রামেক হাসপাতাল

অডিটরদের খুশি করতে ইনচার্জদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগ

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৩৬; আপডেট: ৬ মে ২০২৪ ১২:০১

ছবি: সংগৃহীত

অডিটরদের খুশি করতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডের ইনচার্জদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা হয়েছে। মাথা পিঁছু এই চাঁদার পরিমাণ ১ হাজার ২০০ টাকা। গত শনি থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়।

গত রোববার (২১ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তা হাসপাতালটিতে নিরীক্ষায় এসেছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার তারা ফিরে গেছেন।

অডিটরদের খুশি করার নামে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে চাঁদা তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহম্মদ আজ বুধবার দুপুরে বলেছেন, ‘দাপ্তরিক কাজে তিনি সচিবালয়ে গেছেন। অভিযোগটি হয় সত্য, না হয় মিথ্যা। কারা এই কাজ করেছেন তিনি তা তদন্ত করে দেখবেন। প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রামেক হাসপাতালে রোগীদের মোট ৫৭টি ওয়ার্ড আছে। কয়েকজন ওয়ার্ড ইনচার্জ কাছে স্বীকার করেছেন যে, তারা চাঁদা দিয়েছেন। তবে তারা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। ওয়ার্ড ইনচার্জরা জানিয়েছেন, হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক সুফিয়া খাতুন ও নার্সিং সুপারভাইজার ময়েজ উদ্দিন নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কামরুন্নাহার পান্নার মাধ্যমে এই চাঁদা তুলেছেন। এই টাকা আসলেই অডিটরদের দেওয়া হয়েছে নাকি ওই তিন কর্মকর্তা নিজেরাই আত্মসাৎ করেছেন তা তারা জানেন না।

নার্সিং সুপারভাইজার ময়েজ উদ্দিন ওয়ার্ড ইনচার্জ ও নার্সদের ফোন করে চাঁদা দিতে বলছেন, এমন একাধিক অডিও রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘অডিটররা কিছু চাচ্ছে।’ এই টাকা যেন দ্রুত নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনে পৌঁছে দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত রোববার তিনজন নিরীক্ষক হাসপাতালে আসার পরই সেবা তত্ত্বাবধায়ক সুফিয়া খাতুন ও নার্সিং সুপারভাইজার ময়েজ উদ্দিন চাঁদা তোলার ছক কষেন। তাঁরা প্রতিটি ওয়ার্ডের ইনচার্জের কাছ থেকে টাকা তোলার জন্য নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কামরুন্নাহার পান্নাকে নির্দেশনা দেন।

এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার কামরুন্নাহার পান্না ওয়ার্ড ইনচার্জদের ডেকে সভা করেন। সেখানে তিনি মাথাপিঁছু ১ হাজার ২০০ টাকা করে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।

অ্যাসোসিয়েশনে মো. তারেক নামে এক ব্রাদারকে টাকা আদায়কারী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এই তারেক গত শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে বসে টাকা আদায় করেন।

টাকা আদায় হয়েছে কত, এমন প্রশ্নে আজ বুধবার তারেক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টাকার হিসাব আমার কাছে নাই। এটা পান্না ম্যাডাম বলতে পারবেন।’

যোগাযোগ করা হলে কামরুন্নাহার পান্না বলেন, ‘এটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাচ্ছি না।’ কথা বলতে তিনি তাঁর কার্যালয়ে ডাকেন।

ওয়ার্ড ইনচার্জরা জানিয়েছেন, প্রতিবছরই ওয়ার্ডে বিতরণ করা ওষুধ, স্যালাইনসহ অন্যান্য দ্রব্যদির হিসাব নিতে অডিট হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই হিসাবের স্টক লেজার খাতা অডিট হয়নি। মূলত এই লেজার খাতা অডিট করানোর কথা বলেই চাঁদা তোলা হয়। এ জন্য সেবা তত্ত্বাবধায়ক সুফিয়া খাতুন তাঁর সহকারী জান্নাতুল ফেরদৌসের কাছে স্টক লেজার খাতা জমা দিতে বলেন।

ইনজার্চরা তার কাছে খাতা জমাও দেন। কিন্তু আজ বুধবার খাতা হাতে নিয়ে দেখেন তা নিরীক্ষিত হয়নি। ইনচার্জরা জানতে চান, কীসের অডিট হলো। তখন জান্নাতুল ফেরদৌস তখন হিসাব শাখার নিরীক্ষিত একটি কাগজ দেন। এতে স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা ও হিসাব কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের স্বাক্ষর রয়েছে।

ইনচার্জরা জানান, অডিটররা মূলত হাসপাতালের হিসাব শাখার ধোলাই বিল, যাতায়াত বিল ও যন্ত্রপাতি মেরামত খরচের অডিট করেছেন। এই ব্যয়ের সঙ্গে ওয়ার্ড ইনচার্জদের ওষুধপত্রের হিসাবের কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও নিরীক্ষা দলকে দেখিয়ে ইনচার্জদের কাছ থেকেও চাঁদা তুলেছেন সেবা তত্ত্বাবধায়ক সুফিয়া খাতুন, নার্সিং সুপারভাইজার ময়েজ উদ্দিন ও নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কামরুন্নাহার পান্না।

এ টাকা অডিটরদের দেওয়া হয়েছে নাকি এ তিন কর্মকর্তা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন তা তারা বুঝতে পারছেন না।

জানতে চাইলে নার্সিং সুপারভাইজার ময়েজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিবছর অডিটের সময়ই এভাবে টাকা তোলা হয়।’ এর বেশি তিনি কথা বলতে চাননি। কথা বলার জন্য সেবা তত্ত্বাবধায়ক সুফিয়া খাতুনের মুঠোফোনে কয়েকদফা ফোন করা হলেও ধরেননি। মুঠোফোনে খুদেবার্তার মাধ্যমে অভিযোগ জানিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলেও তিনি সাড়া দেননি। ফোন ধরেননি সুফিয়া খাতুনের সহকারী জান্নাতুল ফেরদৌসও। তাই তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা ও হিসাব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অডিটে গিয়ে আমরা কোনো টাকা-পয়সা নিইনি। এ বিষয়ে কিছু জানি না। এটা হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেবে।’




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top