গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২২ ০১:০২; আপডেট: ২ মে ২০২৫ ১৯:৩৯

ফাইল ছবি

দেশের জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে কূপ খননের প্রস্ততি নেয়া হচ্ছে। খবর বণিক বার্তার।

দেশে প্রকট হয়ে উঠছে জ্বালানি সংকট। সরবরাহ বাড়াতে বিদ্যমান খনিগুলো থেকে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় কূপ খনন করবে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধান-উত্তোলন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। প্রকল্প এলাকায় এরই মধ্যে নানা ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংস্থাটি। আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কূপ খননের কাজ শুরু হবে বলে নিশ্চিত করেছেন বাপেক্স-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আর সেই কাজ সফলভাবে শেষ হলে জাতীয় গ্রিডে বাণিজ্যিকভাবে দৈনিক এক কোটি বা ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের আশা করছে পেট্রোবাংলা।

শরীয়তপুরে গ্যাসকূপ খননের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে একটি পোস্ট দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। পোস্টে তিনি লিখেছেন, দেশীয় জ্বালানির উৎস অনুসন্ধানে কাজ করছে সরকার। ২০২২-২৫ সালের মধ্যে পেট্রোবাংলা মোট ৪৬টি উন্নয়ন, অনুসন্ধান ও ওয়ার্কওভার কূপ খনন করবে। এরই অংশ হিসেবে শরীয়তপুর-১ কূপ খননের কার্যক্রম শুরু করেছে বাপেক্স।

দেশে এমন সময় গ্যাসকূপ খননের তোড়জোড় শুরু হলো যখন জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানা, আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটের মুখে। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে পারছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), প্রতিনিয়ত উৎপাদন সংকটে পড়ছে শিল্প-কারখানাগুলোও। সরকার যদিও এ সমস্যার জন্য বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছে। সেখানে শরীয়তপুর-১ কূপ খননের উদ্যোগ অনেকটাই আশার আলো বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

গ্যাসকূপ খনন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গতকাল নড়িয়ার প্রকল্প এলাকায় বিজয়-১০ রিগ মাস্ট উত্তোলন করেন বাপেক্সের প্রকৌশলীরা। এর মধ্য দিয়ে দেশে আরো একটি কূপ খননের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়। শরীয়তপুরে বাপেক্স যেটি খননের উদ্যোগ নিয়েছে সেটি অনুসন্ধান কূপ, যেখানে ৭৮ বিলিয়ন কিউবিক ফিট (বিসিএফ) গ্যাস মজুদ রয়েছে। সফলভাবে সেই খননকাজ শেষ হলে বাণিজ্যিকভাবে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক প্রায় এক কোটি ঘনফুট গ্যাস যুক্ত করা সম্ভব হবে।

বাপেক্স সূত্রে জানা গিয়েছে, শরীয়তপুরে যে গ্যাসকূপ খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেই প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। সাধারণত একটি গ্যাসকূপ খনন শুরু হলে চূড়ান্ত আকারে সেটির ফলাফল পেতে অন্তত তিন থেকে সাড়ে তিন মাস সময় লাগে। সে হিসাবে আগামী বছরের জানুয়ারির শেষ কিংবা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে শরীয়তপুরের কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন হওয়ার কথা। এ বিষয়ে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দ্রুতই শরীয়তপুরে কূপ খনন শুরু করতে যাচ্ছি। আমাদের পরিকল্পনা যত দ্রুত সম্ভব কূপ খনন করে উৎপাদিত গ্যাস গ্রিডে নেয়ার ব্যবস্থা করা। এখন থেকে আমাদের কোনো রিগ বসে থাকবে না। পর্যায়ক্রমেই কূপ খননকাজ চলবে।

দেশে এ মুহূর্তে চারটি গ্যাসকূপের কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে তিনটি কূপে কাজ করছে বাপেক্স ও একটির দায়িত্বে রয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম। এ চারটি কূপের কাজ শেষ হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ জাতীয় গ্রিডে পাঁচ কোটি ঘনফুটের বেশি গ্যাস যুক্ত করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জুনে কুমিল্লার শ্রীকাইলে গ্যাসকূপ খননের কাজ শুরু হয়। বিজয়-১২ রিগ বসিয়ে শ্রীকাইল নর্থ-১ নামে অনুসন্ধান কূপটির খননকাজ করছে বাপেক্স, যেখানে ৯১ বিসিএফ গ্যাসের মজুদ রয়েছে। কূপ খনন শেষ হলে এখান থেকেও দৈনিক এক-দেড় কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার আশা করছে পেট্রোবাংলা। এছাড়া চলতি বছরের ১৯ আগস্ট ভোলায় গ্যাসকূপ খননের কাজ শুরু করে গ্যাজপ্রম। পেট্রোবাংলার ভাষ্য অনুযায়ী, এটিও একটি অনুসন্ধান কূপ। টবগী-১ নামে অনুসন্ধানকৃত এ কূপ থেকে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক দুই-আড়াই কোটি ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হওয়ার প্রত্যাশা। এছাড়া সিলেট গ্যাসফিল্ডের আওতায় বিয়ানীবাজার গ্যাসফিল্ডের একটি কূপের ওয়ার্কওভার বা সংস্কারকাজ করছে বাপেক্স। বিজয়-১১ দিয়ে কূপটির সংস্কার শেষ হলে এখানেও মিলবে অতিরিক্ত গ্যাস।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি বিভাগ গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে এখন যে ধরনের তত্পরতা চালাচ্ছে, সেটি আরো আগে করা গেলে এতটা সংকটে পড়তে হতো না দেশকে। এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বণিক বার্তাকে বলেন, পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স এখন গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে স্থলভাগে যে ধরনের তত্পরতা চালাচ্ছে সেই উদ্যোগ আরো আগেই নেয়া উচিত ছিল। তারা তো জানেই যে আমাদের গ্যাসের মজুদ প্রতিনিয়ত কমে আসছে, তাহলে এতদিন পরে কেন? ছোট ছোট কূপ খনন করেও যদি গ্যাস পাওয়া যায়, তাহলে এ সংকটে তা বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।

এদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পর থেকেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে কৃচ্ছ্রসাধনের পথ বেছে নিতে হচ্ছে জ্বালানি তেলেও। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় গ্যাসের ওপর এককভাবে যে ভরসা করা যাবে, তারও কোনো গতি নেই। কারণ গত কয়েক বছর অব্যাহতভাবে স্থানীয় গ্যাস সরবরাহ কমে আসছে। দেশে বর্তমানে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৮১০ কোটি ঘনফুটের মতো। সেখানে সরবরাহ হচ্ছে ২৬৪ কোটি ঘনফুটের কিছু বেশি। বিগত কয়েক মাস আগেও যা ছিল ৩২০ কোটি ঘনফুটের মতো। স্থানীয় উৎপাদন এবং এলএনজি আমদানি করতে না পারায় সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

নিউজের লিঙ্ক

 



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top