রেললাইন ঘেঁষে অবৈধ স্থাপনা

রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:১৬; আপডেট: ১২ মে ২০২৪ ০৭:৩৮

ছবি: সংগৃহীত

নিয়ম অনুযায়ী, রেললাইনের ১০ ফুটের মধ্যে কেউ কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না। তবে নিয়মের তোয়াক্কা এখানে নেই।

রাজশাহী নগরের ভেতরে রেললাইন ঘেঁষে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে শতাধিক স্থাপনা। এগুলোর সবই দোকান ও বস্তির ঘর। এসবের আড়াল থেকে কখন ট্রেন চলে আসে, অনেক সময় তা টের পান না পথচারীরা। এতে ঘটে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া রেললাইন লাগোয়া স্থাপনার কারণে সব সময়ই সেখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।

দোকানপাটগুলোর মধ্যে অনেকেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমি ইজারা নিয়ে স্থাপনা তৈরি করেছে। পরে বাড়াতে বাড়াতে এসব স্থাপনা রেললাইনের ১০ ফুটের মধ্যে চলে এসেছে। নিয়ম অনুযায়ী, রেললাইনের ১০ ফুটের মধ্যে কেউ কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না। তবে নিয়মের তোয়াক্কা সেখানে নেই। এসব দোকানপাট ও বস্তিঘরের ফাঁক দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে ভারী বৃষ্টির সময় নগরের দাসপুকুর এলাকার একটি ঈদগাহের প্রায় ১০০ মিটার লম্বা প্রাচীর রেললাইনের ওপরে ভেঙে পড়ে। এতে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম তালুকদার ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাচীর অপসারণ করে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করেন।

রেলওয়ের নিয়ম ভেঙে সরকারি খরচে এই প্রাচীর নির্মাণ করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামাল হোসেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রেলের জায়গায় কোথাও আইন মেনে কেউ স্থাপনা নির্মাণ করেনি; বরং এই জায়গা রেলওয়ের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন তাঁরা। কত জায়গায় দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। ঈদগাহের প্রাচীর পড়ে তো কেউ মারা যায়নি।

এর আগে গত ১০ আগস্ট নগরের কদমতলা রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় মণিকা তাবাসসুম নামের এক বিদ্যালয়ছাত্রীর মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ ছিল, রেললাইনটি দোকানপাটের আড়াল হওয়ায় ওই ছাত্রী বুঝতে পারেনি যে ট্রেন আসছে।

সম্প্রতি শহরের রেললাইনের পাশের এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, নগরের ভদ্রা রেলক্রসিং থেকে পূর্ব দিকে ৩৫টি বস্তিঘর গড়ে উঠেছে। একইভাবে পশ্চিম দিকে ঐতিহ্য চত্বর থেকে রায়পাড়া রেলক্রসিং পর্যন্ত শতাধিক বস্তিঘর আছে। এ ছাড়া নগরের কামারুজ্জামান চত্বর থেকে ঐতিহ্য চত্বর পর্যন্ত এলাকায় শতাধিক দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এসব দোকানপাটে আড়াল হওয়ায় পথচারীরা ট্রেন দেখতে পান না।

এসব দোকানদারের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। নগরের ঐতিহ্য চত্বরে কৃষ্ণ ফার্নিচারের মালিক দীপক চন্দ্র সাহা ছয় হাজার টাকা ভাড়ায় রেললাইনের পাশে একটি ফার্নিচারের দোকান চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, রান্টু নামের এক ব্যক্তি রেলের কাছ থেকে জায়গাটি ইজারা নিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে তিনি ভাড়া নিয়েছেন।

২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর ঐতিহ্য চত্বরের পশ্চিম পাশের অবৈধ বস্তি উচ্ছেদ করতে রেল কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়েছিল। সে সময় বস্তিবাসীর বিক্ষোভের মুখে কর্তৃপক্ষ সরে আসতে বাধ্য হয়। এর পর থেকে আর কোনো অভিযান চালানো হয়নি।

রেললাইনের পাশে কী পরিমাণ অবৈধ স্থাপনা আছে, তা জানতে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা রেজাউল করিমের কার্যালয়ে যান এই প্রতিবেদক। রেজাউল তখন বলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁরা একটি জরিপ করবেন। জরিপের ফলাফল হাতে এলেই তিনি জানাতে পারবেন। মঙ্গলবার আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি সেই জরিপের ফলাফল হাতে পাননি বলে জানান।

অবৈধ স্থাপনার বিষয়ে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম তালুকদার বলেন, ঈদগাহের প্রাচীরটা রেললাইনের আড়াই ফুটের মধ্যে ছিল। এ ধরনের আরও স্থাপনা আছে। এগুলো তাঁরা অপসারণ করে নিয়ম অনুযায়ী ইজারা দেবেন।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top