয়া যায়। পাকা তাল দিয়ে সাধারণত বড়া, পায়েস, ক্ষীর, লুচি, মিছরি, প্যাটালি, পিঠা, শুঁড়, ইত্যাদি বানিায়ে খাওয়া বেশ মজাদার। তাল একটি মধুর, স্বাদপূর্ণ, স্বাস্থ্যকর ও প্রাকৃতিকভাবে পুষ্টিকর ফল। যা মানব দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে।

তাল গাছ শাখা প্রশাখাবিহীন একবীজ পত্রি উদ্ভিদ। পুরষ ও স্ত্রী উভয় তাল গাছেই ফুল আসে কিন্তু শুধু স্ত্রী গাছেই ফল ধরে। গাছের বয়স ১০-১২ বছর হলেই ফল ধরে। এ গাছের ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ পাকা অবস্থায় কমলা, কালচে বা কালো রঙের হয়।

পুষ্টি উপাদানঃ পুষ্টিবিদদের মতে ১০০ গ্রাম টাটকা পাকা তালে খাদ্য শক্তি ৮৭ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৭৭.৫ গ্রাম, আমিষ ০.৮ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, শর্করা ২০, গ্রাম, খাদ্য আঁশ ৫ গ্রাম, আয়রন ১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন ০.৩৪ গ্রাম “আঁশ ০.০৫ গ্রাম, মিলিগ্রাম, রিবোফ্লোভিন বা ভিটামিন বি ২.০.০২ মিলিগ্রাম নিয়াসিন বা বি৩,০৩ মিলি ভিটামিন সি ৫৭ মিলি গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম।

রাসায়ানিক উপাদান: তাল গাছের রসে এক প্রকার পলিস্যাকা রাইড, মনোও ডাইস্যাকারাইডস। ফলে থাকে ফ্যাট, অ্যালবুমিন ফেডস, লোহা, পটাসিয়াম, জিংক, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বি,সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান।

পাকা তালে যে সব উপাদান থাকে তা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারি যা দেহকে সুস্থ সবল থাকে। দেহকে নানা রোগের আগ্রাসন থেকে বাঁচিয়ে রাখে । বিশেষ করে দেহের হাড়, দাঁত গঠনেও ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ঘটতি পূরণ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন দূর করে। লিভারকে সুস্থ রাখে। তাছাড়া আরো যেসব উপকার পাওয়া যায় তার বর্ণনা দেওয়া হলো-

  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ যাদের পায়খানা শক্ত হয় বা কম পরিমাণে হয় তাঁরা নিয়মিত পাকা তাল পরিমান মতো খান উপকার পাবেন। পাকস্থলির রোগ ভালো করতে পাকা তাল সাহায্য করে।

  • দাঁত ও হাড় মজবুত করে: পাকা তালে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস পাওয়া যায় যা দেহের হাড় ও দাঁতকে সুরক্ষা করে। দাঁতে গোড়ায় ক্ষয় রোগ প্রতিরোধ করে।

  • পেটের জ্বালা পোড়া কমায়: তালের বিভিনড়ব উপাদান হজমের সহায়ক, ডায়েটারি ফাইবার থাকায় হজম ভালো হয় পাকস্থলির এসিডের ভারসাম্য রক্ষা করে। বলে বুক জ্বালা, পেটের জ্বালা পোড়া, ও অসস্তি দূর করে।

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: তাল একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের উৎপন্ন বিষাক্ত টক্সিন ধ্বংশ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

  • পুরানো কাশি কমায়: দীর্ঘ দিন ধরে যারা কাশিতে ভুগছেন তারা চার চামচ পরিমাণ তালও দুধ মিশিয়ে বিকালে কয়েক দিন খান উপকার পাবেন।

  • শ্বেতপ্রদর রোগে: শ্বেত পদর রোগটি যে সব মহিলাদের রয়েছে তারা আধা কাপ তাল সকাল বিকাল কয়েক দিন খান উপকার পাবেন। এই তালে ভিটামিন বি ও সি, কে দেহের দূর্বলতা কমাবে এবং রোগের প্রবনতা কমে আসে।

  • স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে: তালে নানা ভিটামিন ও উপাদান আমাদের শরীরে নার্ভকে সবল রাখতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সুষ্ঠু ও সুন্দর রাখে। স্মৃতি শক্তিকে মজবুত রাখে। ফলে সঠিক সময়ে কাজ কর্ম করতে সাহায্য করে তাল। তাই অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো খাবার তাল। তাছাড়া মাথা ব্যথা, ঘুমের সমস্যা দূর করে তাল।

  • বুক ধরফর কমায়: অনেকের নানা কারণে বুক ধরফর করে বা সামান্য কাজ বা হাটা চলাফেরা করলে দুর্বল লাগে এবং বুক ধরফড় করে। এ অবস্থায় প্রতিদিন নিয়মিত ৩/৪ চামচ পাশে তাল ও সামান্য দুধ মিশিয়ে সকাল বিকাল কিছু দিন খান। বেশ উপকার পাবেন। এতে শরীরের রক্ত স্বল্পতা দূর হবে এবং শরীর সতেজ থাকবে।

সর্তকতা: যারা ভায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তাল খাবেন না। তাল খেলে বা তালের পিঠা খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভৃুগছেন বা উচ্চ রক্ত চাপে ভুগছেন তারা তাল না খাওয়াই ভালো। তাল খেলে এলাজি  সমস্যা হলে আর খাবেন না। বেশি করে টাটকা ফল খান, ভাতের উপর চাপ কমান।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top