জিম্মি জাহাজের প্রধান কর্মকর্তার বার্তা

টাকা না দিলে সবাইকে মেরে ফেলবে জলদস্যুরা

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১৩ মার্চ ২০২৪ ১৩:০০; আপডেট: ৬ মে ২০২৪ ১৩:৫১

ছবি: সংগৃহীত

টাকা দেয়া না হলে আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলবে। যত তাড়াতাড়ি তাদের (জলদস্যু) টাকা দেয়া হবে, তত তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে দেবে।

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ খানের পাঠানো সবশেষ অডিও বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। এ অডিও বার্তাটি তার স্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়।

অডিও বার্তায় আতিক বলেছেন, ‘এ বার্তাটা সবাইকে পৌঁছে দিয়ো। আমাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। ফাইনাল কথা হচ্ছে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলেছে। তাঁদের যত তাড়াতাড়ি টাকা দেবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলেছে। এই বার্তাটা সবদিকে পৌঁছে দিয়ো।’

জাহাজের মালিকপক্ষের কাছে আরেকটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন এমভি আবদুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ খান। সেই অডিও বার্তায় তিনি জলদস্যুদের আক্রমণের বর্ণনা দেন। কেউ হতাহত না হলেও ভীতি ছড়াতে জলদস্যুরা জাহাজে ওঠেই গুলাগুলি করেছেন বলে বার্তায় উল্লেখ করা হয়।

সেই অডিও বার্তায় আতিক উল্লাহ খান বলেন, জাহাজে তখন সকাল সাড়ে ১০টা। গ্রিনিচ মান সময় ৭টা ৩০ মিনিট (বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টা)। ওই সময় একটা হাই স্পিডবোট আমাদের দিকে আসতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে আল্যার্ম দিই। আমরা সবাই ব্রিজে গেলাম। ক্যাপ্টেন স্যার আর জাহাজের দ্বিতীয় কর্মকর্তা ব্রিজে ছিলেন তখন।

আমরা এসওএস (জীবন বাঁচানোর জরুরি বার্তা) করলাম। ইউকে এমটিওতে (যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন) যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তারা ফোন রিসিভ করেনি। এরপর ওরা চলে এল। তারা ক্যাপ্টেন স্যার ও দ্বিতীয় কর্মকর্তাকে ঘিরে ফেলল। আমাদের ডাকল। আমরা সবাই এলাম। এ সময় কিছু গোলাগুলি করল। সবাই ভয় পেয়েছিলাম। সবাই ব্রিজে বসে ছিল। তবে কারও গায়ে হাত দেয়নি।

অডিও বার্তায় তিনি আরো বলেন, এ সময় একটা স্পিডবোটে আরও কয়েকজন চলে এল। এভাবে ১৫-২০ জন এল জাহাজটিতে। কতক্ষণ পর একটি বড় ফিশিং ভেসেল এল।

ওটা ছিল ইরানের মালিকানাধীন মাছ ধরার জাহাজ, যেটিকে এক মাস আগে তারা জিম্মি করেছিল। মাছ ধরার জাহাজটি দিয়ে তারা সাগরে জাহাজ খুঁজছিল। এখন ওই মাছ ধরার জাহাজ ছেড়ে দেবে। তবে সেটির জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে। এখন আমাদের থেকে ডিজেল নিচ্ছে। আমাদের জাহাজটি থামিয়েছে তারা। জাহাজের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

আমাদেরও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমাদের পরিবারকে একটু দেখবেন। সান্ত্বনা জানাবেন। অডিও বার্তা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম।

জানা গেছে, মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে ৫৮ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল এমভি আবদুল্লাহ। পথে সোমালিয়ান উপকূলের আনুমানিক ৫০০ নটিক্যাল মাইল দূরে গোলাবারুদ ও ভারী অস্ত্রে সজ্জিত জলদস্যুরা হামলা চালায়।

জাহাজটি দখলে নিয়ে তারা নাবিক ও ক্রুদের কেবিনের মধ্যে আটকে রাখে। জাহাজটিতে অর্ধশতাধিক জলদস্যু অবস্থান করছে। ৪৫ হাজার ৬৫৩ ডেডওয়েট টন (ডিডব্লিউটি) ওজনের বাল্ক ক্যারিয়ার এমভি আবদুল্লাহর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮৬ মিটার ও প্রস্থ ৩০ মিটার।

এ বিষয়ে কবির গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে।

কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা অনুসরণ করেই জাহাজটি আরব আমিরাত যাচ্ছিল। জলদস্যুদের আক্রমণের কথা আমরা দুপুরের দিকে জানতে পারি। তবে জাহাজের ২৩ নাবিকের সবাই সুস্থ ও নিরাপদে আছেন। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের পাশাপাশি এ পরিস্থিতি সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।’ জিম্মিদের উদ্ধারে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে বলেও জানান কেএসআরএমের এ কর্মকর্তা।

জাহাজে থাকা নাবিক ও ক্রুরা হলেন জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান; সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী; থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম; ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন; চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান; সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম; থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন; ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ; ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান; ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ; ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমেদ।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top